Prevent lightning: বজ্রপাত রুখতে ৭৫ হাজার তালগাছ! নজির গড়েছেন ভূগোল শিক্ষক…


বিধান সরকার: গ্রামের মানুষকে বজ্রাঘাত থেকে রক্ষা করতে তালগাছ বসিয়ে চলেছেন পান্ডুয়ার ভূগোলের শিক্ষক। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,’তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে,উঁকি মারে আকাশে’। সেই তালগাছ বসানোর নেশা পেয়ে বসেছে পান্ডুয়ার শিক্ষক ভাস্কর মন্ডলকে। ইতিমধ্যে ৭৫ হাজার তালগাছ লাগানো হয়ে গিয়েছে। এরপর বাঁকুড়ার জয়পুর জঙ্গলে তালগাছ বসানোর পরিকল্পনা করেছেন।

আরও পড়ুন, West Bengal Weather Update: বাংলার উপরে বিশাল নিম্নচাপ অক্ষরেখা, বিকেলে প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে তোলপাড় হবে একাধিক জেলা

পান্ডুয়ার রানাগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভাস্কর মন্ডল। তিনি ভূগোলের শিক্ষক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় তার আদিবাড়ি হলেও প্রায় ৩২ বছর আগে হুগলির পান্ডুয়ার উত্তরায়ন এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি মনে করেন গাছ হল প্রকৃত “বন্ধু”। তাই বন্ধুকে ত্যাগ করা যাবে না‌। যত বন্ধুত্ব বাড়বে ততই আমরা ভালো থাকব। তাই তার কাছে গাছ লাগানো নেশা। প্রায় ২২ বছর ধরে পান্ডুয়ার বিভিন্ন এলাকায় গাছ লাগিয়ে আসছেন ভাস্কর বাবু। তবে তার মধ্যে অধিকাংশই তালগাছ। প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে তিনি তাল সহ বট, অশ্বত্থ, খেজুর ,বেল, তেতুল, আম বিভিন্ন গাছ বসিয়ে থাকেন।

পান্ডুয়া ব্লকের অধিকাংশ এলাকা কৃষি প্রধান। পান্ডুয়ার আত্তি মোর থেকে রানাগড় যাবার পথে সবুজে ঘেরা প্রচুর গাছ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে অধিকাংশই রয়েছে ছোট-বড় তালগাছ। স্থানীয়দের দাবি, সেই সমস্ত তালগাছ বসিয়েছেন ভাস্কর বাবু। তীব্র দাবদহে  মানুষ যখন একটু বিশ্রামের আশ্রয় খোঁজে তখনই ছায়া শীতল পরিবেশে তাল গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেন অনেক পথ চলতি মানুষ। ওই রাস্তার দুপাশেই রয়েছে প্রচুর চাষযোগ্য জমি। কৃষকরাও গাছের ছায়ায় এসে আশ্রয় নেন। প্রায় শতাধিক তালগাছ রয়েছে রাস্তার দুপাশে। তাল গাছের পাশাপাশি তিনি  বিহার থেকে মাখনা গাছ এনে জলাশয়ে বসিয়েছিলেন সেই গাছও এখন বড় হয়েছে। মাখনা একটি লাভজনক চাষ চাষীদের তিনি অনুরোধ করেন এই চাষ করার জন্য।

প্রধান শিক্ষককে সাহায্য করে তার স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা। প্রায় ২০০ জন পড়ুয়াদের নিয়ে “নেচারস লাভার ক্লাব” নামে একটি সংগঠন করেছেন ভাস্কর বাবু। বিদ্যালয়ের ভিতরের চারপাশ গাছ গাছালিতে ভরা। গ্রামে বিভিন্ন জায়গা থেকে তাল আটি সংগ্রহ করার জন্য পিকআপ সেন্টার তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক। কেউ ফোন করে জানালেই তার বাড়িতে হাজির হয়ে যান শিক্ষকসহ পড়ুয়ারা । সেখান থেকে তারা তাল আটি সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায়  বসান। ইতিমধ্যেই প্রায় ৭৫ হাজার তালগাছ বসিয়েছেন বলে দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের। অনেক গাছ রক্ষা করা যায়না। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। পরিবেশ রক্ষায় লাগিয়ে চলেছেন গাছ। শিক্ষকের পরিবার ও তাকে এই কাজে সাহায্য করে।

