বিধান সরকার: ‘কসবা ল কলেজে ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে চাপা অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে শনিবারই। দলের দুই হেভিওয়েট নেতা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক মদন মিত্র এই ঘটনাকে ঘিরে যেসব মন্তব্য করেছেন, সেগুলি ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ব্যাপারটাকে তৃণমূল ভাল চোখে নেয়নি। সম্য নষ্ট না করেই শীর্ষ নেতৃত্ব সাফ জানিয়ে দেয়, ওই মন্তব্যগুলো নিছক ব্যক্তিগত মত, দলের আনুষ্ঠানিক অবস্থান নয়। দলের অন্দরে যখন এসো নিয়ে অস্বস্তি বেড়েছে, তখন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও সুযোগ বুঝে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘নারীবিদ্বেষী মন্তব্য যেই করুন না কেন, তৃণমূল তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।’
কল্যাণ আরও বলেন, ‘মহুয়া মৈত্র এতটাই নারী বিদ্বেষী যে কৃষ্ণনগর সংসদ এলাকায় কোনও ভাল মহিলানেত্রীকে উঠতে দেন না। উনি আমাকে নারী বিদ্বেষী বলছেন, একজনের ৪০ বছরের বিয়ে ভাঙিয়ে সেই বউকে রেখে দিয়ে তারপর আপনি আবার একটা বিয়ে করলেন। তাহলে কোন নারীর বুকে আপনি আঘাত মারলেন নিজের স্বার্থের জন্য? তাহলে কি আমি নারীবিদ্বেষী। আর আপনি কী? যে মহিলাকে ডিভোর্স করিয়েছেন এখন ওই মহিলা কোথায় যাবেন?’
‘উনি ঘর ভেঙেছেন’, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের উদ্দেশ্যে এমনই মন্তব্য করেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি মহুয়াকে ‘নারীবিরোধী’ বলেও পালটা কটাক্ষ করেছেন।
কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনাকে ঘিরে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে রাজ্যে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল। ঘটনায় টিএমসিপি নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় এনিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেও চাপা অসন্তোষ রয়েছে। দলের দুই নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক মদন মিত্র ঘটনাকে ঘিরে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ঘাসফুল শিবির। দলের তরফে তাঁদের মন্তব্যের নিন্দা করা হয়।
এনিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি বলেছেন, ‘নারী-বিদ্বেষী মন্তব্য যেই করুক না কেন, তৃণমূল তার নিন্দা করে।’ যদিও মহুয়া কারও নাম করেননি।
রবিবার সকালে তাঁকে পালটা বলেন কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘মহুয়া মৈত্র বলেছেন, আমি নারী-বিদ্বেষী, এটাই তো ট্যুইট। উনি মধুচন্দ্রিমা শেষে দেশে ফিরে এসেছেন। আর ফিরেই পিছনে লাগা শুরু করে দিয়েছেন। আমাকে নারীবিরোধী বলে অভিযোগ করছেন।’ তাঁর সংযোজন, ‘আমি নারী-বিদ্বেষী নই, আমি নারীদের জন্য সবথেকে বেশি কথা বলি।’
সম্প্রতি ওডিশার প্রাক্তন বিজেডি সাংসদ পিনাকী মিশ্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও এদিন আক্রমণ করেন কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘মহুয়া আমাকে নারীবিদ্বেষী বলছেন। একজনের ৪০ বছরের বিয়ে ভাঙিয়েছেন। তারপর আপনি তাঁকে বিয়ে করলেন। যে মহিলার সংসার ভেঙেছেন, তিনি এখন কোথায় যাবেন?’ কল্যাণ বলেন, ‘যিনি নিজে একজন নারীর সংসার ভেঙে ৬৫ বছরের পুরুষকে বিয়ে করেন, তাঁকে আমি সুস্থ মানসিকতার নারী বলে মনে করি না। উনি নিজে সবচেয়ে নারীবিরোধী। শুধু জানেন কী ভাবে নিজের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে হয়।’
প্রসঙ্গত, কসবা কাণ্ডে মদন মিত্র মন্তব্য করেছিলেন, ‘ওই ছাত্রী যদি ওখানে না যেতেন, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না’। অন্যদিকে, কল্যাণ বলেছেন, ‘মহিলারা কার সঙ্গে বাইরে যাচ্ছেন, সে সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।’ দুই নেতার এমন মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)