মমতা মনে করিয়ে দেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে কার্যত এই স্বীকৃতি ছিনিয়ে এনেছি। তাদের কাছে আমরা অন্তত তিনটি ভলিউমের রিসার্চ মেটিরিয়াল জমা দিয়েছিলাম। আজ কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের সেই গবেষণাকেই স্বীকৃতি দিল। অবশেষে আমরা দেশের প্রাচীনতম ভাষাগুলির অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি পেলাম।’ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন, ‘এটা দুর্গাপুজোর শ্রেষ্ঠ উপহার।’
এর আগেই তামিল, সংস্কৃত, তেলুগু, কানাড়া, মালয়ালম, ওড়িয়া ভাষাকে দফায় দফায় ক্ল্যাসিক্যাল ল্যাঙ্গুয়েজের স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্র। এর মধ্যে তামিল সবার আগে এই স্বীকৃতি পেয়েছিল। ধ্রুপদী ভাষা বা ক্ল্যাসিক্যাল ল্যাঙ্গুয়েজ বলতে এমন ভাষাকে বোঝায়, যা অত্যন্ত প্রাচীন, সমৃদ্ধ সাহিত্যের অধিকারী এবং স্বাধীন ভাবে গড়ে উঠেছে। বাংলা যাতে এই স্বীকৃতি পায়, তা নিয়ে বহুদিন ধরেই সচেষ্ট রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের অধীনে ভাষা চর্চার জন্য নিউ টাউনে গড়ে উঠেছে ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চ।
এই সংস্থাই গত কয়েক বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম করেছে বাংলা ভাষার প্রাচীনত্ব প্রমাণ করার জন্য রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছে। এই দলে আর্কিওলজিস্ট থেকে ঐতিহাসিক, ভাষাবিদ থেকে সাহিত্যিক— বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা ছিলেন। উচ্চ শিক্ষা দপ্তরকে মোট ৪টি ভলিউম তাঁরা জমা করেন। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। তারপর সেই প্রামাণ্য নথি নিয়ে দিল্লি যান ওই ইনস্টিটিউটের কর্তাব্যক্তিরা। তাঁদের প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল, ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেতে গেলে কেন্দ্র যে সব যুক্তি রেখেছে, তার চেয়েও পুরোনো এই বাংলা ভাষা।
পড়শি রাজ্য ওডিশা ২০১৪ সালে ক্ল্যাসিক্যাল ল্যাঙ্গুয়েজের স্বীকৃতি পায়। তারপর থেকে বাংলার জন্য এই দাবি আরও জোরালো হতে শুরু করে। সেই নিরলস পরিশ্রমের দাম পাওয়ায় স্বভাবতই খুশি ইনস্টিটউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চের গবেষকরা। এই স্বীকৃতি মেলায় বাংলা ভাষার চর্চা, সংরক্ষণ যথেষ্ট গতি পাবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।