Jadavpur University,গাঁদা ফুলের মালা, ওআরএসে শিক্ষককে অসম্মান যাদবপুরে! – jadavpur university journalism department professor accused of disrespect by students


এই সময়: হাতে গাঁদা ফুলের মালা এবং ওআরএসের প্যাকেট আর মুখে মুচকি মুচকি হাসি। ও সব নিয়ে এক যুবক ডিপার্টমেন্টে এক জন অধ্যাপক ঢুকতেই তাঁর দিকে এগিয়ে এলেন। যুবক ওই বিভাগেরই ছাত্র। তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে ভিডিয়ো করতে দেখা যাচ্ছে কয়েক জনকে। হাত নেড়ে তাঁদের ইশায় ডাকলেন ওই যুবক। এর পর তিনি মালা নিয়ে অধ্যাপকের গলায় পরাতে গেলেন। থমকে গেলেন অধ্যাপক। হাত দিয়ে আটকালেন মালা পরানো।তার পর তাঁর প্রশ্ন, ‘কী হচ্ছে এ সব!’ মালা হাতে সেই যুবক বললেন, ‘স্যর, আমরা ওআরএস এনেছি আপনার জন্য। আপনার শরীরটা খারাপ ছিল তো, তাই।’ অপ্রতিভ অধ্যাপক ডাকতে শুরু করলেন তাঁর বিভাগীয় প্রধানকে— ‘এই পার্থ…এই পার্থ…!’ অধ্যাপককে দেখা গেল, তিনি বিভাগীয় প্রধান পার্থসারথি চক্রবর্তীর ঘরে ঢুকছেন। তবে তাঁর পিছু পিছু এইচওডি-র ঘরে মালা-ওআরএস হাতে সেই যুবকও ঢুকে পড়েছেন। এর পর পার্থসারথি বললেন, ‘কী হয়েছে রে?’ যুবক বলছেন, ‘স্যরকে ওয়েলকাম জানাচ্ছি।’ পার্থসারথিকে বলতে শোনা গেল, ‘এই যা..যা..!’

সোমবারের এই ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজ়ম ডিপার্টমেন্ট। যে অধ্যাপককে মালা পরানো এবং ওআরএস দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল, তিনি সান্ত্বন চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে যে যুবক মালা পরানোর চেষ্টা করছিলেন, তিনি ওই বিভাগেরই ছাত্র শ্রেয় বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রেয়-র ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এ দিনই, ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে এই গোটা ভিডিয়োটি পোস্ট করা হয়েছে।

ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, হাতে মালা, ওআরএস নিয়ে এক সিনিয়র অধ্যাপককে কার্যত হেনস্থা এবং চরম অসম্মান করা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে জার্নালিজ়ম ডিপার্টমেন্টে পড়ুয়াদের একাংশ আন্দোলন করছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক রং দেখে পড়ুয়াদের নম্বর দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা এসএফআই করেন না, তাঁদের নম্বর দেওয়া হয় না— এই অভিযোগে দিন কয়েক যাবৎ ওই পড়ুয়ারা অনশন এবং ঘেরাও আন্দোলন শুরু করেন।

পড়ুয়াদের চাপের মুখে জার্নালিজ়ম ডিপার্টমেন্টের বোর্ড অফ স্টাডিজ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পরীক্ষার খাতা রিভিউ করে দেখা হবে। সান্ত্বনের বিরুদ্ধে ওই পড়ুয়াদের অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক রং দেখে নম্বর দেওয়ার মূল হোতা! তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে।

Jadavpur University: নম্বর কারচুপির নালিশ যাদবপুরে, হবে রিভিউ

জুটার তরফে অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস ও পার্থপ্রতিম রায় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক হেনস্থার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ঐতিহ্যের পরিপন্থী। মুষ্টিমেয় ছাত্রছাত্রী সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা, ভয় দেখানো এবং যে ধরনের অপরাধমূলক ভাষা ব্যবহার করছেন, তা থ্রেট কালচারকেই প্রোমোট করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাহত করে।’ বিভাগীয় প্রধান পার্থসারথিও বলছেন, ‘এমন ঘটনা না-ঘটলেই ভালো হতো।’

যদিও অভিযুক্ত ছাত্র শ্রেয় এটাকে হেনস্থা বলেই মানছেন না। তাঁর কথায়, ‘উনি (সান্ত্বন) অসুস্থ বলে শুনেছিলাম। তাই, গাঁদা ফুলের মালা, ওআরএস নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে গিয়েছিলাম। উনি মালা নেননি, তবে ওআরএস নিয়েছেন।’ এমনকী, এই ভিডিয়ো পোস্ট করাকেও হেনস্থা বলে শ্রেয় মনে করেন না। সান্ত্বনের আক্ষেপ, ‘কোনও এক জন ছাত্রের বিরুদ্ধে আলাদা করে অভিযোগ আনা কোনও শিক্ষককে মানায় না। তবে এই ঘটনা আদৌ কোনও ভাল উদাহরণ নয়।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *