Calcutta High Court: আইএএস অফিসারের স্ত্রীকে ধর্ষণ, কোর্টের তোপে পুলিশ – calcutta high court takes strict action against kolkata police on crime case of an ias officer wife


এই সময়: লেক থানা এলাকায় এক আইএএস অফিসারের স্ত্রীকে ধর্ষণের মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলায় অভিযুক্ত ৬ পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে। শুধু তা-ই নয়, মামলার রায়ে যে পর্যবেক্ষণ আদালত দিয়েছে, তা রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ।শুক্রবার রায়ে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের মূল পর্যবেক্ষণ, যৌন-নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক ভাবে লঘু ধারায় এফআইআর হওয়ায় মামলা দুর্বল হয়েছে। সঠিক ধারায় এফআইআর দায়ের না-হওয়া এবং অভিযোগপত্র বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে।

ফলে প্রশ্নের মুখে তদন্তের স্বচ্ছতাও। অর্থাৎ, এই মামলায় পুলিশি তদন্তে ত্রুটি এবং অভিযুক্ত পক্ষকে সুবিধে করে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছিল, তাতে কার্যত সিলমোহর দিল হাইকোর্ট। উল্লেখ্য, ওই আইএএস-এর কর্মক্ষেত্র ভিন রাজ্যে। তিনি এই রাজ্যের ক্যাডারও নন।

কেন কোর্টের এমন তোপের মুখে পড়ল পুলিশ? বিচারপতি ভরদ্বাজের বক্তব্য, নিগৃহীতাকেই থানায় বসে শাসানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল অভিযুক্তের পরিবারের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে কোনও তদন্তই হয়নি। ঘটনার পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্যাতিতার শারীরিক পরীক্ষা করায়নি পুলিশ।

কোর্টের বক্তব্য, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারির পরে নিম্ন আদালতে পেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জামিন পেয়ে যান। নিম্ন আদালত রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেছে, পুলিশের নথিতে ত্রুটির জন্যই জামিন দিতে বাধ্য হয়েছে কোর্ট। এ সবের পরে হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন নানা আইনি কারিকুরি করে অভিযুক্ত যাতে জামিনে থাকেন, তা নিশ্চিত করার অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের সেই জামিন এ দিন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।

আদালতের নির্দেশ, লালবাজারে কর্মরত ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার মহিলা আধিকারিককে মামলা হস্তান্তর করতে হবে। এ বার থেকে তিনিই হবেন এই মামলার তদন্তকারী অফিসার। কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে কোর্টের নির্দেশ, শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে লেক থানার ওসি, এক সাব-ইনস্পেক্টর, একজন সার্জেন্ট এবং তিন মহিলা পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ করতে হবে।

অভিযোগ, গত ১৪ এবং ১৫ জুলাই টালিগঞ্জ এলাকার এক প্রভাবশালী প্রোমোটার ওই আইএএস অফিসারের স্ত্রীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। ১৫ জুলাই লেক থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগকারিণীকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখে বলে অভিযোগ। এর পরেও মামলা দায়ের হয় লঘু ধারায়। এমনকী পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র বিকৃত করার অভিযোগ তোলা হয়। অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য থানায় বসেই নির্যাতিতাকে অভিযুক্তের স্ত্রী ও ছেলে চাপ দেন।

Calcutta High Court: শ্লীলতাহানির মিথ্যা অভিযোগ, নজির গড়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় হাইকোর্ট
তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে নিগৃহীতার জামাকাপড় এবং অন্য সামগ্রী সংগ্রহ করতে তাঁর বাড়িতে যায় পুলিশ। অভিযুক্ত নির্যাতিতার বাড়িতে ঢুকছেন এবং বেরোচ্ছেন, সেই সিসিটিভি ফুটেজ নিতে পুলিশ অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিগৃহীতার মেডিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন বোধ করেননি তদন্তকারী আধিকারিক।

১৫ জুলাই অভিযোগ দায়ের হলেও তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা হয় ২০ অগস্ট, ঘটনার ৩৫ দিন পর! যে শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়, তাতেও ত্রুটি ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পরে নির্যাতিতার নিজের উদ্যোগে যথাযথ পরীক্ষা হয়।

নির্যাতিতার আইনজীবী অন্তরীক্ষ বসু ও ময়ূখ মুখোপাধ্যায়ের সওয়াল, এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে একজন মহিলা পুলিশকর্মীকে তদন্তের ভার দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি লেক থানার ওসি। পুলিশের গাফিলতির কারণে নিম্ন আদালতে পেশ করার প্রথম দিনেই জামিন পান অভিযুক্ত। মূল অভিযোগ লেক থানায় দায়ের করা হলেও পরে তা হস্তান্তর করা হয় কড়েয়ার মহিলা থানায়। ৯ অগস্ট নিগৃহীতাকে জানানো হয়, তাঁর মামলা কড়েয়া থানায় এক মহিলা পুলিশকর্মীকে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের উপযুক্ত ধারাও যুক্ত করা হয়েছে।

রাজ্যের পাল্টা দাবি, ১৫ জুলাই দুপুর সোওয়া দুটো নাগাদ নিগৃহীতা লেক থানার গিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে অভিযোগ জানান। পরে পুলিশ জোরাজুরি করায় সন্ধের দিকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *