সিবিআইয়ের দাবি, ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ, ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি এবং মোবাইলের ডেটা — এই তিন ধরনের ডিজিটাল নথিই আদালতে প্রমাণ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তার মধ্যে কয়েকটির ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে এলেও, বাকিগুলির অপেক্ষায় রয়েছেন গোয়েন্দারা। আজ, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি করের খুন-ধর্ষণের মামলার স্ট্যাটাস রিপোর্ট পেশ করতে চলেছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। সেখানে তাঁরা নতুন কী তথ্য পেশ করেন, তা দিকে তাকিয়ে আন্দোলনকারী থেকে সাধারণ মানুষ। সুপ্রিম কোর্ট কী নির্দেশ দেয় — তার দিকেও নজর রয়েছে সকলের।
ঘটনার আগে ও পরে আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম-সংলগ্ন সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়েছিল, সিবিআইকে ৭-৮ ঘণ্টার ফুটেজ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়েছিল, তারা মাত্র ২৭ মিনিটের ফুটেজ পেয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ঠিক কত মিনিটের ফুটেজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা পেয়েছেন, তা কি সোমবার সুপ্রিম কোর্টে স্পষ্ট হবে?
তদন্তকারীদের দাবি, ওই ফুটেজ খতিয়ে দেখতে গিয়েই ‘হোঁচট’ খেতে হচ্ছে তাঁদের। সিবিআই কর্তাদের অনুমান, যে ফুটেজ এখনও পর্যন্ত হাতে এসেছে, তা সব জায়গায় স্পষ্ট এবং একটানা নয়। সে কারণে তদন্তে ‘মিসিং লিঙ্ক’ রয়ে যাচ্ছে। কলকাতা পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছিল, জরুরি বিভাগের চার তলার লিফটের কাছ থেকে সেমিনার রুমে যাওয়ায় পথে করিডরের ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। তাতে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দেখা গিয়েছিল। যদিও সেমিনার রুমে ঢুকতে বা বেরোতে তাঁকে দেখা যায়নি বলেই সূত্রের খবর।
ভোর চারটের পর থেকে ২৭ মিনিটের ওই ফুটেজ রয়েছে চার ভাগে। ওই বিল্ডিং-এ ঢোকার আরও দু’টি পথ রয়েছে। তা ছাড়া বহুতলের বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ওই দিন কে, কখন ওই বিল্ডিং-এ ঢুকেছেন, কার সঙ্গে দেখা করেছেন, তা জানার জন্য ওই ফুটেজগুলিও একই ভাবে তদন্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু, হাতে পাওয়া সেই ফুটেজগুলিতে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না তাঁরা। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের উদ্দেশে ডিজিটাল নথি নষ্টের চেষ্টা হয়েছিল কি না, সিবিআইয়ের তরফে এখন সেই প্রশ্নই তোলা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ওই মামলায় টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল এবং আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছেন গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রের দাবি, নতুন বিএনএসএস আইনে ময়নাতদন্ত এবং সার্চ-সিজ়ার লিস্ট তৈরি করার সময়েও যে ভাবে ভিডিয়োগ্রাফি করার কথা বলা হয়েছে, তাতে-ও গরমিল রয়েছে। সিসিটিভির মতোই ভিডিয়োগ্রাফির ফুটেজও অস্পষ্ট এবং ধারাবাহিকতার অভাব পাওয়া গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার নিহত তরুণী ও ধৃত তিনজনের মোবাইল এবং কয়েকজন সন্দেহভাজনের মোবাইল ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের নাগালে এসেছে এবং সেগুলিও পরীক্ষা করে তথ্য মুছে দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। এই সমস্ত ঘটনায় অভিজিৎ এবং সন্দীপের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়ায় ভিডিয়োগ্রাফি নিয়ে আরজি করের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের ডেমনস্ট্রেটর দেবাশিস সোমের ভূমিকাও সিবিআইয়ের স্ক্যানারে রয়েছে।
ময়নাতদন্তের দলে থাকা চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাসকেও বেশ কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অভিযোগ, দেবাশিসের সঙ্গে ওই দিন বেশ কয়েকজন যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁদের বয়ান মিলছে না ঘটনার পর্যায়ক্রমের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আবার সন্দীপ ঘনিষ্ঠ জুনিয়ার চিকিৎসক।