অরূপ লাহা: নিজের বলতে বছর সত্তরের দাদু এবং বছর পয়ষট্টির দিদিমা। দিন দশেক ধরে তাঁরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এই পরিস্থিতিতে সাড়ে চার বছরের ভাইয়ের দ্বায়িত্ব সামলাচ্ছে তার বছর ন’য়েকের দিদি। পূর্ববর্ধমানের গুসকরা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তুড়িপাড়ার এই দুই অসহায় শিশুর ঠাঁই স্থানীয় ক্লাবে। রাতের বেলায় প্রতিবেশীদের কেউ কেউ তাঁদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়ায়। সেখানেই তারা ঘুমিয়ে পড়ে।
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখুন। ফলো করুন Google News
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই শিশুর বাবা এবং মায়ের কোন খোঁজ নেই। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পরেই বাচ্চাকে ছেড়ে মা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তখন থেকেই মায়ের বাবা ছবিয়া তুড়ি এবং মা মৌসুমীর কাছেই থাকে তারা। কিন্তু তাঁরাও অসুস্থ হয়ে পরায় এখন তাঁদের দ্বায়িত্ব কে নেবে, সেই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এতদিন স্থানীয় অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র থেকেই ওদের খাবার দেওয়া হত। কিন্তু এখন খাবার নিয়ে যাওয়ার মত লোকও নেই তাঁদের। অঙ্গনওয়ারির সহায়িকা নিজে গিয়ে তাঁদের খাবার পৌঁছে দিতেন। কিন্তু কিছুদিন আগে ওই বাচ্চা দুজন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সম্প্রতি সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছে। তখন থেকে খাবার দেওয়া বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বাচ্চা দুটি অপুষ্টিতেও ভুগছে। অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র বা স্কুলে যায় না। পাড়ার লক্ষ্মী তুড়ি, উর্মিলা তুড়িরা তাঁদের দেখভাল করেন। খাইয়ে দেন, ঘুম পারিয়ে দেন। কিন্তু তাঁরাও অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। সকাল থেকে তাঁদের কাজের জন্য বেরিয়ে যেতে হয়। তখন বাচ্ছা দুটি পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়ে। পাড়ার প্রত্যেকেই দুঃস্থ। দিনমজুরি বা পরিচারিকার কাজ করেই তারা সংসার চালান। ফলে তাঁদের পক্ষেও বাড়তি দ্বায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। এই অবস্থায় সরকার শিশু দুটির দ্বায়িত্ব নিক, চাইছেন তাঁরা।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকালে পাড়ায় যান গুসকরার পুরপ্রধান কুশল মুখোপাধ্যায় এবং ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার যমুনা শিকারি। কুশল জানান, ‘আপাতত ওই বাচ্চা দুটিকে দেখাশোনার জন্য একজনকে দ্বায়িত্ব নিতে বলেছি। তাদের খাবার, পোশাক, ওষুধ সব কিছুই আমরা দেবো। পাশাপাশি শিশু দুটির ভরণপোষণের দ্বায়িত্ব আমি নিজে নিয়েছি’। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে তাদের আইনত অভিভাবক তাঁদের দাদু, দিদিমা। তাই তাঁদের অনুমতি ছাড়া শিশু দুটিকে কটেজ হোমে পাঠানোও সম্ভব নয়। তাঁদের কাছে অনুমতি পেলে এব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হবে’।
আরও পড়ুন: West Bengal Weather Update: ভরা বসন্তে ৪ জেলায় কার্যত শুষ্ক ‘লু’! মার্চেই হাসফাঁস অবস্থা, তরতরিয়ে বাড়ছে গরম…
আরও পড়ুন: রাতারাতি ভোলবদল! পানিহাটির পুরপ্রধানের মুখে এবার ‘খেলা হবে’ স্লোগান..
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)