একই ভাবে ঝড়ের দাপট সেই অর্থে না থাকার কারণেই কুলতলিতে ভয়ঙ্কর মাতলা নদী কিংবা ঝড়খালির লাগোয়া হেড়োভাঙা নদী বিপজ্জনক হয়ে ওঠেনি। বাসন্তীর বিদ্যানদী ও হোগলনদী কিংবা গোসাবার গোমর, কাপুরা, শার্শা নদীর জলও কোনও ভাবে বাঁধের মাথায় পৌঁছতে পারেনি। এর ফলে ভাঙেনি কোনও নদীবাঁধ। তাতেই এ বারের মতো রক্ষা পেয়েছেন সুন্দরবনবাসী। যাঁরা ২৪ ঘণ্টা আগেও দুশ্চিন্তায় রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি, শুক্রবার বেলা শেষে তাঁদের মুখেই হাসি ফুটেছে।
বাঁধের ভাঙন না ধরায় যারপরনাই খুশি সেচ দপ্তরের আধিকারিক থেকে কর্মীরা। মূলত যারা ক’দিন ধরে নিরলস ভাবে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে বেহাল নদীবাঁধ মেরামতের কাজ করে গিয়েছেন। গোসাবার সেচ দপ্তরের এসডিও শুভদীপ দালাল বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমরা দুর্বল ও ভঙ্গুর নদীবাঁধগুলিকে চিহ্নিত করে দ্রুত মেরামত করেছি। তার উপর মরা কটাল হওয়ায় নদীর জল বাঁধের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছতে পারেনি। যে কারণে নদীবাঁধে ভাঙন কিংবা ধসের মতো ঘটনা ঘটেনি। তাই কোথাও নদীর জল গ্রামে ঢুকতে পারেনি।’
প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘সুন্দরবনের বুকে আয়লাই সবথেকে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। সেবার ভরা কটাল ছিল। আর পুবের হাওয়ার সাঁড়াশি আক্রমণে গোটা সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার নদীবাঁধ ভেঙে, ধুয়ে-মুছে প্লাবিত হয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। এ বারও সেই সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র রক্ষা পেয়েছে মরা কোটাল আর পুবের হাওয়া না থাকায়।’
ভিটেমাটি রক্ষা পাওয়ায় তাই খুশি কুলতলি, বাসন্তী, গোসাবার উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজন। কুলতলি ব্লকের গোপালগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা আশুতোষ হালদার বলেন, ‘পরিবার নিয়ে খুব ভয়ে ছিলাম। আয়লা, উম্পুন, বুলবুলের সময়ে কম ক্ষয়ক্ষতি তো হয়নি আমাদের এই এলাকায়। যাই হোক এ বারের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যে আতঙ্ক আমাদের মধ্যে ছিল তা দূর হয়েছে। তবে আমাদের এখানকার নদীবাঁধ কংক্রিটের করা না গেলে ভবিষ্যতে বিপদে পড়তেই হবে।’ কুলতলি ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, শুক্রবারের দুর্যোগের ফলে ৫১টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।