প্রদ্যুত্ দাস: কোথাও ছাত্রছাত্রী নেই। কোথাও আবার শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব। আর এরই জেরে জলপাইগুড়ি জেলায় পড়ুয়া-শূন্য হয়ে পড়েছে ১৪টি সরকারি জুনিয়র হাইস্কুল! ছাত্রছাত্রী দশের নীচে নেমে এসেছে, জলপাইগুড়িতে এমন স্কুলের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ফলে সেগুলিও প্রায় বন্ধের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। যা ঘিরে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। যদিও কোনও সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা সরাসরি স্বীকার করতে নারাজ জেলা শিক্ষা বিভাগের কর্তারা।
তাঁদের দাবি, পড়ুয়া কিংবা শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকায় স্কুলগুলি এখন ফাঁকা। ভবিষ্যতে কখনও ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষক পেলে সেগুলি আবারও চালু হবে। জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বালিকা গোলে বলেন, ‘আমাদের জেলায় মোট ১৬১টি সরকারি জুনিয়র হাইস্কুল রয়েছে। এরমধ্যে ১৪টি স্কুল পড়ুয়া-শূন্য হয়ে গিয়েছে। আরও কিছু স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে। ওই স্কুলগুলিতে যাতে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়ানো যায়, তার চেষ্টা করছি আমরা।’
জেলা শিক্ষা বিভাগ সূত্রে খবর, ধূপগুড়িতে দু’টি জুনিয়র হাইস্কুল পড়ুয়াশূন্য হয়ে পড়েছে। একজনও ছাত্রছাত্রী নেই, মেটেলিতে এমন সরকারি জুনিয়র হাইস্কুলের সংখ্যা একটি। নাগরাকাটাতেও একটি এ ধরনের স্কুল রয়েছে। ময়নাগুড়িতে পড়ুয়া-শূন্য জুনিয়র হাইস্কুলের সংখ্যা দু’টি। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া-শূন্য জুনিয়র হাইস্কুল রয়েছে রাজগঞ্জে। সেখানে চারটি সরকারি জুনিয়র হাইস্কুলে একজনও পড়ুয়া নেই।
মালবাজারে এ ধরনের দু’টি স্কুল রয়েছে। জলপাইগুড়ি সদরে পড়ুয়া-শূন্য জুনিয়র হাইস্কুলের সংখ্যা দু’টি। এগুলির বাইরেও জেলায় বহু জুনিয়র হাইস্কুল রয়েছে, যেখানে কোথাও সাকুল্যে পড়ুয়া পাঁচ-ছ’জন। কোথাও আবার খাতায়কলমে দশজন ছাত্রছাত্রী থাকলেও আসে মাত্র তিন-চারজন। সম্প্রতি জলপাইগুড়ি সদরের অরবিন্দ পঞ্চায়েতের নয়াপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র দু’জন পড়ুয়া নিয়ে ক্লাস চলছে। একই অবস্থা জলপাইগুড়ি সদরের বাহাদুর পঞ্চায়েতের চড়কডাঙি জুনিয়র হাইস্কুলের।
দিন কয়েক আগে ওই স্কুলে গিয়ে নজরে পড়ে, মাত্র তিনজন পড়ুয়া এসেছে। তাদের নিয়ে ক্লাস হচ্ছে। ছবিটা মোটেই আলাদা নয় জলপাইগুড়ি সদরের রাখালদেবী গার্লস জুনিয়র হাইস্কুলের। এখানে খাতায়কলমে পড়ুয়ার সংখ্যা ছ’জন। কিন্তু বেশিরভাগ দিন সবাই স্কুলে আসে না। তখন বাধ্য হয়ে শিক্ষিকারা কখনও পড়ুয়াদের অভিভাবকদের ফোন করেন। কখনও আবার নিজেদেরাই গ্রামে ছাত্রী খুঁজতে বের হন।
যদিও এ প্রসঙ্গে এবিটিএ জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় জানান, দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষক নিয়োগ নেই, স্কুলগুলোর পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে,ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। চিন্তায় অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে ডিআই এর সাথে কথা বলা হয়েছে। সরকারের কোন এ বিষয়ে হেলদোল নেই বলে অভিযোগ তোলেন শিক্ষক বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন।
যদি অভিভাবকরা জান স্কুলগুলোতে ইংলিশ মাধ্যম সুযোগ সুবিধা পেলে ছেলেমেয়েরা সরকারি স্কুলে কম খরচে এই সুবিধা পেতে পারি। ইংরেজি মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন। শহরের এফডিআই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, শিক্ষকের অভাবেই ইংরেজি মাধ্যমে পঠন পাঠন আপাতত বন্ধ। বিষয়টি ডিআই এর নজরে আনা হয়েছে। অপরদিকে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে না চাইলেও অঞ্জন দাস সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, জলপাইগুড়ি, টেলিফোনে জানান, এ বিষয়ে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা কথা না বলা পর্যন্ত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন, Kidnapped Students recovered: পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্টেই অপহরণের নাটক ক্লাস টেনের ছাত্রীর! শেষে…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)