Kolkata Tram,ট্রাম তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে মত জোড়াফুলের অন্দরেই – trinamool several leaders are not in favour of removing trams from kolkata


রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী কলকাতা থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পর শাসকদল তৃণমূলের অন্দরেও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হলো। ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ট্রাম পুরোপুরি তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নন দেবাশিস কুমার, কুণাল ঘোষের মতো একাধিক তৃণমূল নেতা। নাগরিক সমাজের ট্রাম নিয়ে যে আবেগ, তা অস্বীকার করছেন না পরিবহণমন্ত্রীও।এই নিয়ে নাগরিক সমাজে গঠনমূলক বিতর্ককে স্বাগত জানিয়ে স্নেহাশিসের বক্তব্য, ‘ট্রাম নিয়ে আমারও আবেগ রয়েছে। তবে কলকাতায় ট্রাম চলবে কিনা, এই নিয়ে ট্র্যাফিক পুলিশ, পুরসভা ও পরিবহণ দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটি দীর্ঘ আলোচনা করেছে। ট্র্যাফিক পুলিশ ও পুরসভা ট্রাম বন্ধের একাধিক যুক্তি দিয়েছে। তার পর রাজ্য সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শহরের সব ট্রাম তুলে দিয়ে একমাত্র এসপ্ল্যানেড-ময়দান রুটে জয়-রাইড হিসেবে একটি হেরিটেজ ট্রাম চালানো হবে। অন্য সব রাস্তা থেকেই ট্রামের ট্র্যাক, বৈদ্যুতিক লাইন-সহ পুরো পরিকাঠামো দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ মঙ্গলবার ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি ট্রামের পক্ষে। ঐতিহ্য, নস্ট্যালজিয়া, দূষণমুক্ত যান। কলকাতার বুকে সুপরিকল্পিত কোনও কোনও রুটে আনন্দযাত্রা, নতুন বৈচিত্র্যের মোড়কে থাকুক বিদ্যুতে চলা ট্রাম। শুধু ময়দানে আকর্ষণ-বৃদ্ধি নয়, আরও পরিকল্পনার অবকাশ থাকছে।’

রাসবিহারীর বিধায়ক তথা তৃণমূলের দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশিস কুমারও ট্রামের পক্ষে। তাঁর যুক্তি, ‘সারা বিশ্ব দূষণমুক্ত পরিবহণের দিকে ঝুঁকছে। কলকাতায় ট্রাম শুধু দূষণহীন যান নয়, প্রবীণদের জন্যেও স্বচ্ছন্দ্যের। বিদেশের বহু শহরে ট্রাম চলছে। বিধানসভাতেও আমি ট্রামের পক্ষে সওয়াল করেছিলাম।’

অন্য দিকে, ট্রাম তুলে দেওয়ার পক্ষে পরিবহণ দপ্তরের যুক্তি— ট্রামের জন্যে যানজট হয়, দুর্ঘটনা ঘটে, কলকাতায় গাড়ি বেড়েছে কিন্তু রাস্তা বাড়েনি, পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে মেট্রো, ই-বাস, ইভি রয়েছে। এর পাল্টা ট্রামপ্রেমীদের সংগঠন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক পেজে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম লাইনের জন্যে কত দুর্ঘটনা ঘটেছে সেই তথ্য চেয়ে আরটিআই করা হয়েছিল।

পুজোর আগেই ট্রামের বিসর্জন! সব লাইন তোলা হবে, ঘোষণা পরিবহণমন্ত্রীর
জবাবে জানানো হয়েছে, গত ১০ বছরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সেই মৃত্যুও ট্রাম লাইনের জন্যে কিনা, কলকাতা পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম-প্রেমীরা কাল, বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্যামবাজার থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত ছ’টি ট্রাম ডিপো ঘেরাও করবেন। ট্রাম রক্ষায় নাগরিক সমাজকে নিয়ে বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা শুরু করেছেন তাঁরা।

রাজ্য সরকারের ট্রাম তুলে দেওয়ার পিছনে ট্রাম ডিপোর জমি নিয়ে অন্য পরিকল্পনা দেখছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর বক্তব্য, ‘কলকাতার প্রাইম লোকেশনে ট্রাম ডিপোগুলির বিপুল জমি, সম্পত্তি রিয়াল এস্টেট সংস্থাগুলির হাতে তুলে দিতে চাইছে তৃণমূল সরকার। পরিবেশ, মহিলা, শিশু, প্রবীণদের কথা তৃণমূল ভাবে না। এই ভাবে টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর একাংশও রিয়েল এস্টেটের হাতে গিয়েছে।’

বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘বামেরা আন্দোলনের নামে ট্রাম পুড়িয়েছিল, তৃণমূল উন্নয়নের নামে ট্রাম তুলে দিচ্ছে।’ যদিও স্নেহাশিসের জবাব, ‘বাম আমলে পরিবহণ দপ্তরের বহু জমি বেহাত হয়েছে। আর বিজেপি দেশজুড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি বিক্রি করছে। এদের মুখে এ সব কথা মানায় না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *