Durgapur Mission Hospital,বিরল চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুমূর্ষুকে বাঁচাল মিশন হাসপাতাল – durgapur mission hospital doctors set an example to save a patient life


এই সময়: মস্তিষ্ক ও পেটের জটিল প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল একযোগে। চিকিৎসকদের কাছে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ ছিল রোগীকে বাঁচানো। কলকাতা থেকে প্রায় পৌনে দু’শো কিলোমিটার দূরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের একদল চিকিৎসকের মিলিত প্রয়াস অবশেষে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।ভেন্ট্রিকুলাইটিস কিংবা কমপ্লিকেটেড হাইড্রোসেফালাস অথবা বাইল লিকেজ। প্রতিটি অসুখই বেশির ভাগ সময়ে হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী। আর যদি এক সঙ্গে তিনটি সমস্যাই দেখা যায় কোনও রোগীর শরীরে? চিকিৎসকেরা বলছেন, তখন ২% বাঁচার আশাও থাকে না। এই তিনটি অসুখেরই শিকার হয়েছিলেন রাঁচির বাসিন্দা মধ্য-চল্লিশের বিনীতা কুমারী (নাম পরিবর্তিত)। বাড়ির লোকও এক সময়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ধাপে-ধাপে ঝুঁকি কমিয়ে সেই মরণাপন্নকেই সম্প্রতি নবজীবন দিয়েছেন দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। কলকাতার বাইরে এমন নজির মনে করতে পারছে না স্বাস্থ্য মহল।

যে স্নায়ু-শল্য চিকিৎসকের হাতযশে নতুন জীবন পেলেন বিনীতা, সেই সত্যজিৎ দাস বলেন, ‘শুধু নিউরোসার্জারিই নয়, গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজি এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমান ভূমিকা রয়েছে ওই বধূকে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনার নেপথ্যে।’ তিনি জানাচ্ছেন, প্রথমে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অক্ষয়কুমার দাস ওই রোগিণীকে স্থিতিশীল না করতে পারলে ঝুঁকি নিয়ে একের পর এক প্রসিডিয়োর করা মুশকিল ছিল। পেটের সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজিস্ট অর্ণব দে। আর পরিশেষে মস্তিষ্কের প্রাণঘাতী পরিস্থিতি নির্মূল করায় নিউরোসার্জারিতে সত্যজিতকে সঙ্গত করেছেন স্নায়ু-শল্য চিকিৎসক গোপীকৃষ্ণ কুরসা।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিনীতার মাথায় জল জমে যাওয়ার সমস্যা (হাইড্রোসেফালাস) ছিল বলে ২০০৩-এ তাঁর মস্তিষ্কে অপারেশন করে ‘শান্ট’ বসানো হয়েছিল। মস্তিষ্কের ভিতরে প্রায় কেন্দ্রস্থলে থাকা ভেন্ট্রিকল থেকে তৈরি হয় সুষুম্নারস বা সেরিব্রো-স্পাইনল ফ্লুইড। স্বাভাবিক অবস্থায় এই রস ভেন্ট্রিকল থেকে সরবরাহ হওয়ার কথা সুষুম্নাকাণ্ড বা স্পাইনাল কর্ডে।

কিন্তু গঠনগত ত্রুটিতে বিনীতার ভেন্ট্রিকলে তৈরি হওয়া রস মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে জটিল হাইড্রোসেফালাসের জন্ম দিয়েছিল। সেই সমস্যার মোকাবিলায় লাগানো হয় শান্ট যা বস্তুত এমন একটি টিউব যার মাধ্যমে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়া রস পেটের মধ্যে এসে পড়ে এবং শরীরে শোষিত হয়ে যায় স্বাভাবিক নিয়মে। এই চিকিৎসায় গত জুলাই পর্যন্ত সুস্থই ছিলেন বিনীতা।

গোল বাঁধে অগস্টে যখন রাঁচির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর গলব্লাডার অপারেশন হয়। অস্ত্রোপচারে ত্রুটির কারণে বিনীতার পিত্তনালী ফুটো হয়ে গিয়ে পিত্তরস বেরিয়ে আসতে (বাইল লিকেজ) থাকে। তৈরি হয় প্রাণঘাতী সংক্রমণ। সিউডোমোনাস ব্যাক্টেরিয়ার সেই ভয়াবহ সংক্রমণ শান্ট বেয়ে ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকলে (ভেন্ট্রিকুলাইটিস)।

মিশনের কর্ণধার সত্যজিৎ বসু বলেন, ‘মাসখানেকের ছকভাঙা চিকিৎসায় ওই রোগিণীকে অবশেষে মৃত্যুর শীতল হাতছানি থেকে জীবনের উষ্ণ আবর্তে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয় আমাদের চিকিৎসক দল।’ তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার দু’মাসের মাথায় বুধবার মিশনের আউটডোরে চেক-আপে এসেছিলেন বিনীতা। আপাতত তিনি সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *