Cyber Fraud Case,পুলিশ…প্রমাণ কী! প্রতারণার তদন্তে নেমে বিপাকে পুলিশই – jhargram district police face trouble while investigating cyber fraud case


অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
— হ্যালো! আমি ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ থেকে বলছি। আপনি তো অমুক তারিখে সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। আপনার বাড়ির ঠিকানাটা কী!
— না, আপনাকে কেন বলব? আপনি পুলিশ, কী প্রমাণ?
— আমি জেলা পুলিশের অফিসিয়াল নম্বর থেকেই ফোন করছি।
— তাতে কী? এ রকম ভাবেই তো জালিয়াতরা ফোন করছে, মেসেজ করছে।মোবাইলে কথোপকথনের বাংলা তর্জমা করলে অনেকটা এরকমই দাঁড়ায়। ফোনের একপ্রান্তে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের অফিসার। অন্য দিকে তেলঙ্গানার এক প্রতারিত ব্যক্তি। পুলিশ অফিসারটি যতই বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি সত্যিই তদন্তের কারণে ফোন করে তথ্য জানতে চান, প্রতারিত ব্যক্তিটি মানতে নারাজ! কারণ, সাইবার জালিয়াতরাও তো এ ভাবেই পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রতারণার কারবার চালায়। ফলে ফোনে পুলিশকে কোনও তথ্য দিতে নারাজ প্রতারিত ব্যক্তিটি।

একটি সাইবার প্রতারণার ঘটনায় সুয়োমোটো মামলা রুজু করে তদন্ত করতে গিয়ে এমনই বিপাকে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের সাইবার বিভাগের অফিসাররা। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি থানার অন্তর্গত ভুলাভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতের টংবেদা গ্রামের বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের যুবক কৈলাসপতি পালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ সূত্রের দাবি, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে সব মোবাইল নম্বর থেকে প্রতারণার জাল বিছোনো হয়, সেগুলি আপলোড করা হয় কেন্দ্রীয় ‘প্রতিবিম্ব’ পোর্টালে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ ও তদন্তকারী এজেন্সি সেই নম্বরগুলি তাদের এলাকায় অপারেট হলে অভিযুক্তকে পাকড়াও করে। তেমনই একটি নম্বরের সূত্র ধরে লোকেশন বের করে ঝাড়গ্রাম পুলিশ কৈলাসপতিকে গ্রেপ্তার করে।

তদন্তে জানা যায়, ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে কম দামে বিভিন্ন নামী কোম্পানির স্মার্টফোন বিক্রির নাম করে সে টাকা তুলেছে অনেকের কাছ থেকে। তারপরে যাঁরা আগাম টাকা দিতেন, তাঁদের নম্বর ব্লক করে দিত কৈলাসপতি। পুলিশ সূত্রের দাবি, মূলত তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দারা প্রতারিত হয়েছেন এই ফাঁদে পা দিয়ে। সুয়োমোটো মামলার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ প্রতারিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের নাম, ঠিকানা, প্রতারণা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট তথ্য জানতে চায়। সেটা করতে গিয়ে নতুন বিপদে খোদ পুলিশই!

প্রতিবিম্ব পোর্টাল কি?

সমস্যাটা ঠিক কোথায়?
তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশের ওই প্রতারিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা প্রথমে ভয়ই পাচ্ছেন, আসল পুলিশ ফোন করছে কি না এই আশঙ্কায়। কারণ, পুলিশ পরিচয় দিয়েও সাম্প্রতিক অতীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকগুলি প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এমনকী পুলিশ নিজেদের অফিসিয়াল নম্বর দিলেও তাঁরা কথা বলতে চাইছেন না, কোনও তথ্যও জানাতে চাইছেন না।

জেলা পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘অভিযোগকারীরা ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। ইনস্টাগ্রামের বিজ্ঞাপন দেখে মোবাইল কিনতে গিয়ে ইতিমধ্যে তাঁরা কয়েক হাজার টাকা খুইয়েছেন। তাই এ বার পুলিশের ফোন পেয়েও প্রতারিত ব্যক্তিরা সত্যি পুলিশ কি না, তা বুঝে উঠতে পাচ্ছেন না। হয়তো সে কারণেই প্রতারিত অভিযোগকারীরা একটু দ্বিধাগ্রস্ত। খানিকটা ঘর পোড়া গোরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায় গোছের অবস্থা!’ যদিও তাঁদের নানা ভাবে বুঝিয়ে-সুজিয়ে তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।

ঝাড়গ্রামের ডিএসপি (ডিএনটি) তথা সাইবার ক্রাইমের নোডাল অফিসার সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা তেলঙ্গানা পুলিশের সঙ্গে রাজ্য সাইবার ক্রাইম উইংয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি অভিযোগকারীদের ডিটেলস পাওয়ার জন্য। এই ধরনের ঘটনা রাজ্যে নতুন। ফলে তদন্তে একটু বাধা আসছে। সেই বাধা কাটিয়ে আমরা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’ তবে এই ‘বাধা’র মধ্যেই কিছুটা আশার আলো দেখছেন তদন্তকারীরা।

সব্যসাচীর কথায়, ‘পুলিশও আসল কি না, সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষ নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন, পুলিশ পরিচয় দিয়ে জালিয়াতি হচ্ছে কি না, তা-ও জানতে চাইছেন— এটা থেকে বোঝা যায়, মানুষ কিছুটা সচেতন হচ্ছে।’ পুলিশ সূত্রের খবর, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ কৈলাসের সাইবার ক্রাইম প্রতারণায় হাতেখড়ি হয় বছর তিনেক আগে। একটা বেকার যুবকের চালচলন বদলে যায় তার পর থেকেই। যা চোখ এড়ায়নি প্রত্যন্ত টংবেদা গ্রামের বাসিন্দাদেরও। যদিও গ্রামের লোকজনকে কৈলাস জানিয়েছিল, সে লটারি জিতেছে। তার জোরেই পাকা বাড়ি, গাড়ি কিনেছে। তবে এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা যা জেনেছেন, তাতে প্রতারিতদের তালিকায় মূলত তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যের বাসিন্দারাই রয়েছেন।

আপনার ফেলে দেওয়া মোবাইল হয়ে উঠছে সাইবার প্রতারণার অস্ত্র

বাংলায় সে এই ধরনের কারবার এখনও চালায়নি বলেই অনুমান তদন্তকারীদের। এক পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘হয়তো বাংলায় বসে ভিন রাজ্যের লোকজনকে প্রতারণা করলে সহজে ধরা পড়বে না, এরকম একটা ধারণা তার থাকতে পারে। তবে তার সঙ্গে আরও কেউ এই প্রতারণাচক্রের সঙ্গে জড়িত কি না, কত লোককে সে ফাঁদে ফেলেছে— সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

তদন্তকারীদের দাবি, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেও মাঝেমধ্যে ভিওআইপি কল করত কৈলাস। ফলে আসল আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) অ্যাড্রেস খুঁজে বের করাও কঠিন হতো। বাংলায় বসে কল করলেও কখনও সেই কল সিঙ্গাপুর, কখনও বা মালয়েশিয়া বা দুবাই থেকে আসছে বলে ভাবতেন প্রতারিত ব্যক্তিরা। গ্রেপ্তার হওয়ার পরে বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলা সংশোধনাগারে বন্দি কৈলাস।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *