কমলাক্ষ ভট্টাচার্য: গতকাল দীঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসে মন্দির নিয়ে কথা বলেন। এমনকি এও বলেন, ভগবান মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে একটা ভালো কাজ করিয়ে নিয়েছেন। দীঘায় যে সময় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হচ্ছিল সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী কাঁথিতে সনাতনী সভা করছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে যাননি দিলীপ ঘোষ। এনিয়ে তোলপাড় গেরুয়া শিবির। মন্দিরের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর মেদিনীপুরে দিলীপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শুভেন্দুও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। এনিয়ে এবার মুখ খুললেন দিলীপ ঘোষ।
বৃহস্পতিবার দীঘায় প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে নাম না করে দলের নেতাদের একহাত নেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, আমি দেখি না কে মন্দির তৈরি করেছে। ভববান সবার হয়, কালীঘাট ও তারকেশ্বর মন্দির কে তৈরি করেছে জানি না, রাম মন্দির কে তৈরি করেছে তা মানুষ ভুলে যাবে কিন্তু রামকে মনে রাখবে। আমার পার্টির কিছু লোক কষ্ট পেয়েছে, কেউ হতাশায় ভুগছে, ভাবছে সুসাইড করবে কিনা। বিজেপি করতে গেলে হতাশায় ভুববেন না, চোখের জল ফেলবেন না। আমরা পার্টি দাঁড় করিয়েছি রক্ত ও ঘাম দিয়ে। যাদের নিয়ে এসে নেতা বানিয়েছি, যারা করে খাচ্ছে। তাদের বেশী পেট ব্যাথা হচ্ছে। যাদের নেতা করেছি ভবিষ্যত নিয়ে তারা চিন্তিত। দিলীপ ঘোষ দরকার হলে রাজনীতি ছাড়বে কিন্তু পার্টি ছাড়বে না। কিছু লোক চাইছে আর্মি পার্টি ছাড়লে জায়গা খালি হবে, সুবিধা হবে। সেটা হওয়ার চান্স নেই।
দলের বিরোধী শিবিরকে নিশানা করে দিলীপ ঘোষ বলেন, যারা ২০-২১ সালে বিজেপিতে এসেছে তারা বিজেপিকে বুঝতে পারবে না। কেউ আরএসএস দেখাচ্ছে, কেউ হিন্দুত্ব বোঝাচ্ছে। দিলীপ ঘোষকে হিন্দুত্ব বোঝাবেন না। আমাকে কাটলে হিন্দুত্বের রক্ত বেরোবে, বিজেপির রক্ত বেরোবে। বাকিদের গায়ে কী রক্ত আছে জানি না। বহু জায়গা ঘুরে এসেছেন তাঁরা। যারা মমতার আঁচলের তলায় থেকে নেতা হয়েছে তারা বড় কথা বলছে, চরিত্র নিয়ে কথা বলছে। যারা কালীঘাটের উচ্ছিষ্ঠ খেয়ে জীবন কাটিয়েছে, আজ বিজেপির উচ্ছিষ্ঠ খেয়ে বেঁচে আছে তারা দিলীপ ঘোষকে ক্যারেকটার সার্টিফিকেট দিচ্ছে। যারা ৪টে বিয়ে করে ১৪টা গার্লফ্রেন্ড রাখে, রাতের জীবন-দিনের জীবন আলাদা, তারা আমাকে ত্যাগী ভোগী-বলছে, আহাম্মক ।
আরও পড়ুন-দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরে দিলীপ! ‘বয়সকালে মতিভ্রম’? ক্ষোভ বিজেপির অন্দরে…
আরও পড়ুন-আগামী কয়েকদিন টানা বৃষ্টি অধিকাংশ জেলায়, তাপমাত্রা নামবে হু হু করে
দলে হিন্দুত্ব নিয়ে যারা আওয়াজ তুলছেন তাদের বিঁধে বিজেপি নেতা বলেন, আজ যারা বড়বড় কথা বলছেন, হিন্দুর জন্য কত লড়েছেন তাঁরা? কি ত্যাগ করেছেন? চার পয়সার ত্যাগও নেই। বিজেপিতে কামাতে এসেছেন। আমি দোকান সাজিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। ৭৭টা এমএলএ দিয়ে। একডজন এমএলএ আজ নেই কেন? সবাই চলে যাচ্ছে কেন? জবাব কে দেবে? ২০২১ সালের পর থেকে বিজেপি নামছে। ২০১৯সালে বিজেপি ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল । ৫ বছর পর ভোট ৩৯ শতাংশে নেমেছে। আর ৯১টা বিধানসভায় লিড পেয়েছে। পার্টি এগোচ্ছে না পিছিয়ে পড়ছে? ২০২১ সালের পর থেকে জিততে ভুলে গেছি। পাবলিক প্রশ্ন করছে। নীতি, হিন্দুত্ব, রাজনীতি আপনারা শেখাচ্ছেন? কেন পার্টি নেমে যাচ্ছে? ২৫০ লোকের প্রাণের বিনিময়ে দলকে দাঁড় করিয়েছিলাম। কেন কমছে? দালালরা যেদিন থেকে পার্টিতে এসেছে, বিজেপির গন্ধ চলে গেছে, স্বাদ চলে গেছে, লোক বিজেপির উপর ভরসা করতে পারছে না। ভরসা ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই কড়ুন, নাটক করবেন না। দিলীপ ঘোষের লড়াই জারি আছে। আপনারা ঠিক করুন কে কোন পার্টি থেকে লড়াই করবেন।
দলকে দাঁড়া করাতে দলের বহু কর্মীর প্রাণ গিয়েছে। এনিয়ে দিলীপবাবু বলেন, কেউ বলছে ৫৭ জন শহিদ হয়েছে। তারা ভাবছে ২০২১ সালে বিজেপি তৈরি হয়েছে। তা হয়নি। ২৫৭ জন শহিদ হয়েছে। ফলে ৭৭ সিট জিতেছিলাম। আজ একডজন বিধায়ক আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। রাজনীতিতে আমার কোন শত্রু নেই, আমি সবাইকে মিত্র করার চেষ্টা করি, মিত্র করেছি বলে দল বড় হয়েছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)