জাস্টিসের খোঁজে মেমারি টু ধর্মতলা হুইল চেয়ারে – bardhaman 72 year old woman kohinoor sheikh come in doctor protest rides on a wheelchair


জাতীয় সড়ক ধরে বর্ধমানের মেমারি থেকে কলকাতার ধর্মতলায় আসতে প্রায় ৯০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। যানজট এড়িয়ে প্রাইভেট গাড়িতে সেই পথ শেষ করতে তা-ও ঘণ্টা তিন-চারেক সময় লাগার কথা। ছেলেকে সঙ্গী করে হুইল চেয়ারে চড়ে সেই পথ পাড়ি দেওয়ার পণ করেন বছর বাহাত্তরের বৃদ্ধা কোহিনুর শেখ। সিঙ্গুরের কাছে পৌঁছতে পথ আটকান পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা জানতে চান, ‘কেন এ ভাবে রোদে-জলে যেতে চাইছেন?’ বৃদ্ধা ছলছল চোখে তাঁদের বলেন, ‘আরজি করের তরুণীর খুনের প্রতিবাদে ধর্মতলার অনশন মঞ্চে যোগ দিতে যাচ্ছি। এক সময়ে আমার পরিবারও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।’কোহিনুরের কথায় থমকে যান প্রশাসনিক কর্তারাও। সাময়িক বাধা কাটিয়ে বৃদ্ধা পৌঁছেও যান জুনিয়র ডাক্তারদের সেই অনশন মঞ্চে। দশ দফা দাবি নিয়ে ডাক্তাররা যে আন্দোলন করছেন, তার মীমাংসা দেখে তবেই বর্ধমানমুখী হতে চান তিনি। আজ, সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিকেল পাঁচটায় বৈঠকে বসতে চলেছেন আন্দোলনকারীরা। কোহিনুরের আশা, ‘এই বৈঠক থেকেই সমাধনসূত্র মিলবে। না হলে যতদিন ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থাকবে, আমি এখানেই থাকব।’

ধর্মতলায় অনশন মঞ্চে গেলেই দেখা যায়, খুদে থেকে বয়স্ক– ডাক্তারদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ‘প্রতিবাদ’ খাতায় রোজই সই পড়ছে অনেকের। মেমারি ১ ব্লকের দেবীপুর পঞ্চায়েতের হিতমপুর গ্রামের বাসিন্দা কোহিনুরও সেই দলে। ধর্মতলায় পৌঁছনোর পর ২ দিন অনশনও শুরু করেছিলেন, তবে ডাক্তারদের অনুরোধে অনশন প্রত্যাহার করেন। তবে মঞ্চ ছেড়ে যাননি।

কোহিনুরের অভিযোগ, গ্রামের রাজনীতির শিকার হয়েছে তাঁর পরিবার। স্বামী বেঁচে থাকতে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এখন আর এক মেয়ের বিয়ে ঠিক হলেও স্থানীয় কয়েকজনের হুজ্জুতিতে সেটা হচ্ছে না। কেড়ে নেওয়া হয়েছে রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও। ফলে সরকারি সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। মেয়ের বিয়ের জন্য ১১ বিঘা জমিও বিক্রি করতে পারছেন না, দাবি কোহিনুরের।

Junior Doctors Protest: জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াতে অনশন মঞ্চে ৭০-ঊর্ধ্ব বৃদ্ধা

তাঁর ছেলে জীবন শেখ বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে এ ভাবেই ভাতে মারার চেষ্টা হচ্ছে। বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে ওই জমি আমাদের থাকলেও, বোনের বিয়ের সময়ে ভূমি দফতরে গিয়ে জানতে পারি, জমির কোনও রেকর্ড সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না। তা যদি আমাদের না হয়, অন্য কারও। তা হলে সেই রেকর্ড কোথায়? এ ভাবেই গ্রামের মানুষ স্থানীয় নেতাদের রাজনীতির শিকার হচ্ছেন।’

হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্রে নেতাজি মূর্তির সামনে জেলাশাসকের কার্যালয় চত্বরে লাগাতার প্রতিবাদ অবস্থানে বসেছিলেন কোহিনুর। কলকাতার আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের খুনের ঘটনার পর প্রতিবাদের জোয়ার দেখে তিনি ঠিক করেন, কলকাতায় যাবেন। ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়াবেন। এবং হুইল চেয়ারে করেই তিনি কলকাতা যাবেন। বৃদ্ধার কথায়, ‘গ্রাম হোক বা শহর, মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত। নির্যাতিতা বিচার পাক। গ্রামের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *