Durga Puja: সিংহ নেই, তবু নাম তাঁর সিংহবাহিনী – maa durga is worshipped in simha house nanoor with name of singhabahini


হেমাভ সেনগুপ্ত, সিউড়ি: এক সময়ে সবই ছিল। দেবীর বাহন সিংহ। পদতলে অসুর। এখন আর কেউ নেই। তবু তাঁর নাম সিংহবাহিনী। নানুরের দাসকল গ্রামে সিংহ বাড়িতে দু’হাত তুলে রয়েছেন দুর্গতিনাশিনী। এক হাতে বরাভয়। অন্য হাতে পদ্ম। কেন এই পরিবর্তন? তার পিছনে রয়েছে লম্বা ইতিহাস।

প্রায় চারশো বছর আগে বারোভুঁইয়ার ‘বিদ্রোহ’ দমনে সম্রাট আকবরের নির্দেশে বাংলায় এসেছিলেন সেনাপতি মানসিংহ। রাজপুত সেনাদের নিয়ে অভিযান চালান তিনি। দিল্লিতে ফিরে যাওয়ার আগে মানসিংহ কয়েক জন পদস্থ রাজপুত সেনাকে জমিদারি দিয়ে বাংলায় বসিয়ে যান। যাতে দিল্লি থেকে দূরের এই মুলুকে সহজেই নজরদারি চালানো যায়। দাসকল গ্রামের সিংহ পরিবার সেই সূর্যবংশীয় ক্ষত্রিয় রাজপুত ফতে সিংহের উত্তরসূরি। শক্তির পূজারি। তিনিই পঞ্চমুণ্ডির আসনে সিংহবাহিনী দশভূজার আরাধনা শুরু করেন।

সেই পুজোয় অনেক বিধিনিষেধ ছিল। বলিদানের সময়ে দেবীর ‘দৃষ্টি পথে’ কারও আসা নিষিদ্ধ ছিল। প্রায় তিনশো বছর আগে তৎকালীন উত্তরসূরি, জমিদার নীলকণ্ঠ সিংহের আমলে পরিবারের ছোট্ট মেয়ে অসাবধানে দেবীর দৃষ্টিপথে চলে আসে। কয়েকদিন পরে পাশের পুকুরে তার দেহ ভেসে ওঠে। এই ঘটনায় চিন্তিত হয়ে পড়েন পরিবারের তৎকালীন কর্তা। কথিত আছে, সেই সময়ে একই রাতে জমিদার, পুরোহিত ও প্রতিমা শিল্পী দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান।

স্বপ্নে তাঁদের মহিষাসুরমর্দিনী রূপ পাল্টে অভয়া রুপে আরাধনার নির্দেশ দেন। পরের দিন তিন জনে নিজেদের স্বপ্ন নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন। পুরোহিত-সহ বিশিষ্টদের আলোচনায় ঠিক হয়, অসুর নিধনের পরে কৈলাস পর্বতে সমবেত দেবতাদের দেবী দুর্গার অভয় দানের রূপটিই মূর্তিতে ধরা হবে। সেই থেকে সিংহ, মহিষাসুরের বিদায়। তার বদলে দেবীর এক হাতে পদ্ম, অন্য হাতে বরাভয় মুদ্রা।

সিংহ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধি পুজোর আগে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হতো। তারপর আশপাশের পুজোয় শুরু হতো বলিদান। চার দিন ধরে দু’বেলা এলাকার মানুষ জমিদার বাড়িতে পাত পেড়ে খেতেন। সেই মহাভোজের জন্য কীর্ণাহারের হাটে আসা সমস্ত সামগ্রী কিনে নিতেন সিংহ পরিবার। তবে সে সব আজ ইতিহাস। তোপ বন্ধ। পঙ্‌ক্তি ভোজ হয় একবেলা, নবমীর দিন। সিংহ পরিবারের সদস্য অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে আমরা ২৪তম বংশধর আজও দেবী দুর্গাকে অভয়া রূপে পুজো করে আসছি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *