Malda News,স্ত্রীকে নিজের মৃতদেহের ছবি পাঠিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা, দিল্লি থেকে ধৃত ট্রাকচালক – malda truck driver arrested from delhi for trying to extort money by sending pictures his dead body


এই সময়, মালদা: পাওনাদারদের থেকে বাঁচতে নিজের অপহরণ তো বটেই, এমনকী, খুনেরও গল্প ফেঁদেছিলেন এক ট্রাকচালক। এমনকী, মৃতদেহের ছবি তুলে বাড়ির লোকের কাছে পাঠান। এর পর অপহরণকারী সেজে মৃতদেহ ফেরত পেতে টাকা দাবি করেন। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বিহার সীমানাঘেঁষা নতুন সাদলিচক গ্রামের আজিমুল হকের ‘খুন’ হওয়ার খবরে পরিবার এবং প্রতিবেশীরা পুলিশকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।এই ফাঁকে দিব্যি দিল্লিতে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন ‘অপহৃত ও নিহত’ সেই যুবক। তবু শেষ রক্ষা হলো না! পুলিশ সিভিল ড্রেসে হানা দিয়ে তাঁকে দিল্লি থেকে পাকড়াও করে। একেবারে জ্যান্ত! এটিএম থেকে টাকা তোলার জন্য যাচ্ছেন বলে গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আজিমুল। তার পর তাঁর আর খোঁজ মিলছিল না।

বাড়ির লোক স্থানীয় কুমেদপুর ফাঁড়িতে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ইতিমধ্যে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ চেয়ে বাড়িতে ফোন আসতে শুরু করেছিল। বেশির ভাগ সময়ে ফোনে আজিমুলের করুণ কণ্ঠ শোনা যেত। তিনি তাঁর স্ত্রী বা বাবাকে জানাতেন যে, তাঁকে ভয়ঙ্কর কিছু লোক অপহরণ করেছে। পুলিশের ভয়ে নানা গোপন ডেরায় লুকিয়ে রাখছে। টাকাটা না দিতে পারলে মেরে ফেলবে।

পুলিশকে সবটাই জানানোর পাশাপাশি বাড়ির লোকেরা ধার-দেনা করে মুক্তিপণের টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করতে থাকেন। আজিমুলের আগেই বেশ কিছু ঋণ হয়ে যাওয়ায় পরিবারটি বেশ বিপদেই পড়ে। এর মধ্যেই বুধবার আজিমুলের স্ত্রীর মোবাইলে মেসেজ করে জানানো হয়, আজিমুলকে খুন করা হয়েছে। সঙ্গে ছিল মৃতদেহের ছবি, মূলত মুখটুকুই।

দাবি করা হয়, এ বার মৃতদেহ ফেরত পেতেও টাকা লাগবে। ঘটনা জানাজানি হতেই প্রতিবেশীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। বৃহস্পতিবার গ্রামবাসীরা পরিবারটিকে সঙ্গে নিয়ে কুমেদপুর ফাঁড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ ছিল, পুলিশ তৎপর হলে আজিমুলকে এ ভাবে মরতে হতো না।

পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘সকলে যখন আবেগতাড়িত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, তখন পুলিশ কিন্তু নিজের কাজটা করে যাচ্ছিল। এটিএম কাউন্টারের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে দেখা গিয়েছিল, আজিমুল টাকা তুলে বেরিয়ে নিজেই এক দিকে চলে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয় কেউ ছিল না। ফলে তিনি যে কিডন্যাপ হননি, তদন্তকারীদের সেটা প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল।

কিন্তু মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ঘন ঘন বদলে যাওয়ায় পুলিশ মুভ করতে পারছিল না। এর মধ্যেই দু’দিন আগে বাড়ির লোকের কাছে তাঁর মৃত্যুর খবর ও ছবি আসে। সেটা পাঠানো হয় তাঁর মোবাইল থেকেই। তার উপরে মৃতদেহের ছবির অ্যাঙ্গেল দেখে সন্দেহটা আরও বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার যখন পুলিশ ফাঁড়িতে পরিজনদের বিক্ষোভ চলছে, পুলিশের টিম ততক্ষণে মোবাইল ট্র্যাক করে দিল্লির পথে পাড়ি দিয়ে ফেলেছে।’

দিল্লিতে গ্রেপ্তার কালিয়াচকের ‘ত্রাস’ আসাদুল্লাহ

শেষে শুক্রবার সকালে দিল্লির পাহাড়গঞ্জ এলাকার একটি হোটেলে সিভিল ড্রেসে হানা দিয়ে আজিমুলকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে আজিমুল প্রচুর ধারদেনা করে ফেলেছিলেন। সেটা শোধ করার টাকা জোগাতেই অপহরণ-খুনের নাটক সাজিয়েছিলেন তিনি। ধারের কথা স্বীকার করেছেন আজিমুলের স্ত্রী আঙ্গুরা বিবি ও বাবা ওবায়দুর রহমান। তাঁরা জানিয়েছেন, আজিমুল কিছুদিন আগে ফাইন্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে একটি গাড়ি কিনেছিলেন। সে সময়ে লাখ দুয়েক টাকা ধারও করেন তিনি। এ ছাড়া মাসে মাসে গাড়ির কিস্তির টাকা মেটাতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল তাঁকে।

তবে তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী নিজের পায়ে দাঁড়াবেন বলে কিছু ঋণ করেছিলেন ঠিক, কিন্তু তার জন্য মিথ্যা নাটক করেননি। নিশ্চয়ই খারাপ লোকের পাল্লায় পড়েছিলেন, ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে এলেই সব জানতে পারব!’
স্বামীর উপরে এখনও বিশ্বাস অটুট স্ত্রীর!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *