Bankura: প্রাথমিক স্কুলের পর এবার মাধ্যমিক, বাঁকুড়ায় একসঙ্গে ৭ মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধের নোটিস


মৃত্যুঞ্জয় দাস : প্রাথমিক স্কুলের পর এবার কোপ পড়তে চলেছে বাঁকুড়া জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলির উপর। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া জেলার সাতটি ব্লকে মোট সাতটি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধের নোটিস দিয়েছে প্রশাসন। কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে ওই স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা নেমে এসেছে ২০-এর নীচে। স্কুল বন্ধের নোটিস মিলতেই চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে পড়ুয়াদের। চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু একসময় রমরমিয়ে চলা এই মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলির এমন হাল কেন? কোন পরিস্থিতিতে পড়ুয়ার সংখ্যার নামল এতটা নীচে?

আরও পড়ুন-জ্বলছে নাগপুর! জারি কার্ফু, জখম ২৫ পুলিস, আটক প্রায় ৫০, কেন অশান্ত এলাকা?

রাজ্যের যে সমস্ত এলাকা থেকে প্রাথমিক ও হাইস্কুলের দূরত্ব বেশি সেই সমস্ত এলাকার পড়ুয়াদের জন্য ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়। মূলত রাজ্যের স্কুলছুট পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করাই ছিল এই শিক্ষা কেন্দ্রগুলির উদ্যেশ্য। বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষা কেন্দ্রগুলি খোলার পাশাপাশি তৈরী হয় স্কুলগুলির নিজস্ব পরিকাঠামো। সরকারি উদ্যোগে চুক্তির ভিত্তিতে স্কুলগুলিতে নিযুক্ত হয় যথেষ্ট শিক্ষকও।  ঘরের কাছে স্কুল মেলায় প্রথম দিকে প্রতিটি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রেই পড়ুয়ার ভিড় জমতে শুরু করে। কিন্তু কেন হঠাৎ এভাবে একটি জেলাতেই একসাথে মোট ৭ টি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধের  নোটিশ দিতে হল প্রশাসসকে?  সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলায় বন্ধের নোটিস পাওয়া একটি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের ইতিহাস দেখলেই  বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়।

২০০৪ সালে একটি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র পথচলা শুরু করেছিল বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের কুমিদ্যা গ্রামে। কুমিদ্যা রাধামাধব মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র নামের সেই স্কুলে চার জন শিক্ষক নিযুক্ত ছিলেন। তৈরী হয়েছিল স্কুলের নিজস্ব বিশাল ভবন। চালু হয়েছিল মিড ডে মিলও।  স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে একসময় তা ২১০ এ পৌঁছে যায়। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে একে একে দুজন শিক্ষক অবসর নেওয়ায় এবং ২০১১ সালের পর মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। ওই শিক্ষাকেন্দ্রে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ৪ টি ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়ানোর যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ে অবশিষ্ট দুই শিক্ষকের। একজন শিক্ষক কোনোরকমে বাংলা ও ইংরাজি বিষয় পড়ান, অপরজন কোনোক্রমে সামাল দেন অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিষয়।  পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়াদের একটি ক্লাসরুমে এবং সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়াদের অপর একটি ক্লাসরুমে একসঙ্গে বসিয়ে শিক্ষাকেন্দ্রে কোনোক্রমে পঠন পাঠন অব্যাহত রাখেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে নামতে শুরু করে স্কুলের পঠন পাঠনের মান। অগত্যা বহু অভিভাবক মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে ছাড়িয়ে পড়ুয়াদের দূরবর্তী স্কুলে ভর্তি করেন। অনেকে হতাশায় মাঝপথেই লেখাপড়ায় ইতি টেনে  পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে পড়ে। ফলে দ্রুত হারে নামতে শুরু করে পড়ুয়ার সংখ্যা। বর্তমানে ওই স্কুলে ৪ টি ক্লাস মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ১৯ জন। স্থানীয় অভিভাবক থেকে শিক্ষকদের দাবী প্রথমে সরকারি অবহেলার কারণে স্কুল পড়ুয়ার সংখ্যা এত কমেছে। আর এখন পড়ুয়ার সংখ্যা কম থাকার কারন দেখিয়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষাকেন্দ্রটিকেই। এভাবে হঠাৎ করে শিক্ষাকেন্দ্রটি বন্ধের নোটিশ মেলায় হতাশার সুর পড়ুয়া থেকে শুরু করে শিক্ষক এমনকি অভিভাবকদের গলাতেও। কয়েকজন শিক্ষক নিয়োগ করেই যেখানে শিক্ষাকেন্দ্রটির হাল ফেরানো যেতে সেখানে শিক্ষাকেন্দ্রটিকেই তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে দরব হয়েছেন স্থানীয়রা। কেন্দ্রের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীও এই ঘটনার জন্য কড়া সমালোচনা করেছে রাজ্য সরকারের।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *