Jhilam Gupta: ‘কনটেন্টের নামে নোংরামিকে নরমালাইজ করা হচ্ছে’, ঝিলামের পোস্ট ঘিরে উত্তাল নেটপাড়া…


জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: অশ্লীলতার মাত্রা ছাড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া, এই অভিযোগ নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। সম্প্রতি রণবীর আলাহাবাদিয়া, সমর রায়নার প্রসঙ্গ নিয়ে উত্তাল রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষ। এরই মাঝে বাংলার কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটরের অশ্লীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ঝিলাম গুপ্ত। নিজে একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হয়েও এই অশ্লীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ঝিলাম। 

আরও পড়ুন- Prosenjit Chatterjee: পর্দায় ফের ‘কাকাবাবু’ প্রসেনজিত্‍, ক্রাচ হাতে পাশে নেই সৃজিত!

ঝিলাম লিখছেন…

যে থালায় খাচ্ছ, সেই থালাতেই ফুটো করতে বসেছ? এই প্রশ্নটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিতেই পারে কেউ, কারণ যে প্ল্যাটফর্মে বসে কাজ করি, সেই প্ল্যাটফর্মের নামেই নিন্দার খাতা খুলে বসেছি যখন। তবে কথা হচ্ছে, আমি আমার বাপেরও ভুল হলে ধরি, তো ফেসবুক তো কোন ছাড়। তো যা বলছিলাম ও কেন বলছিলাম…
আজ আমি ঘটনাচক্রে তিন চারটি ভিডিও আমার ফিডে আসতে দেখি এবং সেই সবকটিই একই জাতের। 
ভিডিও ১: একটি বছর চল্লিশ বা একচল্লিশের বিবাহিতা মহিলা বিছানায় বসে, তার পাশে শুয়ে শুয়ে তার বছর পনেরোর মেয়ে মোবাইল দেখছে, আর একটি বছর তেরোর ছেলে মহিলাকে বলছে, আজ তোমার মেয়ের সামনে তোমাকে লাগাবো। চলোনা লাগাই। এর উত্তরে মহিলাটি বেশ এন্টারটেইন্ড চোখ মুখ করে বললেন চলো লাগাই বলে নিজের কথার উপযুক্ত একটি ভঙ্গি করে খাটে শুলেন। এটাই কনটেন্ট।
ভিডিও ২: একটি বছর চল্লিশ বা একচল্লিশের বিবাহিতা মহিলা একটি টাইট ব্লাউজ পরেছেন, যার ওপর নীচের দরকারী বোতামগুলো খোলা এবং মাঝের একটি বোতাম আটকানো। নিজের স্তনযুগলকে তিনি এই একটি টাইট ব্লাউজকে ব্যবহার করে দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন বোঝাই যাচ্ছে। ব্লাউজ পরেছেন কিন্তু শাড়ি পরেননি। একটি পাজামা বা প্যান্ট পরেছেন এবং নিজের পেট, পেটের চর্বি ও নাভি দেখাচ্ছেন বেশ চেষ্টার সাথে। সামনে রাখা একটি কড়ায় তিনি খুন্তি নাড়ছেন ও বলছেন “তোমরা আমার ভিডিও দেখেছো, আমার প্রেমে পড়েছো, আমার জন্য হ্যান্ডেল মেরেছো”। ভিডিওটি এখানেই শেষ হয়। এটাই কনটেন্ট।
ভিডিও ৩: একটি বছর চল্লিশ বা একচল্লিশের মহিলা (বিবাহিতা কি না বুঝিনি) শাড়ি পরা শেখাচ্ছেন। কিন্তু ভিডিওর ধরন দেখে মনে হলো শাড়ি খোলা শেখাচ্ছেন।  ব্রা এর মতো একটি ব্লাউজ, একটি পাতলা জালি শাড়ি। তিনি বুকের খাঁজ ও পেটের চর্বি দেখাচ্ছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এটাই কনটেন্ট। 
এই তিনটে ভিডিওর একটাই প্যাটার্ন, তিনটি ভিডিওতেই প্রধান শিল্পী একজন মহিলা যার বয়স চল্লিশ বা তার আশেপাশে। এরা হয় নোংরা সস্তার ফ্ল্যাট বা দামি চকচকে ফ্ল্যাটে থেকে এই সেমি পানু ভিডিওগুলি তৈরি করেন। এদের ভিডিওতে প্রধান কনটেন্ট হচ্ছে এদের দেহের কিছু মাংসল অংশ। মানে ওগুলো না থাকলে এই মহিলারা জাস্ট কিছু নয়। 
এই তিনটে ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে কমেন্টও কমন। বেশির ভাগ পুরুষই এদের দর্শক। তারা পরপর চাইছেন ফোন নাম্বার। কেউ জানতে চাইছেন “এত বড় বড় কি করে বানালে?”, আর কিছু মহিলা ধিক্কার জানিয়ে চলে এসেছেন।
ফেসবুক এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা মানুষের দ্বারা রিপোর্ট করা পোস্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তবে অবশ্যই খতিয়ে দেখে। কখনও আবার নিজেই বুঝে সেনসিটিভ কনটেন্ট সরিয়ে দেয়। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনা, এই মহিলাদের ভিডিওর বেলায় এসে এই প্ল্যাটফর্মের কী হয়?
কনটেন্ট এর নামে যে নোংরামিকে নরমালাইজ করা হচ্ছে, তার ফলাফল আগামী দিনে হতে চলেছে ভয়ঙ্কর। একটি বছর ছয়েকের শিশু ভিডিওতে বলছে “তেরি মাকো …” কিন্তু ভিডিওতে ভিউ বাড়ছে চড়চড় করে। লোকে ha ha react ফেলছে অক্লান্ত ভাবে। কিন্তু সেই কমেন্ট সেকশনে কেউ জানতে চাইছেনা একটি শিশু এই ভাষা শিখছে কিভাবে। ভিডিওটি থেকেও যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মে।
কত সহজে একটি বছর তেরোর কিশোর তার মায়ের বয়সী মহিলাকে বলছে “তোমায় …” এবং এটাই কনটেন্ট। 
আমার খুব কষ্ট হয়। তেরো বছরের আমি আর আমার বন্ধুরা পাড়ায় ছুটোছুটি করে খেলতাম। আমাদের ব্যাট বলের চক্করে লোকের বাড়ির কাঁচ ভেঙেছে কত। বাড়িতে সেই খবর গেলে বকুনি খাবো ভেবে ভয়ে ভয়ে থাকতাম। আর আজ, হায় রে তেরো বছর!
রাস্তায় খিস্তি এখন অনেক বেশি সহজলভ্য। উনিশ বিশ হলেই লোকে অক্লেশে একে অপরকে বলে “তোর মাকে…”। শুধু দোষ হয়ে গেল মেট্রোর প্ল্যাটফর্মে চুমু খাওয়া দুটো ছেলেমেয়ের। এই ভিডিওগুলোতে কখনো খুব বেশি ভিউ হয়, আবার কোন কোন সময় তেমন কোন ভিউই হয়না। তাহলে এরা এই ভিডিও থেকে উপার্জন করে কি করে? ভাবলেই বোঝা যায়, ঘুরপথে। মানে উপার্জন লুকিয়ে আছে ঐ ফোন নাম্বারের গল্পে।

