গোখরোর ছোবল কেড়ে নিল পরিবেশকর্মীর প্রাণ – wildlife rescuer indrajit adak dies after being bitten by cobra in howrah panchla


রাকিব ইকবাল, পাঁচলা
ফাঁদে পড়া সাপ উদ্ধার করা ছিল তাঁর নেশা। সেই নেশারই খেসারত দিতে হলো প্রাণ দিয়ে। মঙ্গলবার সকালে গ্রামীণ হাওড়ার পাঁচলায় গোখরো সাপের কামড়ে মৃত্যু হলো অভিজ্ঞ বন্যপ্রাণী উদ্ধারকারী ইন্দ্রজিৎ আদকের। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে জালে জড়ানো ওই গোখরোটিকেই উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট চুয়াল্লিশের ইন্দ্রজিৎ। অভিজ্ঞ পরিবেশকর্মী ইন্দ্রজিতের মৃত্যুতে উঠছে গুরুতর কয়েকটি প্রশ্ন। সাপের কামড়ের বিপদ জানা সত্ত্বেও কেন তিনি হাসপাতালে পৌঁছতে বেশ কিছুটা দেরি করে ফেললেন, সেই প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেন না তাঁর সহকর্মী বন্ধুরা।মঙ্গলবার সকাল ১০.৫৫। পাঁচলার দেউলপুরে ইন্দ্রজিতের বাড়ি থেকে মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার দূরে রুদ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের খসমরা মাঠের ধারে ভলিবল কোর্টের পাশে লাগানো মোটা নাইলনের জালে জড়িয়ে ছিল গোখরোটি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে সাপটির ছবি তোলেন ইন্দ্রজিৎ। তার পর খালি হাতেই সাপটিকে জাল থেকে ছাড়াতে যান। কিন্তু তার মধ্যেই ইন্দ্রজিতের বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলে কামড় বসায় গোখরোটি। কিন্তু সাপে কাটার পর ইন্দ্রজিৎ হাসপাতালে যান প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে। এতক্ষণ তিনি কোথায় ছিলেন? দেরিতে হাসপাতালে যাওয়ার ফলেই অ্যান্টিভেনম কাজ করেনি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

ইন্দ্রজিতের বাড়ি দেউলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশেই। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী বৈশাখী। হাওড়ার কোথাও বন্যপ্রাণী আটকে পড়ার খবর পেলেই ইন্দ্রজিৎ ছুটে যেতেন। রাজ্যপ্রাণী বাঘরোল ছাড়াও সজারু ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন তিনি।‌ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও মানুষকে সচেতন করতেও অসংখ্য শিবিরের উদ্যোক্তা ছিলেন ইন্দ্রজিৎ। বিষধর ও বিষহীন সাপ চেনানোর জন্য তাঁর ডাক পড়ত সারা বছর। সেই পরিবেশ কর্মীর এমন মৃত্যুতে রহস্য দানা বেধেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন সাপে কামড়ানোর পর ইন্দ্রজিৎ সেখান থেকে চলে যান। তাঁকে সাপে কাটার খবর পেয়ে ছুটে আসেন অন্য পরিবেশকর্মী ও বন্ধুরা। তাঁরা অনেক খুঁজেও ইন্দ্রজিতের হদিস পাননি। প্রায় দু’ঘণ্টা পর ইন্দ্রজিৎ যখন বাড়িতে ফেরেন তখন অনেকটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে তাঁর শরীর। দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পাঁচলার গাববেড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। তখন প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন ইন্দ্রজিৎ।‌

গাববেড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসকরা দ্রুত ১০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম সিরাম দেন। কিন্তু অবস্থা সঙ্কটজনক দেখে তাঁকে রেফার করা হয় উলুবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে আসার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। উলুবেড়িয়া আসার পথে অ্যাম্বুল্যান্সেই প্রচণ্ড খিঁচুনি হয় ইন্দ্রজিতের। তার পরই নিথর পড়ে তাঁর দেহ।

পরিবেশ কর্মী শুভজিৎ মাইতি ও চিত্রক প্রামাণিক বলেন, ‘ইন্দ্রজিৎ আদক একজন অভিজ্ঞ সাপ উদ্ধারকারী।‌ খালি হাতে সাপ ধরাটা তাঁর ঠিক হয়নি। যে মানুষটা সাপে কাটার পর ‘গোল্ডেন আওয়ার’ নিয়ে মানুষকে বোঝাতেন, তিনি কেন সেই নিয়ম ফলো করলেন না?’‌ ইন্দ্রজিতের প্রতিবেশী সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘পরিবেশ পাগল ছেলেটার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।’

ঘটনা প্রসঙ্গে বন দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘যাঁরা ব্যক্তিগত বা কোনও সংস্থার হয়ে সাপ উদ্ধার করছেন, তাঁরা যেন প্রশাসনকে জানিয়ে এবং সতকর্তা মেনে উদ্ধারে যান।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *