Sundarban Forest,নোনামাটিতে রঙিন স্বপ্ন দেখাচ্ছে সুন্দরিণী – west bengal government self help project sundarini shows the hope in sundarbans


এই সময়, সুন্দরবন: বাদাবনের নোনাজলে বিষ। সারা বছর ফসল ফলে না এখানে। বর্ষাকালে ধান চাষ আর নদী ও খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহই ভরসা সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের। সেই কাজে গিয়ে বাঘের হানায় মৃত্যু ও জখম হওয়ার ঘটনাও ঘটে আকছার। তার উপর রয়েছে বছরভর ঘূর্ণিঝড়ের থাপ্পড়। ভয়াবহ দারিদ্র, পাচারের সুন্দরবনে গত ৯ বছর ধরে নতুন রঙের আলপনা দিচ্ছে সুন্দরিণী। নোনা মাটিতে বাঘ বিধবাদের গ্রামের সাদাকালো ক্যানভাসে রং ভরেছে রাজ্য সরকারের এই স্বনির্ভর প্রকল্প।সুন্দরবনে মহিলাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের অঙ্গ হিসেবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ২০১৫ সালে চালু করেছিল সুন্দরিণী প্রকল্প। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুজরাটের সমবায় ভিত্তিক দুধ উৎপাদনের ধারণাকে মাথায় রেখেই কৃষি নির্ভর পরিবারে গোরুর দুধ বিক্রি করার জন্যই এই প্রকল্পের ভাবনা। সুন্দরবনের ৯টি ব্লক, বাসন্তী, গোসাবা, কুলতলি, জয়নগর-২, মথুরাপুর-১, কুলপি, পাথরপ্রতিমা, নামখানা ও কাকদ্বীপে তৈরি করা হয়েছিল ৭০টি মহিলা দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতি। তাদের মাধ্যমেই শুরু হয় সরকারি পর্যায়ে দুধ কেনার কাজ।

ইতিমধ্যেই সুন্দরিণী প্রকল্পে সরাসরি ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছেন গ্রামগঞ্জের প্রায় পাঁচ হাজার মহিলা। উচ্চ গুণমানসম্পন্ন দুধ উৎপাদন করার জন্য মহিলাদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। আগে গ্রামেগঞ্জে গোরুর দুধ লিটার প্রতি ১৫-১৬ টাকায় কিনে নিয়ে যেত গোয়ালারা। অনেক সময় সেই দুধ বিক্রি করার সুযোগও মিলত না। বর্তমানে সুন্দরিণী প্রকল্পের মাধ্যমেই নিকটবর্তী দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতিগুলিকে সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরের আর্থিক সহায়তায় দুধ ঠান্ডা রাখার মেশিন দেওয়া হয়েছে।

সেই সমস্ত সমিতিতেই প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ৭.৪৫ পর্যন্ত মহিলারা সরাসরি দুধ বিক্রি করতে পারেন। সেই দুধ বিক্রি হয় লিটার প্রতি গড়ে ৩৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। প্রতি পাঁচ দিন অন্তর সেই দুধ বিক্রির টাকা সরাসরি মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়। জেলার সমস্ত দুধ পরে ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় চৌবাগায় সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরের সহায়তায় তৈরি সুন্দরিণীর সুইট প্লান্টে।

তবে সুন্দরিণীর গতি শুধুমাত্র দুধে সীমাবদ্ধ নেই। চাল, ডাল, ভোজ্য তেলও উৎপাদন করা হচ্ছে এই প্রকল্পে। মথুরাপুর-১ ব্লকের কৃষক বাজারে সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরের আর্থিক সহায়তায় এক বছর আগে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ প্লান্ট। দুধের পাশাপাশি সেখানে কৃষকদের কাছ থেকে ধান, তৈলবীজ কিনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ধানের খোসা, তুষ, ডালের খোসা ও তৈলবীজের খোল থেকে তৈরি হয় গোখাদ্য ও জৈব সার।

বাসন্তী ব্লকে মোট ৯টি মহিলা পরিচালিত দুগ্ধ সমবায় রয়েছে। তার মধ্যে নফরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই রয়েছে চারটি। জ্যোতিষপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে তিনটি। মসজিদবাটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও বাসন্তী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে একটি সমিতি। চৌরঙ্গি মহিলা দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতির সভানেত্রী সুপর্ণা দেবশর্মা বলেন, ‘আমার দুটো গোরু। রোজ সকাল ও বিকেলে মোট আট লিটার দুধ পাই। ওই টাকাতেই আমার সংসার ভালোভাবে চলছে।’

এখন সুপর্ণার মতো এই এলাকার ১৩৩ জন মহিলা চৌরঙ্গি সমিতির মাধ্যমেই দুধ বিক্রি করছেন। সুন্দরিণীর বায়ো গ্যাস প্লান্টে গোরুর গোবর থেকে তৈরি হচ্ছে বায়ো গ্যাস। সেই গ্যাস রান্নার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বাসন্তী ব্লকের মসজিদবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের গদখালি মহিলা দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতির অর্পিতা মণ্ডল বলেন, ‘সুন্দরিণীর জন্যই আজকে সুন্দরবনের মেয়েরা আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হচ্ছে।’

সুন্দরিণী প্রকল্পের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অম্বিকা প্রসাদ মিশ্র বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকেই সুন্দরিণী প্রকল্পে মহিলাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এই মডেল দেশে একটা দৃষ্টান্ত। আগামী দিনে এই প্রকল্পে আরও মহিলারা যুক্ত হবেন।’ জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘সুন্দরিণী এখন একটা ব্র্যান্ড। যা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *