Bomb Threat On Flight,কড়া সাজা নেই, তাই ছেলেখেলা বোমাতঙ্কে? – why are such fake bomb threat on flight calls or messages coming


সুনন্দ ঘোষ
‘আজ পর্যন্ত একটাও কল বা মেসেজ কি সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে’ — প্রশ্নটা ছিটকে এল কলকাতা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক অফিসারের কাছ থেকে। তাঁর কথায়, ‘এত যে ভুয়ো কল বা মেসেজ এসেছে, আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি, একটি ক্ষেত্রেও বোমা পাওয়া যায়নি।’ তবে তাঁর দাবি, এই তল্লাশি চালাতে গিয়ে হেনস্থা হতে হচ্ছে যাত্রীদের। অযথা তাঁদের সময় নষ্ট হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে উড়ান সংস্থাগুলির।ওই অফিসারের দাবি, আসলে এই ধরনের কল বা মেসেজ যাঁরা করছেন, ধরা পড়ার পরে তাঁরা সহজেই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। কড়া কোনও শাস্তির সংস্থান করা গেলে এই ধরনের ‘ছেলেখেলা’ কমবে। দেশের সমস্ত বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যুরো অফ সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি (বিসিএএস)-এর ডিরেক্টর জেনারেল জুলফিকার হাসানের কথায়, ‘এরকম ভুয়ো কল বা মেসেজ করে কেউ ধরা পড়লে তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য ফ্লাইং থেকে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’ যার অর্থ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পাঁচ বছর দেশের ভিতরে কোনও অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক উড়ানে উঠতেই পারবেন না।

এত বোমাতঙ্ক কল বা মেসেজের পিছনে সম্ভাব্য কারণ


প্রশ্ন উঠছে, কেন এত ঘনঘন এই ধরনের ভুয়ো বোমাতঙ্কের কল বা মেসেজ আসছে?
কলকাতা বিমানবন্দরের প্রাক্তন ডিরেক্টর, বিমান পরিবহণের বিশেষজ্ঞ কৌশিক ভট্টাচার্য যেমন মনে করেন, নিছক মজা করতেই এটা টেক-স্যাভি টিনএজারদের ‘দুষ্টুমি’। তাঁর কথায়, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন এরা খুব অ্যাক্টিভ। অনেকেই ফ্লাইট ট্র্যাকার ফলো করে। হয়তো দেখবেন একসঙ্গে অনেকে বসে আড্ডা মারার সময়ে, ফ্লাইট ট্র্যাকার থেকে কোনও ফ্লাইট নম্বর তুলে মেসেজ ছেড়ে দিল যে ওই ফ্লাইটে বোমা রাখা আছে। তারপর হয়তো নিজেরাই ফ্লাইট ট্র্যাকারে দেখবে যে সেই ফ্লাইটটা ডাইভার্ট করছে কি না।’ অনেকে একে ‘স্যাডিস্টিক প্লেজ়ার’-ও বলছেন।

যদিও এই ধরনের ভুয়ো কল বা মেসেজের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর অভিযোগ এনেছেন অন্য এক বিশেষজ্ঞ। নাম-প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশেষজ্ঞের যুক্তি, ‘নিছক মজা করে চারদিনে ২৫টি কল! মনে হচ্ছে না। একটি বড় সংখ্যক মানুষের ক্ষোভের কারণে এটা হতে পারে। সেই ক্ষোভটা কোনও এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে। যাঁরা কল করছেন বা মেসেজ পাঠাচ্ছেন, তাঁরা এয়ারলাইন্স সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জানেন।’ এই বিশেষজ্ঞর দাবি, এখন এয়ার ইন্ডিয়ার মার্জার বা সংযুক্তিকরণ হচ্ছে। অনেকগুলো এয়ারলাইন্স একটি ছাতার তলায় আসছে। এ সব ক্ষেত্রে অনেকের চাকরি চলে যায়। অনেকে পছন্দ মতো পদ, ক্ষমতা পান না। ক্ষোভের জায়গাটা সেখানেও থাকতে পারে।

ফ্লাইট দেরি করাতেই আসত বোমার থ্রেট

বিমান পরিবহণে বিশেষজ্ঞ সুদীপ্ত চন্দ্র অবশ্য বলছেন, ‘ভুয়ো কল বা মেসেজ করে উড়ান দেরি করানোর পিছনে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার বিষয়টি থাকতেই পারে। তা ছাড়া মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন, এমন ব্যক্তির পক্ষেও এমন কল বা মেসেজ করা সম্ভব।’ উঠে আসছে আরও কারণ। বিমান পরিবহণে বিশেষজ্ঞ আর্য ঘোষের মতে, ‘হতেই তো পারে, এই ধরনের মেসেজ বা কল করে একটি দিকে নিরাপত্তা-কর্তাদের মনোনিবেশ সরিয়ে অন্য কোনও দিক থেকে আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিজ্জর খুন নিয়ে সম্প্রতি ক্যানাডার সঙ্গে ভারতের যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে, সেই প্রেক্ষিতে ভারতের উড়ান সংস্থাগুলিকে আক্রমণের নিশানা বানানো হচ্ছে না তো?’

১৯৮৫-তে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান কণিষ্ক-তে বোমা রেখে তাকে মাঝ আকাশে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার পিছনে খলিস্তানি জঙ্গিদের যোগের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন আর্য।

জুলফিকারের কথায়, ‘আগে থেকে এত স্পেকুলেশন করাটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। দেখাই যাক না। যাঁরা ফোন বা মেসেজ করেছেন, তাঁদের ধরা পড়াটা সময়ের অপেক্ষা। তখনই বেরিয়ে আসবে আসল কারণ।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *