বিধান সরকার: মা খারাপ কাজ করেছে,ফাঁসি চেয়েছিল ছেলে, আদালত দিল যাবজ্জীবন।
প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে পথের কাঁটা স্বামীকে সরানোর পরিকল্পনা করে দুষ্কৃতীদের সুপারি দিয়েছিলেন স্ত্রী! ছেলের সাক্ষীতে বারো বছর পর দোষী সাব্যস্ত হয়েছে মা ও তার ছয় জন চক্রী।
১৩ বছর আগের ঘটনা:
পোলবা থানার পাটনা গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ মালকে গলা কেটে খুন করা হয় ২৮ মার্চ ২০১২ সালে। পুলিস যখন খবর পেয়ে তদন্তে যায়, কৃষ্ণ মালের স্ত্রী রীনা মাল পুলিসকে জানান,বাড়িতে ডাকাত পরেছিল। তাকে আর ছেলেকে হাত বেঁধে তার স্বামীকে খুন করে গয়না টাকা লুট করে ডাকাত দল। শুধু তা-ই নয়, ডাকাতেরা তাঁকে ধর্ষণ করে বলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তিনি।
পুলিসি তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য:
পোলবা থানার পুলিস তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জেরায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কৃষ্ণ মালের সঙ্গে তার স্ত্রী রীনা মালের বয়সের ফারাক ছিল প্রায় কুড়ি বছরের। তাদের ছেলের বয়স ছিল তখন বারো বছর। স্বামীর সঙ্গে সুখী ছিলেন না রীনা। আর তাই বলাগড়ের জিকো পাল নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয় তার।
খুনের ছক:
জিকো বলাগড় থেকে পোলবায় যাওয়া আসা করত বাইক নিয়ে রীনার সঙ্গে দেখা করতে। সেই প্রেমিকের সঙ্গে চুক্তি করে পাঁচজন দুষ্কৃতীকে সুপারি দেওয়া হয়, কৃষ্ণকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার। পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার দিন দুষ্কৃতীরা গভীর রাতে কৃষ্ণ মালের বাড়িতে ঢোকে। দরজা খুলে দেন রীনা। ডাকাতি করতে এসে গৃহকর্তাকে খুন করেছে ডাকাত দল- এমনই পরিকল্পনা করা হয়।
কিন্তু পুলিসি তদন্তে উঠে আসে এক অবিশ্বাস্য কাহিনী। রীনার, জিকোর সঙ্গে প্রেম, তার স্বামীকে ডাকাতির বলি সাজানো, ডাকাতির সব পরিকল্পনা- জানতে পারে তদন্তকারীরা। এরপর ৪ ঠা এপ্রিল একে একে অভিযুক্ত, রীনা মাল, জিকো পাল,দীপঙ্কর পাল, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী,লক্ষীকান্ত চক্রবর্তী,অভিজিৎ চক্রবর্তী, রাজা দাসকে গ্রেফতার করে পুলিস।
মৃতের ছেলের বয়ান:
চুঁচুড়া আদালতের সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায় চৌধুরী বলেন, এই মামলায় ১৮ জন সাক্ষ্য দেয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মৃতের ছেলের বয়ান।
আইনজীবী আরও বলেন,আমি আদালতের কাছে বলেছিলাম এটা বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা তাই সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়া হোক। আদালত সেটা মনে করেনি। চুঁচুড়া আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক কৌস্তভ মুখোপাধ্যায় সাতজনকেই যাবজ্জীবন সাজা শুনিয়েছেন। প্রত্যেকের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে জরিমানা। অনাদায়ে দু বছর জেল। মৃত কৃষ্ণ মালের ছেলে কুশল বলেন,মা যে অপরাধ করেছে তার জন্য ফাঁসি হওয়া দরকার ছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৩ বছর ধরে হুগলি জেলা সংশোধনাগারে বন্দি রীনা। খুনের মামলায় অভিযুক্ত চার জন পুলিশের চোখে লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে পালিয়ে গেলেও পরে ধরা পড়েন। তাঁদের সকলে এখন বিভিন্ন জেলে বন্দি।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)