প্রবীর চক্রবর্তী: ‘বাংলায় পরিবর্তন হয়ে গেছে, নতুন করে পরিবর্তনের দরকার নেই। দিল্লিতে পরিবর্তনের দরকার’! একুশের মঞ্চ থেকে এই ডাক মমতার (Mamata Banerjee)। তিনি বলেছেন, ”গত তেত্রিশ বছর ধরে এই দিনটা আমরা ‘শহিদ দিবস’ (21st July TMC Shahid Diwas), ‘গণতন্ত্র বাঁচাও দিবস’ হিসেবে পালন করি। এই সংগ্রাম সেদিন শেষ হবে, যেদিন দিল্লি থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে পারব।” মমতা বলেন, ‘গ্যাস যাবে রাজ্যের উপর দিয়ে, ৫৪ কোটি টাকা আমরা দিয়েছি। আর ফিতে কাটবেন আপনারা।’ এবারের ভিড় নিয়ে মমতা বলেন, ‘এবার যা ভিড় হয়েছে, একটা ব্রিগেড নয়, দশটা ব্রিগেড হতে পারে।’
বাঙালি অস্মিতায় আঘাত
আপনারা বাংলা ভাষার উপর এত সন্ত্রাস কেন করছেন? বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বাঙালিদের উপর এই সন্ত্রাস যদি বন্ধ না হয়, তাহলে এই লড়াই কিন্তু দিল্লি পর্যন্ত যাবে। বাংলা ভাষার উপর কোনো অপমান আমরা মানব না। একটা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার কী ফল পেয়েছিলেন, মনে আছে তো? ইলেকশনের সময় হঠাৎ করে মা দুর্গার কথা মনে পড়ল? জগন্নাথ ধামের মতো একটা দুর্গা অঙ্গন আমি করব।
বাংলা বঞ্চনা
আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ৯৪টা প্রকল্প আছে। সামাজিক স্কিম। গত কয়েক বছরে বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশ আমরা কমিয়েছি। বিজেপি বলেছিল, প্রতিবছর দুই কোটি বেকারকে কাজ দেবে। দুই কোটি চাকরি দেবেন বলেছিলেন। কী করেছেন? বলছেন, বাংলায় উন্নয়ন করবেন ? একশো দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন, বাংলার বাড়ি বন্ধ করে দিয়েছেন।
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। আগেরবার বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল। আর এই দেখুন বিজেপির সার্কুলার। আমাদের পাঠায়নি, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিকে পাঠিয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, যাকে মনে হবে, সন্দেহ হবে বাংলাদেশি বলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে হবে। বাংলা ভাষার উপর চলছে বিরাট সন্ত্রাস। বাংলা এসব মানবে না। এখানে সব মানুষের অধিকার সংরক্ষিত হবে। বিজেপির একজন বলছেন, এখানে নাকি ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা রয়েছে। আরে! সারা পৃথিবীতে কত রোহিঙ্গা আছে? একটা রিপোর্ট বলছে, সারা পৃথিবীতে মোট প্রায় ১৩/১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে! কোচবিহারের এই ভাই উত্তম রাজবংশী। তাকে অসম সরকার নোটিস পাঠিয়েছে। কী অধিকার আছে আপনাদের? এত বড় সাহস! ওড়িশায় এক ছাত্রী যখন নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে চেয়েছিলেন, তখন তাকে পুড়িয়ে দিয়েছেন। কী উত্তর দেবেন এর?
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: অবশেষে পরিষ্কার হয়ে গেল, ২১ জুলাইয়ে ‘শহিদ স্মরণ’ মঞ্চেই থাকছেন দিলীপ ঘোষ! তবে…
ইলেকশন কমিশনকে
ইলেকশন কমিশনকে হুঁশিয়ারি দেন মমতা। বিহারে যেভাবে ৪০ লক্ষের মানুষের নাম বাদ দিয়েছেন, আর বলছেন, বাংলাতেও এমন করবেন। যদি বাংলায় এমন করতে যান, তাহলে পুরো ঘেরাও করা হবে।
বাংলায় কাজ নেই?
আবার বলছে বাংলায় তো কাজ নেই, তাই সবাই বাইরে চলে গিয়েছে। আমি ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত একটা হিসাব দিই– যারা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এই সময়ে প্রায় ৫ হাজার শিল্পপতি দেশ ছেড়েছেন। বাংলা থেকে কোনো শিল্পপতিদের চলে যেতে হয়নি। বরং বাংলায় শিল্পপতিরা আসছেন।
কিসের হিন্দু আপনারা?
