Khagragarh Blast,বাংলাদেশের পালাবদলে উদ্বেগ, বর্ধমানে নজরদারি এসটিএফের – detectives on high alert after 10 years of bardhaman khagragarh blast


রূপক মজুমদার, বর্ধমান
আজ চতুর্থী। আর চার দিন পরেই অষ্টমী। ২০১৪-র ওই দিনেই খাগড়াগড় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল বর্ধমান। সঙ্গে গোটা রাজ্যও। সেই ঘটনার পিছনে বাংলাদেশি জঙ্গি-যোগ পেয়েছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিদের গোপনে জাল বিছানোর ঘটনাও উঠে এসেছিল সামনে। তার ১০ বছর পরে ফের আশঙ্কার চোরাস্রোত তৈরি হয়েছে।গত অগস্টে বাংলাদেশে ‘গণ অভ্যুত্থানে’র পর সে দেশের বহু জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে জঙ্গিরা। অনেকে সুযোগ বুঝে মিশে গিয়েছে মানুষের ভিড়ে। আর তাতেই প্রমাদ গুনছে এ রাজ্যের এসটিএফ (স্পেশাল টাস্ক ফোর্স)। সংস্থার কর্তাদের কথায়, অতীতে বাংলাদেশের র‍্যাব (র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন) ও এসটিইউ (স্পেশাল টাস্ক ইউনিট)-এর সঙ্গে জঙ্গি সংক্রান্ত যে তথ্যের আদানপ্রদান ঘটত তা এখন বন্ধ। ফলে জঙ্গিদের সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো অবস্থা এসটিএফের।

এই পরিস্থিতিতে ফের সেফ করিডর হিসেবে বাংলাদেশি জঙ্গিরা বর্ধমানকে বেছে নিতে পারে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। তাঁদের অনুমানে যে ভুল নেই তার প্রমাণ মিলেছিল চলতি বছরের জুনেই। ওই মাসের ২২ তারিখ পানাগড়ের মিরেপাড়া থেকে এসটিএফ গ্রেপ্তার করেছিল কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মহম্মদ হাবিবুল্লাকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট ও বনগাঁ থেকে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা।

এদের প্রত্যেকের সঙ্গেই বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের যোগ পাওয়া গিয়েছে। এসটিএফের এক অফিসার বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা কিছুটা চিন্তিত। ওই দেশের পলাতক জঙ্গিরা আমাদের এখানে ডেরা বাঁধতেই পারে। তাই নজরদারি বাড়াতে হয়েছে আমাদের। বাংলাদেশের র‍্যাব আর এসটিইউ-এর সঙ্গেও আমরা আর যোগাযোগ রাখতে পারছি না। ফলে তথ্য আদানপ্রদানে সমস্যা তৈরি হয়েছে।’

ফলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় এসটিএফ-ও তাদের নজরদারি বাড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের বেশ কিছু এলাকায়। এর মধ্যে রয়েছে খাগড়াগড়, বাদশাহি রোড, কুলসোনা, মঙ্গলকোট, শিমুলিয়ার মতো জায়গা। এই শিমুলিয়াতেই মাদ্রাসার আড়ালে মহিলাদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্র। তার হদিশ পেয়েছিল এনআইএ। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অন্যতম অভিযুক্ত রাজিয়া ও আলিমা বিবি নিয়ম করে এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসত।

মাটির নীচে বাঙ্কার তৈরি করে বাংলাদেশ থেকে আসা মহিলাদের এখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। সম্প্রতি এসটিএফের নজরদারিতে সন্দেহভাজন হিসেবে তিন জনকে চিহ্নিত করেন গোয়েন্দারা। তাদের কলকাতায় এসটিএফ অফিসে নিয়ে গিয়ে জেরাও করা হয়। ওই তিন জনের মধ্যে এক জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

Murshidabad Incident: অপহৃত মুর্শিদাবাদের দুই কৃষক
বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ পরবর্তী সময়ে ‘শাহদাত’ নামে নাশকতা শুরু করে। ওই সংগঠনের দুই সক্রিয় সদস্য মহম্মদ আসাদুজ্জামান আসিফ ও মহম্মদ আহাদকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব। তাদের কাছ থেকেই খোঁজ মিলেছিল পানাগড়ের হাবিবুল্লার। তাকে জেরা করে ও তার মোবাইল, ল্যাপটপ ঘেঁটে গোয়েন্দারা ‘গোবরা’ নামে একটি অনলাইন গ্রুপের খোঁজ পেয়েছিলেন।

ওই গ্রুপের মাধ্যমেই জঙ্গিরা মিটিং করত বলে জানা গিয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির খবর আগে থেকেই পেয়েছিল শাহদাতের সদস্যরা। বাংলাদেশের ওই ‘মুভমেন্টে’ তারাও ‘সামিল’ হয়েছিল। সেই জঙ্গিদের ফের এ রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। সে ক্ষেত্রে বর্ধমান জঙ্গিদের চেনা জায়গা। তাই এসটিএফের গোয়েন্দারা বিশেষ ভাবে নজরদারি চালাচ্ছেন এই জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

এসটিএফের এক আধিকারিকের কথায়, ‘নতুন করে গোবরার মতো কোনও অনলাইন অ্যাপ তৈরি হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। এখন উৎসবের মরশুম। এই সময়ে রাজ্যে এরা যাতে নতুন করে কোনও ঝামেলা পাকাতে না পারে তার জন্যই কাজ চলছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *