এক আইপিএস-এর কথায়, ‘বাহিনীতে লোক কম, সিভিক দিয়েও সামাল দেওয়া মুশকিল, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই, ২টো মোবাইল ভেহিকল দিয়ে একসঙ্গে ২টো-র বেশি ঘটনা হ্যান্ডল করা সম্ভব নয় — অথচ আমজনতাকে রাজনৈতিক নেতারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ৫-১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ পৌঁছে যাবে!’ একরাশ ক্ষোভ উগরে বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পুলিশকে নেগলিজেন্ট বা কেয়ারলেস প্রমাণ করা হচ্ছে।’
গ্রামীণ হাওড়া ও হুগলির বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত। সেখানকার এক শীর্ষ অফিসারের দাবি, ‘উদ্ধারকাজে পুলিশকর্মীরাও নেমেছেন। সেটাই এখন ফার্স্ট প্রায়োরিটি। পাশাপাশি বেসিক কাজ তো আছেই। থানা কারা চালাবেন? সরকারি হাসপাতালেই বা কাকে পাঠাব? লোক কই?’
গত ১০-১১ বছর ধরে চলা এই লোকসঙ্কটের সমস্যা কি কোথাও জানিয়েছেন?
একাধিক এসপি ও অ্যাডিশনাল এসপিদের বক্তব্যের সারমর্ম, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানানো হয়েছে। আবারও হবে। এক অফিসার বললেন, ‘এখনই যদি পুলিশ রিফর্মে নজর দেওয়া না-হয় ও সব কিছুই ‘পুলিশের দায়িত্ব’ বলে মেনে নেওয়া হয়, তা হলে কী ভাবে সমাধান হবে? একজন বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে কী হবে, সেখানে অন্যরা আসবেন। কিন্তু আরজি করের মতো ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সেটা কাম্য নয়।’
কাজ করতে বললেই লোকসঙ্কট আর পরিকাঠামোর প্রশ্ন তোলেন পুলিশকর্তারা, বাকি সময় কেন নীরব? হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য পুলিশই লাগবে শুনেই কেন তাঁরা ক্ষুব্ধ? হাসপাতাল থেকে ‘তোলা’ আসবে না, তাই রাগ? এডিজি পদমর্যাদার এক অফিসারের কথায়, ‘বাড়তি কাজের জন্য ক্ষোভ নয়। তোলাবাজির প্রশ্নই উঠছে না। আরজি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যা যা ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে, তার সব কিছুর সঙ্গে পুলিশ যুক্ত। অথচ রাজ্য পুলিশ প্রায় ৩৫ শতাংশ ও কলকাতা পুলিশ অন্তত ৪৫ শতাংশ শূন্যপদ দিয়ে কাজ চালাচ্ছে।’
উত্তরবঙ্গের এক তরুণ আইপিএস বললেন, ‘ডাক্তাররা বলতে পারেন, এখানে এমআরআই নেই, অন্য জায়গায় যান। আমরা বলতে পারি না, আমাদের ফরেন্সিক কিটস নেই, ১০০ জিবি ডেটা সংগ্রহ করার মতো পেনড্রাইভ নেই। কাজ না-করলে শুনতে হবে পুরোটাতেই চরম গাফিলতি হয়েছে। আমাদের কখনও কোনও ক্ষেত্রে ‘না’ বলতে নেই।’
এক সিনিয়র অফিসারের ক্ষোভ, ‘মানুষের বিশ্বাস পুলিশ কাজ করে না। পুলিশ অসৎ। পুলিশ কোরাপ্ট। হয়তো কিছু কর্মী-অফিসার রয়েছেন। কিন্তু আমজনতা জানেন না, কোন অবস্থায় আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করি।’