বিধান সরকার: ত্রিবেণী কুম্ভমেলার চতুর্থ বর্ষের সূচনা হল। পুণ্যস্নানের ব্যবস্থা তো আছেই। পাশাপাশি আয়োজন হয়েছে নগরকীর্তন, শক্তিপীঠ পরিক্রমা, রুদ্র অভিষেক, রুদ্র মহাযজ্ঞ, শিব সহস্র নাম, সাধু প্রবচন ও ধর্মসভার।সপ্তর্ষি ঘাটে সন্ধেয় হবে গঙ্গা আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নাগা সাধুদের আখড়াও হয়েছে ত্রিবেণীতে।
প্রায় সাতশো বছর আগে হুগলির ত্রিবেণীতে গঙ্গা যমুনা সরস্বতীর সঙ্গমে কুম্ভ বসত বলে জনশ্রুতি। গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তি শেষে ফেরার পথে সাধু-সন্ন্যাসীরা পায়ে হেঁটে ত্রিবেণী সঙ্গমে মিলিত হতেন মাঘী পূর্ণিমায়। সেখানে একদিনের কুম্ভ হত, যাকে অণুকুম্ভ বলা হয়। মিনি কুম্ভও বলা হয়। বহুদিন বন্ধ থাকার পরে সেই কুম্ভ আবার শুরু হয়েছে চার বছর আগে। আজ, আগামীকাল ১২ ফেব্রুয়ারি (মাঘী পূর্ণিমা) ও পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি– এই তিন দিন ধরে বহু মানুষের সমাগম হয় ত্রিবেণীতে। গঙ্গার ঘাটে আগামীকাল হবে বিশেষ পুন্যস্নান। তার আগে নাগা সাধুদের নগর পরিক্রমাও রয়েছে। যাকে ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতা রয়েছে। প্রয়াগে দুর্ঘটনা দেখে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসন।
কুম্ভমেলার নাগা সাধুদের ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা ধর্ম বাবা বলেন, সপ্তর্ষি ঘাট শিবপুর মাঠ আর আর ক্যাম্প– এই তিনটি জায়গায় মেলার কাজ চলছে। ক্যাম্পে মূলত সনাতনী কার্যক্রম হবে। সন্ধ্যাবেলায় সপ্তর্ষি ঘাটে দশ হাজার প্রদীপ জ্বালানো হবে। সন্ধ্যা আরতি হবে। পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালাতে পারবেন সাধারণ মানুষ। একটা সময় এই সপ্তগ্রামে বাণিজ্য বন্দর ছিল। যেখানে বিদেশি জাহাজ আসত, বাণিজ্য হত। ত্রিবেণী কুম্ভকে কেন্দ্র করে সেই আর্থিক আদান-প্রদান বাড়বে। সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রসারের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন হবে আশা করি।
প্রসহ্গত, গত বুধবারই ত্রিবেণীর কুম্ভমেলার মাঠে আয়োজন হয়েছিল যজ্ঞের, হয়েছিল কুম্ভমেলার ধ্বজোত্তোলন। গত তিন বছর মাঘী সংক্রান্তিতে কুম্ভমেলা হয়েছিল ত্রিবেণীতে। প্রয়াগরাজে যেমন গঙ্গা যমুনা সরস্বতীর সঙ্গম, ত্রিবেণীতেও তেমন তিন নদীর সঙ্গম। প্রয়াগ যুক্তবেনী, ত্রিবেণীকে মুক্তবেণী। ত্রিবেণীকে দক্ষিণ প্রয়াগও বলা হয়। সেই সঙ্গমস্থলে ৭০০ বছর আগে কুম্ভ হত বলে দাবি মেলা কমিটির।
ইতিহাস বলছে, কানাডিয়ান লেখক এলান মরিনিসের একটি বই থেকে ত্রিবেণী কুম্ভের কথা জানা যায়। এছাড়াও পুরাণে ত্রিবেণীর নাম পাওয়া গিয়েছে। স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী, কুশদ্বীপের রাজা প্রিয়বন্ত ‘র মোট সাতজন পুত্র ছিলেন, তাঁরা হলেন– অগ্নিত্র, মেধাতিথি, বপুস্মান, জ্যোতিষ্মান, দ্যুতিষ্মান, সবন ও ভব্য। ত্রিবেণী ধামসংলগ্ন স্থানে তাঁরা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন, মোট সাতটি গ্রামে। গ্রামগুলি হল– বাসুদেবপুর, বাঁশবেড়িয়া, নিত্যানন্দপুর, কৃষ্ণপুর, দেবানন্দপুর, শিবপুর ও বলদঘাটি। এই জায়গাগুলিতে তাঁরা আশ্রম তৈরি করেছিলেন। তাই এর নাম হয় সপ্তগ্রাম। সেই সপ্তগ্রাম বাণিজ্য বন্দর থাকাকালীন এই স্থানের জনপ্রিয়তা বাড়ে। যদিও পরবর্তী কালে বিদেশি আক্রমণে এর মাহাত্ম্য কমে যায়। কিন্তু মাঘ সংক্রান্তিতে বহু মানুষ ত্রিবেণীতে স্নান করেন। সেই সূত্র ধরে ত্রিবেণী ‘অনুকুম্ভে’র জন্ম হয়েছে। মেলা কমিটির চিফ পেট্রন কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ত্রিবেণীতে একদিনের কুম্ভ মহোৎসব হবে। তবে আগামী দিনে বড় আকারে কুম্ভের আয়োজন হবে।
গতবছর মেলার অনুমতি নিয়ে টালবাহানা হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায়। এবার প্রশাসনও আগে থেকেই তৎপর। প্রসঙ্গত, ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে এখানে কুম্ভ মেলা হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য মেলার চার পাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি স্কুলে পরীক্ষার কেন্দ্র করা হয়নি।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)