স্থানীয় বাসিন্দা রতন ঘোষ, মিন্টু মান্নারা বলেন, আমরা ছোটবেলায় রানাগড় স্কুলে পড়ার সময় ভাস্কর স্যার তালগাছ বসিয়েছিলেন। আমরা স্কুল জীবন থেকেই এই তালগাছ দেখে আসছি। এখন সেইসব তালগাছ অনেক বড় হয়ে গেছে।  স্যার শুধু পরিবেশ রক্ষাই করেন না, তিনি সমাজসেবীও । কেউ অসুস্থ হলে তাকেও যেমন সাহায্য করেন,  ঠিক তেমনি নাবালিকার হচ্ছে শুনতে পেলেই সেখানে গিয়ে হাজির হয়ে যান ভাস্কর বাবু।

কেন তিনি এই তালগাছ লাগান? সে প্রসঙ্গে ভাস্কর বাবু বলেন, প্রায় ২২ বছর ধরে তালগাছ বসাচ্ছি। এখনো পর্যন্ত পান্ডুয়ার বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ৭৫ হাজার গাছ বসিয়েছি। তার মধ্যে অনেক গাছ বড় হয়ে পূর্ণতা পেয়েছে। আর তা থেকেই মানুষ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। গাছ আমাদের অক্সিজেন যেমন দেয় তেমনি ছায়া ও ফলও দেয় তাই গাছ আমাদের বন্ধু। এই এলাকার অধিকাংশ টাই কৃষি প্রধান এলাকা। সেখানকার মূল সমস্যা হলো মাঠে কাজ করার সময় অনেকের বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে তালগাছ যদি মাঠের মাঝখানে বা আশেপাশে থাকে তাহলে বাজপড়া থেকে মানুষ রক্ষা পায় এবং জীবন হানি থেকে রক্ষা পায়। তাই কারুর যাতে মৃত্যু না ঘটে সেই কারণেই আমার এই তালগাছ লাগানোর মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও আমার এক ছাত্র আমাকে তিনটি তাল দিয়েছিল তার মধ্যে উন্নত প্রজাতির দুটো তাল ছিল সেই তাল আটি রাস্তার পাশের বসিয়েছিলাম তখন থেকেই আমার গাছ লাগানোর প্রতি ভালোবাসা হয়। এবছর আমাদের গাছ লাগানোর টার্গেট রয়েছে ১৫ হাজার। আমরা বাঁকুড়ার জয়পুর জঙ্গলের গাছ লাগানোর জন্য রেঞ্জার্সদের কাছে আবেদন জানিয়েছি। ‌বিভিন্ন পঞ্চায়েতের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের জায়গা দিন আমরা গাছ বসাবো।

পান্ডুয়ার সিমলাগড় ভিটামিন গ্রাম পঞ্চায়েতের রানাগড় গ্রামের সদস্য হাসিবুর রহমান শেখ বলেন, ভাস্কর স্যার খুব ভালো তিনি আত্তি থেকে রানাগড় যাওয়ার যে রাস্তা, সেই রাস্তায় প্রচুর তালগাছ বসিয়েছেন। গাছের ছায়ায় অনেকেই বিশ্রাম নেন। স্যার যে গাছ লাগিয়েছেন তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আর আমি সকলের কাছে অনুরোধ করব গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের প্রত্যেককেই গাছ লাগানোর দরকার।

আরও পড়ুন, Sitai family mysterious death: করোনা আতঙ্কের মধ্যেই জ্বর-শ্বাসকষ্টে সিতাইয়ে ২২ দিনে একই পরিবারে মৃত ৩! মৃত্যু গবাদি পশুরও, চাঞ্চল্য…

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *