শান্তিনিকেতনে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ সোনাঝুরির হাট৷ পুজোতেও ভিড় হয় হাটে। আসলে এই সোনাঝুরির জঙ্গলেই হীরালিনী দুর্গোৎসব হয়৷ শৈল্পিক এই উৎসব বহু মানুষকে আকৃষ্ট করে৷ তার উপরে হাটের আকর্ষণ তো রয়েইছে। ভিড় বাড়তে থাকায় ট্র্যাফিক সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই এ বার আগেই হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ঘোষণা করা হয়েছে, পুজোর দিনগুলিতে সোনাঝুরির খোয়াই হাট বন্ধ রাখা হবে।
হাট কমিটির সদস্য তন্ময় মিত্র বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে আমাদের হাট কমিটির কথা হয়েছে। সোনাঝুরিতে একটি দুর্গাপুজো হয়৷ মানুষজনের সুবিধার্থে পুজোর দিনগুলিতে হাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীদের জানিয়েও দিয়েছি।’
পুজোর চার দিনে দারুণ কেনাবেচা হয় হাটে। এ বার রোজগারের সে পথ বন্ধ। তাই মন খারাপ ব্যবসায়ীদের। হাটের ব্যবসায়ী দীপেন দাস বলেন, ‘প্রতি বার পুজোর চার দিন ব্যবসা ভালোই হয়। এ বার হাট বন্ধ হওয়ায় খানিকটা হলেও ক্ষতি হবে। পুজোর আগে থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি। তাতেও ক্ষতি হচ্ছে। তবুও প্রশাসনের নির্দেশ মেনে তো চলতেই হবে।’
আরও এক ব্যবসায়ী সবিতা মণ্ডল বলেন, ‘আমি কাঁথা স্টিচের কাপড় নিয়ে বসি। এই সময় অনেক টাকার ব্যবসা হয়। এ বার সব বন্ধ। এ বার তাই পুজোর আগে মন খারাপ।’ মন খারাপ হয়ে গিয়েছে তনুশ্রী মল্লিকেরও। হাওড়া শিবপুরের বাসিন্দা এই সঙ্গীতশিল্পী বলেন, ‘আমি এ বার পুজোয় শান্তিনিকেতন যাব বলে টিকিট কেটেছি। কত কিছু কিনব বলে প্ল্যান করে ছিলাম! হাট বন্ধের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল।’
বিশ্বভারতীর কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্রী প্রয়াত শ্যামলী খাস্তগিরের উদ্যোগে এই হাটটি ২৪ বছর আগে ‘শনিবারের খোয়াই বনের অন্য হাট’ বলে এলাকায় পরিচিতি পায়। কারণ, হাট বসত শনিবার বিকেলে। তখন হাটটি শুরু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, সংলগ্ন গ্রামের মানুষ বিশেষ করে মহিলাদের তৈরি নানা হস্তশিল্প, বাড়িতে রান্না করা খাবার বিক্রি করা। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে বিক্রি।
এই ‘খোয়াই বনের অন্য হাট’কে আকর্ষণীয় করে তুলতে ২০১৭ সালে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তী কালে এই হাটের নাম হয়ে যায় সোনাঝুরির খোয়াই হাট। ক্রমে ক্রমে সপ্তাহে সাত দিনই হাট বসতে শুরু করে। এখন বুধবার বাদে বাকি দিনগুলিতে জঙ্গলের মধ্যেই পসরা সাজিয়ে বসেন কমপক্ষে ১৭০০ ব্যবসায়ী। কাঁথা স্টিচ, বাটিক, মালা, গয়না, বেতের কাজ, কাঠের কাজ, শান্তিনিকেতনী আসবাব, ঘাসের গয়না — কী থাকে না সেই হাটে? সঙ্গে থাকে পেটপুজোর আয়োজন: ঘুগনি, আলুর দম, পাটিসাপটা, দুধ পিঠে, ঝালমুড়ি – আরও কতো কী!
এ বছরের পুজোয় অবশ্য সে সবের আর দেখা মিলবে না। তবে আদিবাসী নৃত্য, বাউল গান ও হীরালিনী দুর্গোৎসব মন ভোলাবে পর্যটকদের!