বরুণ সেনগুপ্ত: কখনও লাথি, কখনও ফেলে মারছে। বাড়ির CCTV ফুটেজ দেখে আঁতকে উঠছেন সকলে। বাড়ির বউয়ের সঙ্গে যে এরকম আচরণ করা যায় তা স্বচক্ষে না দেখলে হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করতেন না। ঘটনাটি হাওড়ার সালকিয়ার। বরানগরের বাসিন্দা রিয়া দাসের সঙ্গে দু-বছর আগে বিয়ে হয়েছিল হাওড়ার যুবক শুভজিৎ হাজরার। অভিযোগ, শুভজিৎ হাজরা তার দিদির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। আর সেই সম্পর্ক জানতে পেরে স্ত্রী রিয়া প্রতিবাদ করেন।
আরও পড়ুন, West Bengal Weather Update: সাগরে তৈরি হচ্ছে নিম্নচাপ, বৃষ্টিতে ভাসবে দক্ষিণের একাধিক জেলা
কিন্তু রিয়ার অভিযোগ, শুধরে যাওয়া তো দূর প্রতিবাদ করার পর থেকেই শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। রিয়াকে প্রতিবাদের মাশুল দিতে হয় মারধর খেয়ে। ঘরের মধ্যে মাটিতে ফেলে নৃশংসভাবে মারধর করে স্বামী শুভজিৎ হাজরা। আর মারধর করার সময় শ্বশুর-শাশুড়ি থেকে শুরু করে বাড়ির অন্যান্যরা সামনে দেখে সেই মারধর দেখেন কিন্তু আটকান না। বাড়িতে সিসিটিভি থাকার কারণে সেই মারধরের ছবি ধরা পরে ক্যামেরায়।
এদিন সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই অত্যাচারের কাহিনির বর্ণনা দেন রিয়া। তিনি লেখেন, ‘আমি ৩ মে ২০২৩ সালে বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকেই আমাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। ঝামেলাটা বাড়াতে থাকেন আমার ননদ। তার যুক্তি ছিল—বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একসাথে কেন থাকবে, তারা দু’জন একসাথে কেন ঘুরতে যাবে, যেখানে যাবে আমার ভাই আমাকেই নিয়ে যাবে, রাতে আমার সাথে এক ঘরে এক বিছানায় শোবে। প্রতিদিন সমালোচনা, প্রতিদিন ব্রেনওয়াশ, প্রতিদিন মারধর—আমি সহ্য করে গেছি শুধু আমার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে। এর আগেও যখন ঝগড়া হলো আর মারধর করল, তখন আমার বাড়ির লোক এসে জয়কে বোঝালো—“কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে চোখের সামনে অন্য কারও পাশে শুয়ে থাকতে দেখতে পারে না, এটা তোমার বুঝতে হবে।”
‘তাতে এক মাস ঠিকঠাক ছিল, তারপর আবার আগের মতোই শুরু হলো—আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা, রাত ১/২টা পর্যন্ত রোজ মা ও দিদির সঙ্গে গল্প করা, আমি কথা বলতে গেলে বলা—“তোমার জন্য সময় নেই, যাও।” আমি বাইরে নিয়ে যেতে বললে—“তুমি গরিব ঘরের মেয়ে, আমার সুনাম নষ্ট হয়, তুমি কলগার্ল, তুমি ধেমনি”—এই ধরনের কথা প্রতিদিন শুনেছি। তারপর ১০ আগস্ট রাতে আমি পাড়ার লোকজনকে জানালাম—আমার স্বামীর তার দিদির সঙ্গে সম্পর্ক আছে, আমি বাধা দিলেই সে আমাকে মারে, আপনারা বাঁচান। সে আমার পাড়ায় এসে ঝগড়া করল, আমার নামে নোংরা কথা বলল আর কিছু ভিডিও দেখাল যেখানে আমি তাকে গালাগাল দিয়েছি।’
‘হ্যাঁ, গালাগাল করেছি—কারণ মারলে আমারও কষ্ট হয়, তাই দিয়েছি। বাবা-মা কষ্ট করে বড় করেছেন, বারবার অপমান সইবার জন্য নয়। কালকে আমার পাড়ায় এসে আবার ঝগড়া করল, আমার বাবাকে খুব মারল—নাক দিয়ে-মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল। এত কিছুর পর আমি থানায় গিয়ে ৪৯৮ ধারায় মামলা করলাম, অ্যাটেম্পট টু মার্ডার কেস করলাম। তারপরও জয় চারজন উকিল নিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল। আমার বাবার দেওয়া সোনার গয়না, আমার নথিপত্র—সবই এখন ওদের বাড়িতে। নিতে গিয়ে দেখি, বাড়ি ফাঁকা, সবাই তালা মেরে বেরিয়ে গেছে। আমি বাবার বাড়িতে আছি, এখানে মারধর খাচ্ছি না, গালাগালও খাচ্ছি না, সুস্থ আছি। ছেলেকে নিয়ে ভালো আছি।’
‘এই কথাগুলো লিখলাম আর ভিডিওগুলো পোস্ট করলাম—তাদের জন্য যারা আমাকে উপদেশ দিয়েছে, একটা বাচ্চা নিয়ে বাবার বাড়িতে কীভাবে থাকব, আমার ফিরে যাওয়া উচিত। আমি-ও পাঁচজন মানুষের মতো বাঁচতে চাই। বিনা দোষে আর কষ্ট সহ্য করতে পারব না। যখন মার খাচ্ছিলাম, কষ্ট পাচ্ছিলাম—তখন পাশে কেউ ছিল না। আজও কারও পাশে চাই না। আমি যেমন আছি, বেঁচে আছি, ভালো আছি।’
যদিও এই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি জি ২৪ ঘণ্টা। বরানগরের বাসিন্দা রিয়ার শ্বশুরবাড়ি হাওড়া সালকিয়া বাবুডাঙ্গা এলাকায়। গোটা ঘটনার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের নামে মালিপাচঘরা থানায় অভিযোগ দায়ের করে রিয়া ও তার পরিবার। কিন্তু অভিযোগ স্বামী প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিস নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এমনকি রিয়া দাসের বরানগরের বাড়িতে এসে তার বাবাকে মারধর করে স্বামী শুভজিৎ হাজরা। আতঙ্কে গৃহবন্দী হয়ে রয়েছে রিয়া ও তার পরিবার। অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তি দাবি করেছে তার পরিবারের লোকজন।
আরও পড়ুন, Purulia: মা ও দুই মেয়েকে নৃশংস খু*ন করে রেললাইনে ফেলে গেল! পুরুলিয়ায় বাড়ছে রহস্যের আঁচ…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
