ভাগীরথী নদীর তিরে অবস্থিত শস্যশ্যামলা বড়নগর গ্রাম। এখানেও গঙ্গা বারাণসীর মতো উত্তরবাহিনী। আঠারোশো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নাটোরের রানি ভবানী এখানে বাল্য বিধবা মেয়েকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গ্রামে একের পর এক মন্দির নির্মাণ করতে শুরু করেন। তাঁর সাধ ছিল বড়নগরকে ‘দ্বিতীয় বারাণসী’র আদলে গড়ে তোলার। শুরু হয় মন্দির প্রতিষ্ঠা।
তার মধ্যে অন্যতম হল টেরাকোটা চারবাংলা শিব মন্দির, গঙ্গেশ্বর মন্দির, ভবানীশ্বর মন্দির, জোড়াবাংলা মন্দির, রাজ রাজেশ্বরী মন্দির, উদয়নারায়ণের গৃহদেবতা মন্দির, মদনগোপালের মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির। মন্দির পরিবেষ্টিত গ্রামে ১০৮ টি শিব মন্দির স্থাপনের উদ্দেশে কাজ শুরু করেন রানি ভবানী। ভবানী মন্দিরের ছাদ উল্টানো পদ্মের মতো দেখতে। এই নকশার মন্দির খুব কমই দেখা যায়। মন্দিরগুলির বেশিরভাগই রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ ও ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের অধীনে রয়েছে। মন্দিরগুলি টেরাকোটা ও চুনের অলঙ্কারে সজ্জিত। বহু মন্দির প্রায় ধ্বংসের মুখে।
ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, রানি ভবানী বাল্য বিধবা মেয়েকে পুজো অর্চনার মধ্যে ব্যস্ত রাখতেই ‘দ্বিতীয় বারাণসী’ তৈরির স্বপ্ন দেখেন। ঢাকা থেকে এসে বসবাস শুরু করেন ভাগীরথীর তীরে বড়নগরে। বড়নগর তাঁর রাজপাঠের অর্ন্তভুক্ত ছিল।
জনশ্রুতি রয়েছে, রানির মেয়ে ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী। মেয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার নজরে চলে আসে। একদিন মেয়ে প্রাসাদের ছাদে চুল শুকোচ্ছিলেন। কথিত আছে, নবার সিরাজউদৌল্লা তাঁর বাসভবনের সামনে ভাগীরথীতে দু’দিন বজরায় নোঙর ফেলে কাটিয়ে দেন। মেয়ের উপর সিরাজের নজর পড়েছে এই আতঙ্কে মেয়েকে নিয়ে বড়নগর ছাড়েন রানি ভবানী। এক আত্মীয়ের সাহায্যে মেয়েকে পাঠিয়ে দেন কাশীতে। সেখানেই শেষ হয় বড়নগরকে বারাণসী বানানোর স্বপ্ন। বড়নগরের সঙ্গে ইতিহাসের বহু অধ্যায় জড়িত রয়েছে। মন্দিরগুলির সংস্কার ও হেরিটেজের দাবিতে গ্রামবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বহুদিন থেকে প্রশাসনের কাছে দরবার জানিয়ে আসছিলেন। এবার কি ফিরবে হাল? অপেক্ষায় গ্রামের মানুষ।