আরও পড়ুন- Shovan Ganguly | Pratul Mukhopadhyay: ভাষা দিবসে ‘বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান’, প্রতুল-ঐশ্বর্য কন্ঠে নিলেন শোভন…

শ্যাওড়াফুলির ওপর দিয়ে যখন তারকেশ্বরগামী ট্রেন যায়, সেই ট্রেন থেকে ওখানকার একটি পুরনো যৌনপল্লী দেখতে পাওয়া যায়। সেখানকার যৌনকর্মীরা  সেখানে কেউ এসেছেন ভাগ্যের ফেরে আবার কেউ দারিদ্র্যের তাড়নায় আর কোন পথ না পেয়ে। কিন্তু যখন ট্রেন যায়, এই পল্লীর বাসিন্দারা শাড়ির আঁচল দিয়ে বা ওড়না দিয়ে নিজেদের মুখ ঢাকেন। অথচ এদের যৌনকর্মী হওয়ার সরকারি পরিচয় পত্র আছে।
আমাদের সমাজ এই মানুষগুলোকে রে*ন্ডি বলে হাসে, বে*শ্যা বলে খিস্তি দেয়। খা*কী বলে দাঁত বার করে আনন্দ পায়। কিন্তু তাদের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি করতে পারেনা। উল্টো দিকে নির্লজ্জের মতো নিজের শরীর সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখিয়ে নিজেদের প্রোফাইলে ডিজিটাল ক্রিয়েটার লিখে রাখা জঞ্জালদের লাখ লাখ ভিউ দিয়ে মাথায় তোলে। 
আমি কষ্ট পাই। আপনি ভাবতেই পারেন ন্যাকামি করছি কষ্ট পাই কষ্ট পাই লিখে। ভাবতেই পারেন। আমার কিছু যায় আসেনা। ঠিক যেমন এই বদমাইশ জঞ্জালগুলো যাই অপরাধ দিনের পর দিন করুক, তাতে ফেসবুক বা সমাজের আসলে কিছু যায় আসেনা। 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *