বিধান সরকার: মঙ্গলবার থেকে আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট। তার আগেই দাম বেড়েছে আলুর, রোজই দাম বাড়ছেও আলুর। আজ, রবিবার বাজারে জ্যোতি আলু ৩৫ টাকা কিলো, চন্দ্রমুখী আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দামে রাশ টানতে সরকারি উদ্যোগের পর আলু ব্যবসায়ীরা ২৬ টাকা কিলো পাইকারি দরে বিক্রি করায় দাম সাময়িক ভাবে কিছুটা কমেছিল। আবার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেওয়ায় দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, বর্তমানে রাজ্যের হিমঘরগুলিতে প্রায় ৭ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত আছে। রাজ্যে ডিসেম্বর মাসে আলু খরচ হবে সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ মেট্রিক টন। বাড়তি তিন লক্ষ মেট্রিক টন ভিন রাজ্যে না গেলে ক্ষতি হবে ব্যবসায়ীদের। তাই তাঁরা চাইছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান। গত কয়েকদিন ধরে বিহার ঝাড়খণ্ড ওড়িশার বর্ডারগুলিতে আলুর ট্রাক আটকে দেওয়া হয়েছে। রফতানি বন্ধ রয়েছে। এর ফলে আলুর দাম বাড়ছে, বাড়বেও। আর সাধারণ ক্রেতাদের সমস্যা বাড়বে আলুর দাম বাড়লে।
অন্য বছর এই সময়ে নতুন আলো বাজারে আমদানি হয়, পুরনো আলুর চাহিদা কমে, দামও কিছুটা কমে। কিন্তু এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আলু চাষ পিছিয়ে যাওয়ায় বাজারে এখনও সেই ভাবে নতুন আলুর জোগান আসেনি। ফলে পুরনো আলুই দামি রয়ে গিয়েছে।
এদিকে ভিন রাজ্যে আলু রফতানি বন্ধ ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমানায়। আসানসোলের কুলটিতে জাতীয় সড়কের উপর ও রূপনারায়ণপুর, রুনাকুড়াঘাটের বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানার চেকপোস্টে আলুবোঝাই লরি আটকাচ্ছে পুলিস। লরিগুলিকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শনিবার রাতে ডুবুরডিহি চেকপোস্টে দুটি আলুর গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়েছে পুলিস। রবিবার সকালে গিয়ে দেখা গেল রীতিমতো ক্যাম্প করে আলুর গাড়ি আটকাছে পুলিস।
গতকালই জানা গিয়েছিল, আগামী মঙ্গলবার থেকে সারা রাজ্যে আলু সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও রাজ্য হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। অভিযোগ ছিল, ভিন রাজ্যে আলু রফতানির ক্ষেত্রে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই রাজ্যের সীমানায় আটকে দেওয়া হচ্ছে আলুবোঝাই গাড়ি। এই নিয়ে গত বৃহস্পতিবার এবং শনিবার তারকেশ্বরের পটেটো ব্যবসায়ী সমিতি ভবনে দুদফায় বৈঠক করে রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও রাজ্য হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। বৈঠক শেষে আগামী মঙ্গলবার থেকে হিমঘর থেকে আলু সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করার পরই গত ২৩ নভেম্বর কলকাতার বাজারে আলুর দামে রাশ টানতে হুগলির আলু ব্যবসায়ীদের নিয়ে হরিপালে বৈঠক করেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। বৈঠকে ঠিক হয়, ২৬ টাকা কেজি দরে হিমঘর থেকে আলু বিক্রি করবেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করলেও ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ, রাজ্যের সীমানায় আলুর গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে কোনো নির্দেশিকা ছাড়াই! এছাড়াও বেআইনি ভাবে জরিমানা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
চলতি সপ্তাহে এ নিয়ে দুবার বৈঠক করে রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও রাজ্য হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। শনিবার বৈঠকশেষে রাজ্যের প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভিন রাজ্যে আলু রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা না তোলা পর্যন্ত, আগামী মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের সমস্ত হিমঘর থেকে সারা রাজ্যে বন্ধ থাকবে আলু সরবরাহ। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এর ফলে আলুর জোগান কমবে, আবারও নতুন করে রাজ্যে বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)