সিবিআইয়ের তলব পেয়ে এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছন সুশান্ত। সংবাদমাধ্যমকে এড়াতে সিজিও কমপ্লেক্সের পিছনের গেট দিয়ে ঢোকেন তিনি। অকুস্থল থেকে তথ্যপ্রমাণ লোপাট, হাসপাতালে থ্রেট সিন্ডিকেট চালানো, ষড়যন্ত্রের মতো একাধিক অভিযোগ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা তুলেছেন সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে।
এর আগে আরজি করের ক্রাইম সিনে থাকা ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিতর্কিত চিকিৎসক অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। পিছনের গেট দিয়ে ঢোকায় এ দিন অবশ্য সিজিওতে ঢোকার সময়ে সুশান্তের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বেরোনোর সময়েও তিনি সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যান। স্বাস্থ্য মহলের অভিযোগ, সুশান্তর প্রশ্রয়েই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের রমরমা। আরজি করের ঘটনা সামনে আসার পরে নিখোঁজ পোস্টারও পড়েছিল সুশান্তর নামে।
সূত্রের খবর, মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দিতে কাউন্সিলের সহ-সভাপতি হিসেবে গত ৯ অগস্ট কলকাতায় এসেছিলেন উত্তরবঙ্গের ওই চিকিৎসক। সেখান থেকেই তিনি পৌঁছে যান আরজি করের ক্রাইম সিনে। জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের বক্তব্য, ২০১১ সালের আগে জলপাইগুড়ির বাইরে সুশান্তর তেমন পরিচিতি ছিল না। ২০১৬ সাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনে সুশান্তর প্রভাব বাড়তে শুরু করে। কোভিড পর্বে তিনি উত্তরবঙ্গের করোনা প্রতিরোধ টিমের ওএসডি পদে নিযুক্ত হন সরকারি ভাবে।
অভিযোগ, এর পর থেকেই সব মেডিক্যাল কলেজে সুশান্ত রায়ের দাপট আরও বাড়ে। করোনা পর্বের পরেও সুশান্তকে কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়ের ওএসডি করে রাখা হয়। সেই মেয়াদ অবশ্য ফুরিয়েছে। ছেলে সৌত্রিক রায়কে অন্যায় ভাবে সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমবিবিএস পাশ করার পরে ছেলে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে যোগ দেন। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পিজিটি কোর্সে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনাও করতে থাকেন, স্বাস্থ্য মহলের বড় অংশের দাবি, এটা অবৈধ।
আরজি করের ঘটনার পর থেকেই চিকিৎসকদের একাংশ সরব হয়েছেন সুশান্তর বিরুদ্ধে। তাঁদের বক্তব্য, অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ‘এন্ট্রি’ দিয়েছিলেন সুশান্তই। অন্যদিকে, এই মামলার তদন্তে এ দিনও ফের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। যাবতীয় নিয়ম মেনে ময়নাতদন্ত হয়েছিল কি না, সূর্যাস্তের পরে তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত করার জন্য কোনও মহল থেকে চাপ ছিল কি না, ওই সময়ে কে কে হাজির ছিলেন— সে সব বিষয়ই অপূর্বর থেকে জানতে চান তদন্তকারীরা।
প্রথম দিন হাজিরা দিয়ে বেরোনোর পরে তিনি জানিয়েছিলেন, ময়নাতদন্ত তাড়াতাড়ি করার জন্য তাঁদের উপর চাপ দেওয়া হয়েছিল। চাপ দিয়েছিলেন মৃতার ‘কাকু’ বলে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি। যদিও নির্যাতিতার পড়শি ‘কাকু’ সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের বয়ান যাচাই করতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আরজি করের মর্গের দুই ডোমকেও।
তাঁদের একজন জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শেষে বাইরে বেরিয়ে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের সময়ে আমি ছিলাম না। আমার টেবল ওয়ার্ক ছিল। তবে যা জানানোর সবই জানিয়েছি।’ এর আগে ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য রীনা দাস ও মলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারীরা।