শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়: সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানিমূলক কনটেন্ট এবং ডিজিটাল প্রতারণার বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাইবার অপরাধের মোকাবিলা এবং সমাজমাধ্যমে প্ররোচনামূলক ও ভুয়ো খবর ছড়ানোর প্রবণতা রুখতে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে।
মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি:
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে সমাজমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবর এবং জাল ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে সমাজের একাংশে আগ্রাসী মানসিকতা তৈরি হচ্ছে, অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। সাইবার অপরাধ ক্রমশ বাড়ছে। তাতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুয়ো খবর, তথ্য এবং ভিডিয়ো সামাজিক বাঁধুনি দুর্বল করছে। এর ফলে ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আঘাত আসছে। এমনকি, মহিলা, শিশু, বয়স্ক এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রবণতাও বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই প্রবণতা রুখতে আইনসভার কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন।’
কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের আবেদন:
এই পরিস্থিতিকে সমাজের স্থিতিশীলতার পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ বলে চিহ্নিত করে দ্রুত কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট দাবি:
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে লিখেছেন, ‘ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক মিথ্যে গল্প, ভুয়ো ভিডিও, এবং প্ররোচনামূলক পোস্ট ছড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, বাড়ছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, এই ধরনের কনটেন্টের হাত ধরে সহিংসতা বাড়ছে এবং মহিলাদের উপর অপরাধের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে’।
চিঠিতে তাঁর দাবি, ‘এসবের পাশাপাশি দ্রুত বেড়ে চলেছে সাইবার অপরাধ। প্রতারণা, পরিচয়পত্র চুরি, ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য অপব্যবহার, বদনাম করার মতো নানা ঘটনার জেরে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বহু প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই চক্রে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী মহিলারা, শিশু, প্রবীণ এবং দুর্বল আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের মানুষজন। যাঁদের পক্ষে এই সব প্রযুক্তিগত অপরাধ রুখে দাঁড়ানো বা প্রতিকার খোঁজা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে’।
আইনি কাঠামো এবং তার প্রয়োগও:
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ডিজিটাল প্রযুক্তি যত দ্রুত এগোচ্ছে, তত দ্রুত বদলাতে হবে আইনি কাঠামো এবং তার প্রয়োগও। কারণ প্রযুক্তি ব্যবহারের নামে অপরাধের পরিসর যেভাবে বাড়ছে, তাতে শুধু আইন থাকলেই চলবে না, তার প্রয়োগ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার দরকার আরও বেশি।
তাঁর দাবি, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সাধারণ মানুষকে শেখাতে হবে কী ভাবে ডিজিটাল কনটেন্ট যাচাই করতে হয়, কোন তথ্য বিশ্বাসযোগ্য এবং কোনটি গুজব বা ভুয়ো।
বিশেষ টাস্ক ফোর্স:
এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় তিনি কিছু সুপারিশ করেছেন। যেমন, ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়াতে বিশেষ সচেতনতামূলক শিবির করা যেতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ও ভুয়ো তথ্য চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স মোতায়েন করতে হবে। সন্দেহজনক অনলাইন কার্যকলাপের রিপোর্টিং পদ্ধতি আরও সহজ করতে হবে। নারী, শিশু, প্রবীণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সাইবার নিরাপত্তা সহায়তা চালু করা দরকার।
চিঠির শেষে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। এটি কেবল রাজ্য নয়, সমগ্র দেশের নিরাপত্তা, সামাজিক স্থিতাবস্থা এবং নাগরিকদের কল্যাণের প্রশ্ন।’
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)