জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আবেগের এক অপর নাম। যাঁর নাম শুনলে আজও মানুষের মনে শিহরন জাগে। দুই পরস্পর বিরোধী শত্রুও যাঁর কথাতে একইরকমভাবে রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে কিংবা দীর্ঘদিনের শত্রুতা, বাক্-বিতণ্ডা ভুলে একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরেন, তিনিই আমাদের নেতাজি। এককথায় তাঁকে নিয়ে বললে এই মরা জাতির জীবনের প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন তিনি। যাঁরা রোজ একটু একটু করে মরে যাচ্ছিলেন সবদিক দিয়ে, তাঁদের প্রাণে নতুন করে বাঁচার আসা জুগিয়েছিলেন তিনি। যাঁর একটা কথায় লক্ষ, কোটি মানুষ প্রাণ দিতে একবারও ভাববেননি, তিনিই আমাদের নেতাজি। ভারতের ইতিহাসে অসংখ্য নেতানেত্রী এলেও, নানা কর্মকান্ড করলেও, দ্বিতীয় কোন নেতাজির জন্ম আর কখনোই হবে না।
ভারতের এই দুঃসাহসিক বীর সন্তানের কার্যকলাপ দেখে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে তাঁর ছোটবেলায় তিনি আসলে কেমন ছিলেন? আমাদের ছেলেবেলার মতোই কী তাঁরও ছেলেবেলা কেটেছে মা-বাবার শাসনে? নাকি তিনি ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন ডাকাবুকো! তাঁর অতীত ঘাঁটলে জানা যায় তিনি আর চার পাঁচজন বাচ্চার মতোই ছিলেন অত্যন্ত সাধারণ। বিখ্যাত আইনজীবী জানকী নাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর কোল আলো করে ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি দুপুরের কোন এক প্রহরে কটক শহরে তাঁর জন্ম হয়। তিনি ছিলেন তাঁদের ষষ্ঠ সন্তান। বাবাকে খানিক ভয়ই পেতেন তিনি এবং তাঁর মাও কড়া শাসনে তাঁদের সন্তানদের মানুষ করেছিলেন। স্বামীজির বাণী তাঁর জীবনে প্রভাব ফেলেছিল অনেকটাই।
যখন গোটা পৃথিবী জুড়ে বাজছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রণদামামা তখন কীভাবে সুভাষ ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠছিল ক্রমাগত। কালঘাম ছুটেছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর। ভারতের স্বাধীনতা আসতে তখনও বছর পাঁচেক বাকি। ১৯৪২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রেডিও কাঁপিয়ে ভেসে এসেছিল একটা গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর। “দিস ইজ সুভাষ চন্দ্র বোস স্পিকিং টু ইউ ওভার আজাদ হিন্দ রেডিও”। সেই কণ্ঠস্বরেতেই গোটা দেশের মাটি উঠেছিল কেঁপে, তা আজ আর বলার বিন্দুমাত্র অপেক্ষা রাখে না। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”। তাঁর এই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন দেশের লাখো লাখো তরুণ যুবকসমাজ। চোখে তখন সকলের একটাই স্বপ্ন, ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভ। একবার তিনি নিজেই জাতপাতের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন। আগামী ২৩ জানুয়ারি এমনই এক রাষ্ট্রনায়কের ১২৮তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হবে।
আরও পড়ুন: Bally Bridge: আজ রাত থেকে ৪ দিন বন্ধ বালি ব্রিজের একাংশ, কোন পথে চলবে যান চলাচল!
১৯১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর অস্ট্রিয়ার ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম হয়েছিল এমিলির। এমিলি এবং সুভাষের মধ্যে একজন বন্ধু ছিলেন, যিনি এই দুজনকেই খুব ভালো ভাবে চিনতেন। তিনি হলেন ভিয়েনায় বসবাসকারী ভারতীয় পদার্থবিদ ডক্টর মাথুর। সেইসময় সুভাষচন্দ্র বসু বই লিখছিলেন। সেকারণে তাঁর একজন সেক্রেটারি দরকার ছিল যাঁর ইংরেজি ভাষার উপরে যথেষ্ট দক্ষতা থাকবে এবং তাঁর কথা শুনে শুনে লিখতেও পারবেন। এমিলি শর্টহ্যান্ডে খুব ভালো লিখতে পারতেন এবং টাইপিংয়েও পারদর্শী ছিলেন, সেইকারণেই এমিলিকে মাথুর সাহেব সুভাষের কাছে নুয়ে এসেছিলেন এবং এইভাবেই হয়েছিল তাঁদের প্রথম পরিচয় যা পরবর্তীতে প্রেম ও বিয়ে।
অনেকের মতে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি প্রাণ হারান। পরবর্তীতে লখনৌতে গুমনামী বাবার ছদ্মবেশ ধরে স্বাধীনতার পরেও বহুবছর ভারতে কাটিয়েছিলেন। এক ফরাসী ঐতিহাসিকের গবেষণায় উঠে আসা এক তথ্য থেকে জানা যায় তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি প্রাণ হারাননি। এই ঘোষনায় বিস্তর বিতর্কের ঝড় বইতে শুরু করে সারা দেশ জুড়ে। কেউ কেউ মনে করেন তিনি দুর্ঘটনার সময় রাশিয়াতে চলে যান এবং পরে আবার ভারতে ফিরে আসান তিনি। ১৯৮৫ সালে মৃত্যু হয় গুমনামী বাবার। তাঁর লেখা শেষ কয়েকটা চিঠির সঙ্গে নেতাজির হাতের লেখার হুবহু মিল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: Kolkata: রতন টাটাকে মনে রেখে কলকাতায় ভিড় জমাল সারমেয়রা!
উত্তর কলকাতার লক্ষী নারায়ণ সাউ তেলেভাজার দোকানে আজও নেতাজির জন্মদিনের দিন বিনা পয়সায় তেলেভাজা বিলি করেন তাঁরা। শোনা যায়, খেঁদু সাউও ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের এক শরিক। ১৯৪১ সালে নেতাজি ভারত ছেড়ে অন্তর্ধানে চলে যাওয়ার পর থেকেই তাঁকে স্বরণ করতে ১৯৪২ সাল থেকে নেতাজির জন্মদিনে তিনি বিনা পয়সায় তেলেভাজা বিতরণ করতেন মানুষের মধ্যে। যে ট্র্যাডিশন আজও চলে আসছে। যখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে দেশবাসীর আন্দোলনের প্রস্তুতি একেবারে তুঙ্গে তখন শহরজুড়ে নানান জায়গায় জায়গায় চলছে মিটিং-মিছিল। কোথাও চলছে গোপনে আন্দোলনের ডাক। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। এমনই এক স্বদেশীদের গোপন ডেরায় তেলেভাজা, চা ও মুড়ির বরাত পেয়েছিলেন খেঁদু সাউ নামে এক ভদ্রলোক। যাঁর হাতে তৈরি তেলেভাজা খেতেন স্বয়ং নেতাজি। তাই আজও তাঁকে মনে রাখতে তাঁর জন্মদিনে বিনা পয়সায় বিতরণ করা হয় তেলেভাজা।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)