জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পাঁশকুড়ায় (panskura) ভেঙে পড়ল পুরনো মাটির দোতলা বাড়ি, চাপা পড়ে মৃত ২। কেরালায় (kerala) পাকা বাড়ির ধসে চাপা পড়ে মালদার (Malda) তিন শ্রমিকের মৃত্যু। পাথরপ্রতিমায় (South 24 Parganas) মর্মান্তিক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত ৩। ওদিকে ঘাটালের (ghatal) দাসপুরের ডিহিপলশায় ভয়াবহ পথদুর্ঘটনার কবলে পড়ে একই পাড়ায় মৃত ২। একই দিনে কয়েকঘণ্টার মধ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় এবং ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ১০ মৃত্যুর খবর!
মাটির বাড়ি হঠাৎ ভেঙে
পাঁশকুড়া ব্লকের রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব শুকুতিয়া গ্রামে একটি পুরনো দোতলা মাটির বাড়ি হঠাৎ ভেঙে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। মৃতদের নাম পুষ্পরানি মাজী (৯২) ও সুষমা গোস্বামী (৬০)। মাটি সরিয়ে তাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কেরালায় বাড়ি ধসে চাপা
কেরালায় বাড়ি ধসে চাপা পড়ে মালদার তিন শ্রমিকের মৃত্যু। দুর্ঘটনাটি ঘটে কেরালার কোডাকারা এলাকায়। এই দুর্ঘটনার ঘন্টাখানেক পর মৃত তিন শ্রমিকের পরিবারে বিষয়টি ফোন করে জানানো হয়। আর তার পরেই মালদার বৈষ্ণবনগর থানার হাজিপুর এবং গোবর্ধনটোলা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। পাশাপাশি দুটি গ্রামের তিন শ্রমিকের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে ওই পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেন বৈষ্ণবনগরের তৃণমূল বিধায়ক চন্দনা সরকার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারদের সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বিধায়ক চন্দনা সরকার। কেরল থেকে যাতে মৃত শ্রমিকদের দেহ সহজে ফেরানো যায় সে ব্যাপারে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,মৃত তিন শ্রমিকের নাম রবিউল ইসলাম (২১), রবিউল শেখ (১৯) এবং আব্দুল আলিম (৩১)। প্রথম দুজনের বাড়ি বৈষ্ণবনগর থানার শোভাপুর পারদেওনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজিপুর এলাকায়। আব্দুল আলিমের বাড়ি কুম্ভীরা গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবর্ধনটোলা এলাকায়। গত সপ্তাহের শনিবার এইসব এলাকা থেকেই ১০ জন শ্রমিক কেরলে গিয়েছিলেন কাজ করতে। মূলত এরা নির্মাণশ্রমিক হিসেবেই ওই রাজ্যে গিয়েছিলেন। কেরলের কোডাকারা এলাকায় মালদা এবং মুর্শিদাবাদের প্রায় ১৫ জন শ্রমিক একটি পুরনো বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু এদিন সাত সকালেই এই পুরনো বাড়ির দেওয়ালের একটি অংশ ফাটতে শুরু করে। তা দেখে ওই বাড়ির পিছনের সিঁড়ি দিয়ে শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে পালাতে তৎপর হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যে বাড়ির পুরনো অংশের দেওয়ালে যেখানে ফাটল ধরেছিল,সেখানকার সিঁড়ি দিয়ে ওই তিন শ্রমিক নীচে নামার চেষ্টা করেন। তখনই হুড়মুড়িয়ে তাঁদের গায়ের উপর পুরো কংক্রিটের বাড়ি ভেঙে পড়ে। সেই সময় ওই তিনজন চাপা পড়ে যায়।
ঘুমের মধ্যেই দেওয়াল ভাঙার শব্দ
তড়িঘড়ি তাঁদেরকে নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে উদ্ধার করে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন। মৃত রবিউল ইসলামের এক দাদা মহম্মদ বাইরুল শেখও তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কেরালার ওই এলাকায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছেন। মোবাইলে তিনি জানিয়েছেন, এদিন সকালে দেওয়ালের ফাটলের আওয়াজ শুনতেই ঘুম চোখে তাঁরা হুড়োহুড়ি করে উঠে পালাবার চেষ্টা করেন। সকলের চোখে ঘুম লেগেছিল বলে সহজে কিছু বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। আমরা পিছনের সিঁড়ির রাস্তা দিয়ে পালাতে গেলেও ভাই এবং তাঁর সঙ্গে আরও দুইজন সামনের সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে পালাবার চেষ্টা করেন। তখনই কংক্রিটের পুরো দেওয়ালটা ওদের শরীরের উপর ভেঙে পড়ে। তাতেই চাপা পড়ে যায় ওরা। অপর মৃত শ্রমিক আব্দুল আলিমের স্ত্রী মেরিনা খাতুন বলেন, আমি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা।বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি।
বাইক দুর্ঘটনায় মৃত ৩
ওদিকে পাথর প্রতিমায় মর্মান্তিক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত ৩, আহত ১। কাকভেরেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে জানা যায়, পাথরপ্রতিমা থানার রামগঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্জুন মোড় এলাকায় সকালেই এলাকার মানুষ বৃষ্টির সময় যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন হঠাৎ করে তাঁরা দেখেন মোটরসাইকেলটি রাস্তার উপরে ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে, রাস্তার ধারে ড্রেনে পরপর চারজন পড়ে! তাঁদের টেনে উপরে তোলার পর দেখা যায় তিনজনই মৃত, একজন বেঁচে আছেন! খবর দেওয়া হয় পাথরপ্রতিমা থানায়। ঘটনাস্থলে পুলিস পৌঁছে একজনকে উদ্ধার করে গদামথুরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। এখনও সকলের পরিচয় জানা যায়নি।
একই পাড়ার মৃত ২
পথদুর্ঘটনা ঘটেছে ঘাটালের দাসপুরের ডিহিপলশায়। ভয়াবহ পথদুর্ঘটনার কবলে পড়ে একই পাড়ায় মৃত ২, আহত ২। জানা যাচ্ছে শুক্রবার রাতে ঘাটাল মেদিনীপুর রাজ্য সড়কে দাসপুর থানার ডিহিপলসায় রথ দেখে ফেরার পথে সামনে থেকে আসা এক স্কুটির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে রয়েল এনফিল্ড হান্টারের। স্কুটি ও হান্টারে থাকা ৪ জন যুবক এদিক ওদিক ছিটকে যান। প্রথমে ৩ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। তার কিছুক্ষণ পর আরও এক জনকে কলাগাছের মধ্যে আটকে থাকতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে ৪ জনকে ঘাটাল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘাটাল হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২ জন মৃত। বাকি দুজনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতদের মধ্যে আছে বাসুদেব দোলই ও রাকেশ দোলই। এখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রোহিত দোলই ও শ্রীরূপ দোলই। সবারই বাড়ি দাসপুরের রামগড় এলাকায়, বয়স ২০-র আসেপাশে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)