Calcutta High Court,জন্মদাত্রীর খোঁজে হাল ছাড়তে নারাজ, হাইকোর্টের দ্বারস্থ পূজা – sweden woman pooja marie naslund in calcutta high court to search his birth mother


সুনন্দ ঘোষ
‘জন্মরাত্রে ফেলে গেছো মোরে ধরাতলে, নামহীন, গৃহহীন……..’ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাক্কালে অভিমানী কর্ণের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়েছিল সূর্য-ডোবা জাহ্নবীর তীরে। জন্মদাত্রী কুন্তীর কাছে আর ফেরা হয়নি তাঁর।এক বুক অভিমান নিয়ে সুইৎজ়ারল্যান্ডের ফ্যাবিয়ান রিকলিনও খুঁজে বেড়িয়েছেন তাঁর জন্মদাত্রীকে। এ শহরে তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়ে আঁতিপাতি খুঁজেও পাননি তাঁর কুন্তীর হদিস। যে সংস্থা থেকে তাঁর পালক বাবা-মা তাঁকে দত্তক নিয়ে বিদেশ চলে গিয়েছিলেন, সেই সংস্থা থেকে জন্মদাত্রী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাননি তিনি। শেষে কড়া নেড়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের দরজায়। কিন্তু, সিঙ্গল বেঞ্চ ফ্যাবিয়ানকে জানিয়ে দিয়েছে, জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজ নেওয়ার অধিকার তাঁর থাকলেও সেই মায়েরও নিজেকে আড়ালে রাখার অধিকার রয়েছে। অভিমানী ফ্যাবিয়ান জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এ নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যেতে চান না। জন্মদাত্রী মা-কে খুঁজে না-পাওয়ার যন্ত্রণা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন তিনি।

কিন্তু, হার মানতে চাইছেন না পুজা। ফ্যাবিয়ানের মামলাটাকে সামনে রেখে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। পুরো নাম পুজা মারিয়া নাসলুন্ড। থাকেন সুইডেনে। ৩৯ বছর আগে এই শহর থেকেই তাঁকে দত্তক নিয়ে চলে যান নাসলুন্ড দম্পতি। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে থেকে তিনিও শুরু করেন নাড়ির খোঁজ। কিন্তু, যে সংস্থা থেকে তাঁকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল, সেই সংস্থা, স্টেট অ্যাডপশন রিসোর্স এজেন্সি (কারা) এবং পশ্চিমবঙ্গের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও লাভ হয়নি।

এই সেপ্টেম্বরে প্রতিবাদী শহরে এসে পুজার হয়ে আবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন অঞ্জলি পাওয়ার। অঞ্জলি নিজে আইনজীবী এবং দত্তক বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেন। আদতে পুণের বাসিন্দা। ফ্যাবিয়ানের মামলাও তিনি করেছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট যখন খালি হাতে ফ্যাবিয়ানকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, তখন অঞ্জলি বলেছিলেন, ‘এই রায়ে রুট-সার্চ অনেকটাই ধাক্কা খাবে।’ আর পুজার কেস ফাইল করার পরে অঞ্জলি বলছেন, ‘কেন হেরে যাব? নিজের জন্মদাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভারডিক্টও আছে। ফ্যাবিয়ানের কেস আমরা ডিভিশন বেঞ্চে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ফ্যাবিয়ান চাননি। পুজা কিন্তু লড়াইটা চালিয়ে যেতে চান।’

আদতে, পরিস্থিতির চাপে, অনেক সময় লোকলজ্জার ভয়ে গর্ভে ধারণ করা সন্তানকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন মা। সেই সদ্যোজাতর ঠাঁই হয় হোমে। দত্তক বাবা-মায়ের হাত ধরে ঠিকানা পাল্টায়। বদলে যায় জীবনের ছবি। এ ভাবে কলকাতা শহর থেকে অসংখ্য সদ্যোজাতককে দত্তক নিয়ে গত কয়েক দশকে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার বহু দম্পতি। একটা বয়সের পরে বড় হয়ে ওঠা সেই সব ‘পরিত্যক্ত’ সন্তানদের অনেকেই খোঁজ করতে শুরু করেন জন্মদাত্রীর।

বেশ কয়েক বছর আগে প্রথম জন্মদাত্রীর খোঁজ করতে দেখা যায় সোনা মুথুলিঙ্গমকে। ওই সুইস যুবতী মায়ের খোঁজ করতে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন অঞ্জলিকে। নিজেকে সোনা-র মা বলে দাবিও করেছিলেন কলকাতার উপান্তে থাকা এক মহিলা। দু’জনেরই সময়কাল ও ঘটনাক্রম মিলে গেলেও ডিএনএ মেলেনি। সোনার খোঁজ আজও তাই শেষ হয়নি। আবার এই কলকাতার বুকেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছে স্পেনের প্রিয়া ইরেন ক্যাবালেরো লোপেজ়-এর মা-কে। মিলে গিয়েছে ডিএনএ। এই এপ্রিলেই শহরে উড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ভাসিয়েছেন প্রিয়া।

তাই হাল ছাড়তে নারাজ পুজা। এ শহর থেকে প্রায় ৬৭০০ কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসে তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠ, ‘প্রিয়া তো তাঁর মা-কে পেয়েছে। আমি কেন পাব না? ফ্যাবিয়ানের কেস শুনেছি। নেগেটিভটা কেন ভাবব? আমি লড়ে যাব। বলা তো যায় না, আপনার শহরেরই কোনও এক গলি-তস্য গলির এক কোনায় হয়তো আমারই অপেক্ষায় দিন গুনছেন আমার জন্মদাত্রী মা?



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *