বস্তুত, এই অনিশ্চয়তার পাশাপাশি ভবন সংক্রান্ত বেশ কিছু পরিকল্পনাও রাতারাতি বাতিল করেছে বিশ্বভারতী। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, নাটকের ফেস্টিভ্যাল ইত্যাদি। অগস্টেরই শেষ দিকে শ্যাম বেনেগালের ‘মুজিব, দ্য মেকিং অফ নেশন’ নামে বায়োপিকটি দেখানোর ভাবনা ছিল৷ কিন্তু তা-ও বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়।
হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পড়শি দেশেরই ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বভারতীর ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় সংহতি কেন্দ্রের মাঠে ৪০ হাজার বর্গফুট এলাকায় ওই ভবনটি তৈরি হয়েছিল। ’৭১-এর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বহু তথ্য, নথি ও নিদর্শন রয়েছে সেখানে। গত ১৫ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বৃহৎ ভাস্কর্যও বিশ্বভারতীকে দিয়েছিল হাসিনা সরকার৷ সেটিও রাখা সংগ্রহশালায়।
ভবনটির নকশা তৈরি করেছিলেন মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনাই। উদ্বোধনের পরে তা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। চুক্তি ছিল, টাকাটা ফিক্সড ডিপোজ়িট করে তার সুদে ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ হবে৷ এই দায়িত্ব বিশ্বভারতীরই।
বঙ্গবন্ধু, নজরুলের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথেরও বেশ কিছু স্মৃতি রয়েছে বাংলাদেশ ভবনে। বস্তুত, ভবনের সংগ্রহশালায় এমন সব সামগ্রীর সমাহার রয়েছে, যা ওই ছোট্ট চত্বরকে যেন এক টুকরো বাংলাদেশই করে তুলেছে। দুই বাংলার সম্পর্কের ইতিহাস, মুজিবুরের ছবি ও জীবনী ছাড়াও কাজী নজরুল ইসলামের রচনার সম্ভার রয়েছে ওই মিউজ়িয়ামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশে থাকার সময়ে কুঠি বাড়িতে থাকা জিনিসপত্রের পাশাপাশি তাঁর পাওয়া বহু মূল্যবান উপহারও সযত্নে সংরক্ষিত।
ভবনে সংগ্রহশালা ছাড়াও রয়েছে গ্রন্থাগার, সভাকক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ। দুই বাংলার ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণারও বন্দোবস্ত রয়েছে বাংলাদেশ ভবনে৷ ও পার বাংলার বহু পড়ুয়া বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করতে আসেন। বর্তমানে সেখানে এপার বাংলার ৩৫ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছেন৷
তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও নানা দ্রষ্টব্যের সঙ্গে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ এই ভবন। বহু পর্যটক শান্তিনিকেতনে পৌঁছে তা দেখতে চান। মহানগরের মহাশ্বেতা চক্রবর্তী, তনুশ্রী মল্লিকরা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘শান্তিনিকেতনে আগেও এসেছি। এ বার ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশ ভবনের মিউজ়িয়াম দেখার। কাজী নজরুলের বেশ কিছু গানের পাণ্ডুলিপি সেখানে সংরক্ষিত বলে শুনেছি। কিন্তু ওটা তো বন্ধ। কবে খুলবে, সে কথা কেউ বলতে পারছেন না।’