অরূপ বসাক: ডুয়ার্সের ঘিস নদীর পশ্চিমপ্রান্তে রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতার হাতছানি দিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘জলভেজা রেস্তোরাঁ’ (Floating Restaurant)। নদীর বুকের উপর চেয়ার-টেবিল পেতে খাওয়ার এই অভিনব আয়োজন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হলেও এর বিপদসংকুল দিকটা উপেক্ষিত ছিল সম্পূর্ণভাবে। শেষমেশ, বুধবার রাতে পুলিস প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে গেল এই ধাবা।
ধাবা মালিক আজম প্রধান জানিয়েছেন,”নদীতে জল কম থাকায় এমন ভাবনা মাথায় আসে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করি, পরে খদ্দের বাড়তে থাকায় বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে প্রশাসনের নির্দেশে বর্তমানে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছি এবং নদীতে নামার সমস্ত রাস্তা বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পুনঃপরিদর্শনের পর অনুমতি মিললে দোকান আবার খোলা হতে পারে।”
স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বিনা অনুমতিতে নদীর মধ্যে এই ধরনের বিপজ্জনক রেস্তোরাঁ চালানো চলতে পারে না। যে কোনও সময় হড়পা বানের জেরে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা।” পরিবেশপ্রেমী তথা নদী নিয়ে কাজ করা ব্যাক্তি মৃনাল সিংহ রায় কড়া ভাষায় জানান, “এই ধরণের আয়োজন সরাসরি জীবনের ঝুঁকি। পূর্বে এমন দুর্ঘটনায় বহু প্রাণ গেছে। এই ধরণের ট্রেন্ড বন্ধ করা জরুরি।”
বিগত কয়েক বছরে ডুয়ার্সের বিভিন্ন নদীতে হড়পা বানে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে– ২০২৫ সালে ডায়না নদীতে হড়পা বানে মৃত্যু হয় দুই যুবকের। গত ৪ বছরে জলঢাকা নদীতে প্রাণ হারায় পাঁচ যুবক। ২০২৪ সালে চেল নদীতে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে মাল নদীতে বিসর্জনের সময় ৮ জনের মৃত্যু হয়।এ বছরের জুন মাসেই আলিপুরদুয়ারের বাংড়ি নদীতে যাত্রীবোঝাই বাস আটকে পড়ে হড়পা বানে—যদিও তখন কোনও প্রাণহানি হয়নি।
ঘটনার পর মালবাজার থানার পুলিস আজম প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ধাবা বন্ধের নির্দেশ দেয়। ঘিসবস্তি এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, “ঘৃিস নদীর জলস্তর যখন তখন বেড়ে যেতে পারে। পুলিস প্রশাসন যা করেছে, তা একদম ঠিক পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে এই ধরনের বেয়াইনি কার্যকলাপ যেন না ঘটে, তা নজরদারিতে রাখা হবে।”
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