অসমের মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্বশর্মা), আপনি অসম সামলাতে পারছেন না, আর বাংলাকে লক্ষ্য করছেন? আমি সুস্মিতা দেবকে বলছি, অসমে আন্দোলন শুরু করো, আমরা সবাই যাব। প্রয়োজনে আবার ভাষা আন্দোলন হবে। দেখতে চাই আপনাদের কত ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে। আপনাদের কন্ট্রোল করছে ইউএসএ। কিসের হিন্দু আপনারা? কেন আপনারা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে পারলেন না?
বিজেপিকে জবাব?
বিজেপি যতই বলো– তোমরা নিজেরা বদলে যাবে কিন্তু এখানে বদলানো যাবে না। ২০২৬ সালে আরও বেশি সিট নিয়ে জিততে হবে। আর জেতার পর ২০২৯-এ দিল্লিতে বিজেপিকে হারাতে হবে। ২০১১ সালে যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম, তখন বলেছিলাম– বদলা নয়, বদল চাই। কিন্তু এবার আমি বলছি– ‘জব্দ হবে, স্তব্ধ হবে! আমাদের গর্জন, তোমাদের বিসর্জন।’ বাকিটা বুঝে নিন।
গুজরাটে বসে
গুজরাটে বসে বসে এখানকার লোকের নাম কাটছে। একটা বাংলার লোকের নামের সঙ্গে চার পাঁচটা বিজেপির রাজ্যের লোকের নাম ঢোকাচ্ছে। এরা কয়লা গরু, সব টাকা খায়। কারণ বিএসএফ এদের আন্ডারে। পুলিসকে পর্যন্ত আপনারা জুতো দিয়ে আঘাত করেন। তাদের মা-বোনেদের কটুকথা বলেন। কী ভেবেছ, ইডি আর সিবিআইকে পাঠিয়ে সবাইকে জেলে ভরবে!
বিজেপি আর বাম বিসর্জন
তৃণমূলের দর্শন– ‘বিজেপি আর বাম বিসর্জন’! মহারাষ্ট্রে আপনারা জোর করে হারিয়েছেন। দিল্লিতেও হারিয়েছেন। বিহারে আপনারা ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়েছেন। বাংলা আপনাদের টার্গেট আমি জানি। বাংলায় পরিবর্তন হয়ে গেছে, নতুন করে পরিবর্তনের দরকার নেই। দিল্লিতে পরিবর্তনের দরকার।
পাল্টা-বিজেপির পাল্টা
আমরা প্রোগ্রাম করলে বিজেপিকে পাল্টা প্রোগ্রাম করতে হয়? এবার আমরাও তাই করব। তোমার আমাদের পথ দেখিয়েছ। তোমরা দিল্লির নেতাদের নিয়ে প্রোগ্রাম করলে সেইদিন আমরাও প্রোগ্রাম করব। কথায়-কথায় আমার বাড়ির সামনে যাওয়া? নবান্নে যাওয়া? তাহলে আপনাদের নেতাদের বাড়ির সামনে কেন যাবে না? এবার তোমাদের নেতাদের বাড়িতেও যাওয়া হবে।
গান্ধী স্ট্যাচুর সামনে ধরনা
গান্ধী স্ট্যাচুর সামনে আমাদের সব সাংসদদের একদিন ধরনা দিতে বলব। খেলোয়াড়দেরও বলব, আপনারাও বাঙালিদের হেনস্থা করা নিয়ে ধরনা দিন। আজ থেকে শুরু হল আন্দোলন, চলবে আগামী নির্বাচনের রেজাল্ট বের হওয়া পর্যন্ত। ইলেকশন কমিশন বিজেপির লোকে ভর্তি। সিপিএম তো এত চুরি-ডাকাতি করল, এত খুন করল, একটাও গ্রেফতার হয়েছে। হয়নি। বিজেপির সঙ্গে সেটিং করে।
আগামীর কর্মসূচি
১) আগামি ২৬ জুলাই থেকে প্রতি শনি-রবিবার বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপর আক্রমণ, অত্যাচার নিয়ে মিটিং মিছিল করুন, ধর্না করুন।
২) ২৭ জুলাই নানুর দিবস। ওই দিন থেকে টানা ইলেকশন পর্যন্ত এটা চলবে। ওইদিন থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হবে। ভাষার উপর সন্ত্রাস মানছি না, মানব না! বাঙালিদের উপর অত্যাচার মানছি না, মানব না।
৩) ৯ আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবসের দিন ‘বিজেপি তুমি ভারত ছাড়ো’ পালন করা হবে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)