৯ অগস্ট রাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয় দেশ। বিচার চেয়ে পথে নামে গোটা রাজ্য। প্রতিবাদে সামিল হন সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই আন্দোলনে নাম লিখিয়েছিলেন কল্যাণী জহরলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল (জেএনএম)-এর দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই তরুণীও। ততক্ষণে তাঁর উপরে ঘটে গিয়েছে অত্যাচার। একদিন-দু’দিন নয়। বেশ কয়েকদিন। জানা গিয়েছে, পর পর কয়েকদিন প্রতিবাদ মঞ্চে বসে আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদের মাঝেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তুলে ধরেন নিজের লাঞ্ছনার কাহিনীও। সহকর্মী ও তরুণ চিকিৎসকদের ভরসায় ১৩ অগস্ট অভিযোগ জানান কল্যাণী থানায়।
অভিযোগ, ৯ অগস্ট ওই হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজির এক অধ্যাপক তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। শুধু সে দিনই নয়, তার আগেও দিনের পর দিন ওই অধ্যাপক তাঁকে শারীরিক লাঞ্ছনা করেছেন। ৯ অগস্ট তা চরমে ওঠে। অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুলিশ অভিযুক্ত অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করে। নিম্ন আদালতে তিনি জামিন চাইলে আদালত তা খারিজ করে দেয়। গত সপ্তাহে সেই অধ্যাপক জামিন চেয়ে মামলা করেন কলকাতা হাইকোর্টে। জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি কৌঁসুলি অরিন্দম সেন ও সৌম্য বসু রায় চৌধুরী। অভিযোগের ১৩ দিনের মাথায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে বলেও জানায় রাজ্য।
ধৃতের আইনজীবীদের বক্তব্য, বিভাগীয় অধ্যাপকের সঙ্গে ছাত্রীর ভুল বোঝাবুঝিতে একটা ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু তার মধ্যে আরজি করের ঘটনা সামনে আসার পরে ধর্নামঞ্চে গিয়ে নিজের নির্যাতনের কথা বলে চিৎকার জুড়ে দেন তিনি। সেখানে উপস্থিতরা তাঁকে কিছু বোঝানোর পরেই নিজে গিয়ে থানায় অভিযোগ জানান। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ জামিন নাকচের ইঙ্গিত দেন। আদালতের বক্তব্য, যেহেতু চার্জশিট জমা পড়েছে, তাই এ বার নির্যাতিতার সাক্ষ্য গ্রহণ হবে। তার আগে জামিন দিতে নারাজ হাইকোর্ট। তখনই আবেদনকারীর আইনজীবীরা জামিনের আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।
এ দিকে সহপাঠীদের পরামর্শে তরুণী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছেও একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। জেএনএমের তৎকালীন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ওই তরুণীর অভিযোগ পাওয়ার পরের দিনই কমিটি গড়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই কমিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেয়। তার মধ্যেই তরুণী থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করলে, আমরাও কমিটির রিপোর্ট পুলিশকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
এ ক্ষেত্রে পুলিশের সদর্থক ভূমিকার কথাও উঠে এসেছে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তকে শুধু গ্রেপ্তারই করা হয়নি, ১৩ দিনের মধ্যে ২৬ অগস্ট চার্জশিটও জমা দেওয়া হয়েছে।