এই মাজার দেখভালের দায়িত্বে হিন্দুরা, প্রার্থনা করেন মুসলমানেরা! যুগ-যুগ ধরে সম্প্রীতির মধুর ছবি…। Syed Shah Pir mazar Muslim shrine maintained by hindu family Palpara Bhadreswar hooghly shining example of religious harmony


বিধান সরকার: পির মাজারে পুজো দেন হিন্দুরা, প্রার্থনা করেন মুসলমানেরা। ভোট রাজনীতিতে হিন্দু মুসলিম আবহে ভদ্রেশ্বরে সম্প্রীতির অন্য ছবি। মুসলিম পিরের মাজার দেখাশোনা করে হিন্দুরাই। পালপাড়া ছাড়া মোট তিন এমন  মাজার রয়েছে ভদ্রেশ্বরে। 

Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখতে ফলো করুন Google News

বিজেপি বলছে, হিন্দু-হিন্দু ভাই-ভাই, তৃণমূল বলছে হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই। একদিকে হিন্দুভোট একজোট করতে কৌশলী বিজেপি। অন্যদিকে ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলে সরব তৃণমূল। পোস্টার ব্যানার দেওয়াল লিখনে ধর্মের নামে ভোটের তরজা যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে ভদ্রেশ্বরের এই ছবি সত্যিই ব্যতিক্রমী।

সৈয়দ শাহ পিরের মাজারের কথা হচ্ছে। জাতপাত ভুলে দীর্ঘ দিন ধরেই এই সৈয়দ শাহ পিরের মাজার দায়িত্বে রয়েছে পালপাড়ার দাস পরিবার। মাজারে দুবেলা মোমবাতি ধুপ দিয়ে পুজো করেন এই পরিবারের সদস্যরাই। দেখে মনে হয়, মাজার নয়, যেন কোনও হিন্দু দেবালয়। আর এভাবেই হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন তাঁরা। 

শুধু এই মাজারই নয়, পাশেই হিন্দুস্তান পার্কে মানিক শাহ পিরবাবা ও ভদ্রেশ্বর পৌরসভার ভাগাড় এলাকায় করিম সাহের মাজার রয়েছে। মাজার-সংস্কারে আর্থিক সাহায্য করা থেকে শুরু করে, সমস্ত দেখভালও করেন স্থানীয় মানুষজনই। এই অঞ্চলগুলিতে মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস। একজন বয়স্ক মৌলবী মাজারে এসে তা পরিষ্কার করেন, চাদর পাল্টে যান। কিন্তু মাজার দেখভাল থেকে দরজার চাবির দায়িত্ব– সবই থাকে হিন্দু পরিবারে কাছে।

আরও পড়ুন: Shukra Gochar | Venus Transit: টাকা বন্যার মতো আসবে, ডুবে যাবেন প্রেমে-বিলাসে-যৌনতায়! শুক্রের কৃপায় ১ এপ্রিল থেকেই ম্যাজিক…

আরও পড়ুন: Strange Creature | Doomsday Sign: অদ্ভুতদর্শন এই প্রাণী কোথা থেকে এল? ‘পৃথিবীর শেষদিন’ বলে কেন ভয় পাচ্ছে সকলে?

ভদ্রেশ্বর পৌরসভা এলাকায় কয়েকটি জুটমিল রয়েছে। সেখানে কাজের সূত্রে বহু বছর ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ভাষার মানুষ বাসবাস করেন। ভদ্রেশ্বর পালপাড়া, হিন্দুস্তান পার্কের জমি-জায়গা মুসলমানদের অধীনে ছিল। সেই সময় একাধিক পির মাজার তৈরি হয়। পরবর্তী কালে পূর্ববঙ্গের মানুষ ও অবাঙালি হিন্দু বিহারি, তেলগু ওড়িয়াভাষীরা বসবাস শুরু করেন। তেমনই ১৯৬৭ সালে ভদ্রেশ্বর পালপাড়ায় শ্রীধামচন্দ্র দাস এক মুসলিম পরিবারের কাছ থেকে এই জায়গাটি কিনেছিলেন। সেই সময় থেকে সৈয়দ শাহ পিরের মাজারের দেখভাল দাস পরিবারই পালন করে আসছে। আগে মাটির থাকলেও, পরে পাকা হয় এই মাজার।

দাসপরিবারের এক গৃহবধূ শুক্লা দাস জানান, তাঁর শ্বশুর মাজার-সমেত এক মুসলিমের কাছে এই জমি কিনেছিলেন। সেই থেকে শ্বশুর মাজার দেখাশোনা করেন। উনি মারা যাওয়ার পরে তাঁর পরিবার। প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি বহু মুসলিম আসেন প্রার্থনা করতে, চাদর দিতে। এখানে হিন্দু-মুসলিম ভাগাভাগি নেই। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলেই এক। 

মৌলবী মহম্মদ সেলিম বলেন, এখানে তিনটি মাজার আছে, সেখানে অনুষ্ঠান হয়। আমারা দেখাশোনা করি। আগে পুরোটাই জঙ্গল ছিল। সেই সময় পিরেরা থাকতেন। তাঁরা মারা গেলে সেখানেই তাঁদের কবর দেওয়ার পরে তা মাজার হয়। এক সময় এখানে হিন্দুস্তান কারখানা হয়েছিল। কিন্তু তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে জায়গাজমি বিক্রি হয়ে যায়। লোকজন বসবাস শুরু করে। এখানে আমরা সকলে মিলে এই মাজার দেখাশোনা করি। সবাই মিলে মাজারে উৎসব পালন করে।

ভদ্রেশ্বর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রলয় চক্রবর্তী বলেন, সমস্ত ধর্মের মানুষ এখানে একত্রিত হয়ে বসবাস করেন। সব জায়গাতেই কিছু মানুষ থাকে, যারা রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু ভদ্রেশ্বরে সেরকম কেউ নেই। আমরা শান্তিতে এক সঙ্গে থাকতে চাই। মাজারগুলি সকলে মিলে দেখা শোনা করি। মুখে ভাই-ভাই বলে কিছু হবে না। সকলকে সকলের পাশে থাকতে হবে। ধর্ম কোনও দিন ভাগ করতে শেখায় না।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *