রাজন্যার বাবা ইন্দ্রজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, স্ত্রীর মানসিক সমস্যা রয়েছে। তিনি স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। নিয়মিত ওষুধও খেতে হয় তাঁকে। পুলিশের কাছে ইন্দ্রজিৎ জানিয়েছেন, রাতে পাশের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন তিনি। মা ও মেয়ে এক ঘরে ঘুমিয়েছিল। শুক্রবার টানা বৃষ্টির জন্য ইন্দ্রজিৎ অফিসে যাননি। ইন্দ্রজিতের দাবি, স্ত্রীর মানসিক সমস্যা থাকায় মাঝেমধ্যেই দেরিতে ঘুম থেকে উঠতেন। তবে শুক্রবার দুপুর গড়িয়ে গেলেও কোনও সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না তিনি।
কয়েকবার ডাকাডাকি করেও উত্তর মেলেনি। এরপরেই টিটাগড় থানায় খবর দেন তিনি। পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে দেখে, বিছানায় শুয়ে মেয়ে। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অবাক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মা। পুলিশের অনুমান, মেয়ের মৃতদেহের পাশেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা নীরবে কাটিয়েছেন তিনি। ইন্দ্রজিৎ দেখেন মেয়ে অচৈতন্য অবস্থায় বিছানায় পড়ে। রাজন্যাকে ব্যারাকপুরের বিএন বসু হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশকে জেরায় কবিতা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোরের দিকেই ঘুমের মধ্যেই মেয়েকে গলা টিপে খুন করেছেন তিনি। পুলিশের এক কর্তা জানান, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে মা, বাবা ও মেয়ে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, কবিতা যেহেতু স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত, তাই বোধহয় ভেবেছিলেন মৃত্যুই মেয়েকে সব রকমের কষ্ট ও সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। তার জন্যই এই চরম সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘মৃতের মায়ের মানসিক সমস্যা ছিল। নিয়মিত ওষুধও খেতেন। মানসিক অবস্থার জন্যই এই অঘটন ঘটিয়ে থাকতে পারেন। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদেরও মতামত নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় মা গলা টিপে খুন করেছেন।’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়া একটা মানসিক অসুস্থতা। এই রোগীদের বাস্তবের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ থাকে না। তাঁরা যেটা ভাবেন, সেটাই ঠিক মনে করেন। স্বাভাবিক, সুস্থ চেতনার মানুষ যা ভাবে না, স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা সেটাই ভাবতে শুরু করেন। তার ভিত্তিতে এমন কিছু কাজ করেন, তাতে প্রিয়জনের ক্ষতি হয়। মারাত্মক অসুস্থতার জন্যই ওই মহিলা এই কাজ করেছেন।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দ্রজিৎরা আগে শ্যামনগরে থাকতেন। স্বামী-স্ত্রী ও মেয়ের সম্পর্কও বেশ ভালো ছিল। এক বছর আগে ব্যারাকপুর আনন্দপুরী ডি রোডে বাড়ি কিনে ওই পরিবার থাকতে শুরু করে। এলাকার বাসিন্দা দীনবন্ধু ভট্টাচার্য বলেন, ‘পাড়ায় কারও সঙ্গে ওই পরিবার সে ভাবে মিশত না। তবে মেয়েটা খুব ভালো ছিল।’
হঠাৎ অচেতনে… স্কিৎজোফ্রেনিয়া কী? এটি একটি মানসিক অসুস্থতা। আক্রান্ত রোগীদের বাস্তবের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাঁরা যা ঠিক মনে করেন, সেটাই করেন। লক্ষণ কী কী? নিজের মনে কথা বলে চলা, হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়া, বিশৃঙ্খল চিন্তাভাবনা করা। চিকিৎসা কোন পথে? নিয়মিত ওষুধে এই রোগীরা সেরে উঠতে পারেন। বাড়ির লোককে রোগীকে বুঝতে হবে, সময় দিতে হবে, নিয়মিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।