শ্রীকান্ত ঠাকুর: অবশেষে মৃত্যুর পরে হলেও ধর্ষণে নির্যাতিতা বিচার পেলেন। আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত এক প্রৌঢ়াকে গণধর্ষণে অভিযুক্তদের সাজা ঘোষণা করল বালুরঘাট আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে সাজা ঘোষণা করল বালুরঘাট জেলা আদালত। আজ থেকে নয় বছর আগে গণধর্ষণের শিকার আদিবাসী মহিলা অবশেষে বিচার পেলেন বালুরঘাটে।
বালুরঘাট কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার:
ওই ঘটনায় তিনজন অভিযুক্ত ২০১৪ সাল থেকে বালুরঘাট কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দী ছিলেন। এদিন বালুরঘাট জেলা আদালতে এসসি এসটি প্রিভেনশন অফ এক্রোসিটিস স্পেশাল কোর্টে বিচারপতি সন্তোষ কুমার পাঠক দোষীদের বিরুদ্ধে ‘অন পয়েন্ট অফ সেন্টেন্স’ চূড়ান্ত রায়দেন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত তিন জনকে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করলো জেলা আদালত যাকে সরকারি আইনজীবী ঋতব্রত চক্রবর্তী দৃষ্টান্তমূলক সাজা বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত:
বালুরঘাট শহরের একটি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন ওই নির্যাতিতা আদিবাসী প্রৌঢ়া। ভাড়া বাড়িতে থেকেই রাজমিস্ত্রির কাজে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। সেই সময় একদিন মাঝরাতে যেন তার জীবনে বিভীষিকা নেমে আসে। তিন দুষ্কৃতি জোরপূর্বক তার ঘরে ঢুকে অমানবিক নির্যাতন চালায়।
অভিযোগ দায়ের:
ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করে নির্যাতিতা ওই আদিবাসী মহিলা ২০১৪ সালের ৮ জুলাই বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যেখানে তিনজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির কথা তিনি তুলে ধরেন। অভিযোগপত্রে ওই তিন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের পাশাপাশি পাশবিক নির্যাতনের কথা উঠে আসে।
অভিযোগ পাওয়া মাত্রই বালুরঘাট থানার পুলিস ঘটনার তদন্তে নামে। তদন্তে ওই এলাকারই তিন তরুণের নাম পুলিশের সামনে আসে। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ওই তিন সন্দেভাজন তরুণকে আটক করে পুলিস। দ্রুত টিআই প্যারেডের মাধ্যমে ওই তিনজন তরুণকে চিহ্নিত করেন মহিলা। অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয় তাদের বিরুদ্ধে। ওই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে তদন্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।
পৈশাচিক নির্যাতনের প্রমাণ:
মামলা চলাকালীন নির্যাতিতা মহিলার শরীরে কামড়ের গভীর ক্ষত নিয়ে তদন্ত শুরু করে বালুরঘাট থানার তৎকালীন সাব-ইন্সপেক্টর তথা কেসের ইনভেস্টিগেটিং অফিসার কৃষ্ণ বেরা। তখনই ওই তিন তরুণের দাঁতের ডাইস সংগ্রহ করে ওই মহিলার ক্ষতের সঙ্গে মেলানো হয়। যেখানে উঠে আসে ওই তিন তরুণের মধ্যে একজনের ওই কামড়। তদন্তে উঠে আসে একাধিক পাশবিক নির্যাতনের প্রমাণ।
বালুরঘাট জেলা আদালতে সরকারি আইনজীবী ঋতব্রত চক্রবর্তী জানান, ‘বিচার শেষে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ৪৫৮, ৩৭৬(ঘ) ও ৩৪ ধারায় ওই তিন আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মামলায় ভাড়াবাড়ির মালিকসহ বিভিন্ন সাক্ষীদের বিরূপ সাক্ষী ঘোষণা করা হয়।
পরে সকল তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে তুলে ধরলে তারা সত্যতা স্বীকার করেন। পুলিস সক্রিয়ভাবে তদন্ত করেছে। বিশেষ করে দাঁতের ডাইসের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নির্যাতিতা আদিবাসী মহিলা জীবদ্দশায় অনেকটাই অগ্রগতি দেখে গিয়েছেন। পরে বার্ধক্য জনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)