জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মহরম (Muharram) কবে, এ নিয়ে বহু চর্চা কয়েকদিন ধরে চলছে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, আজ, রবিবার, ৬ জুলাইই মহরম। এই মহরম নিয়ে প্রচুর ইতিহাস, মিথ, মনোবেদনা। মহরম ঠিক কী– এ নিয়েও বহু মানুষের মনে বহু জিজ্ঞাসা। মহরম হল ইসলামীয় ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস (first month of Islamic calendar)। মহরম ১০ দিনের একটি পর্ব। যার শেষ দিন হল আশুরা (Ashura)। আশুরার ইতিহাস কারবালার (Karbala) যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত। মুসলিমরা আশুরার দিনটিকে শোকের দিন হিসেবে উদযাপন করেন, রোজা রাখেন এবং বিশেষ প্রার্থনাও করেন।
মহরমের তাজিয়া
মহরমের তাজিয়া শোক প্রকাশের প্রতীক। মুসলিম সমাজের মানুষ মহরমের শোককে এ ভাবেই বয়ে নিয়ে চলেছেন যুগ যুগ ধরে। বলা হয়, ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা কারবালার ট্র্যাজেডি। মীর মোশারফ হোসেনের লেখায় উঠে এসেছে এই ঘটনা। নবী হজরত মহম্মদের প্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসেন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষ অবলম্বন করে মৃত্যু বরণ করেছিলেন। সেই ঘটনাকে মুসলমানরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এদিন হায় ‘হাসান, হায় হোসেন’ ধ্বনিতে অনুরণিত হয় আকাশবাতাস।
এজিদ ও হেসেনের দ্বন্দ্ব
আজকের ইরাকের বাগদাদ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই কারবালার প্রান্তর। আনুমানিক ৬১ হিজরির ১০ মহরম অর্থাৎ আশুরার দিন, ফোরাত বা ইউফ্রেটিস নদীর তীরে হয়েছিল এক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে হজরত হোসেন ও তার পরিবার-পরিজন-সহ প্রায় ৭২ জন শহিদ হন। জানা যায়, এজিদের শাসননীতি ও কর্মকাণ্ড ইসলামের মৌলিক নীতির পরিপন্থী হওয়ায় ইমাম হোসেন তাঁর আনুগত্য অস্বীকার করেন। হোসেন ইবনে আলি ছিলেন মহম্মদের নাতি, যাঁর জন্ম ৬২০ খ্রিস্টাব্দে। বড় হয়ে হোসেন একজন নেতা হয়ে ওঠেন। যিনি তাঁর করুণা, প্রজ্ঞা এবং সততার জন্য বিপুলভাবে পরিচিত ছিলেন। মহম্মদ মারা গেলে ইসলামি সাম্রাজ্য বিপদের মুখে পড়ে। হোসেন দেখতে পান, খলিফা এজিদ তাঁর নিজস্ব স্বার্থ মাথায় রেখে শাসন করতে শুরু করেছেন এবং এইভাবে মহম্মদের ইসলামি শিক্ষা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যেতে শুরু করেছে। হোসেন এজিদকে অস্বীকার করেন।
৩০ হাজার সৈন্যের সঙ্গে ৭২ জনের যুদ্ধ
এদিকে, এজিদ হোসেনকে তাঁর নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য ৩০ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী পাঠান। হোসেন তাঁর নীতিতে অটল থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এর পর যুদ্ধ শুরু হয়। যেখানে একদিকে ছিল এজিদের ৩০০০০ সৈন্যবাহিনী এবং অন্যদিকে ছিলেন হোসেন এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গী মাত্র। কারবালার যুদ্ধ বিকেলে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে হোসেনের সঙ্গীদের সংখ্যা কমতে থাকে। সন্ধ্যা নাগাদ হোসেন সম্পূর্ণ একা হয়ে যান। ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত এবং আহত হওয়া সত্ত্বেও, তিনি হাল ছাড়েননি এবং শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত নীতিতে অটল থাকেন। এরপর, এজিদের সেনাবাহিনী হোসেনকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং তাঁকে আক্রমণ করে, যার ফলে হোসেন নিহত হন। যেদিন এজিদ তাঁর লোকদের হোসেনকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই দিনটিই ছিল ইসলামি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাসের, অর্থাৎ, মহরমে দশম দিন। এই দিনটিই ‘আশুরা’ হিসেবে পরিচিত।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)