কিন্তু অনেকেই অভিযোগ করছেন, মেয়র শহরের রাস্তার সামান্য একটি অংশই দেখেছেন। আর সেখানে পুজোর আগে তড়িঘড়ি কিছু কাজও হয়েছে। কিন্তু বুধবার বাঁশদ্রোণীর যেখানে দুর্ঘাটনা ঘটেছে, তেমন বহু জায়গা রয়ে গিয়েছে, যেখানে রাস্তার হাল ভয়ঙ্কর। তার মধ্যে যেমন ছোট-মাঝারি রাস্তা আছে, তেমনই রয়েছে শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কও। অনেকেই বলছেন, এই সব রাস্তা নিয়ে বহু বার আবেদন জানানো হলেও পুর-কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তা ছাড়া, সে সব রাস্তা সারানো হয়েছে বলে পুরসভার দাবি, সেগুলি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। স্রেফ তাপ্পি মেরে গর্ত বুজিয়ে রাস্তা সারাই হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে— অভিযোগ এমনই।
আর এই ভাবে রাস্তা ‘সারাই’ করার ট্র্যাডিশন কলকাতায় বেশ পুরোনো। বছরের পর বছর এমনটা করতে করতে কলকাতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এখন রীতিমতো ঢেউ খেলানো পথে পরিণত হয়েছে। এই সব রাস্তায় গাড়ি চলে দুলে দুলে, ধীর গতিতে। ফলে ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির গতি হয়ে যায় শ্লথ। কিছু সময়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। যদিও পুরসভার বক্তব্য, পুজোর আগেই এ সব রাস্তা সারিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এই কম সময়ে সেটা আদৌ সম্ভব কি না, সে প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
কী ভাবে ‘সারানো’ হয় রাস্তা? সোজা হিসেব, পিচ ফেলে ভরে দেওয়া হয় গাড্ডা-গর্ত। পুরসভার সড়ক বিভাগেরই অফিসারদের অনেকে বলছেন, এই পিচ ফেলে গাড্ডা সারাইয়ের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। নতুন যে পিচ ফেলা হচ্ছে, তা হতে হবে মূল রাস্তার সারফেসের সঙ্গে সমান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কোনও হিসেব না করেই কোনওক্রমে গাড্ডার উপরে পিচ ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে তা রাস্তার বর্তমান সারফেস থেকে কম-বেশি হচ্ছে। রাস্তা হয়ে যাচ্ছে ঢেউ খেলানো।
আশুতোষ মুখার্জি রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, দেশপ্রাণ শাসমল রোড, এনএসসি বোস রোড, রাজা এসসি মল্লিক রোড, রুবি মোড় থেকে পিয়ারলেস বাস স্টপ পর্যন্ত ইএম বাইপাস— কলকাতার এই সব অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার অবস্থা ঠিক এ রকমই বলে অভিযোগ নগরবাসীর একটি বড় অংশের। এ সব রাস্তায় গাড়ি চলে নৌকোর মতো দুলে দুলে। ঝাঁকুনিতে গাড়িতে বসে থাকা দায়। টালিগঞ্জের বাসিন্দা দেবেন বাগের কথায়, ‘এনএসসি বোস রোড থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, আশুতোষ মুখার্জি রোড ধরে বহু মানুষ শহরের প্রাণকেন্দ্রে যান। অথচ ওই রাস্তা ধরে গেলে গায়ে ব্যথা হয়ে যাবে।’
বাইপাস ধরে নিয়মিত উল্টোডাঙার অফিসে যাতায়াত করেন গড়িয়ার বাসিন্দা সীমা বৈদ্য। তাঁর কথায়, ‘বাইপাসে ব্রিজি থেকে রুবি মোড় পর্যন্ত যেতে বাসে প্রবল ঝাঁকুনি লাগে। খানাখন্দ কম হলেও পুরো রাস্তা এত ঢেউ খেলানো যে, গাড়ি একেবারে নৌকোর মতো দুলেদুলে চলে।’ এই সমস্যা প্রসঙ্গে পুরসভার সড়ক বিভাগের মেয়র পারিষদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘ওই সব রাস্তা দু’-তিন দিনের মধ্যেই ঠিক করে দেওয়া হবে।’ কিন্তু এইটুকু সময়ে তা সম্ভব? অমোঘ প্রশ্নটা ছিটকে আসছে শহরবাসীদের কাছ থেকেই।