বেজে গেল মহাবিপদঘণ্টা, FIFA নির্বাসনের মুখে ভারত! মোহনবাগান AFC খেলতে পারবে তো?


দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়: এই মুহর্তে ভারতের পুরুষ ফুটবল দলের ফিফা র‌্যাঙ্কিং (Indian Football Team Fifa Ranking) ১৩৩! হ্যাঁ, প্রথম একশোর মধ্যেও নেই সুনীল ছেত্রীরা। আর যত দিন যাচ্ছে ফিফা ক্রমতালিকা পিছিয়ে পড়ছে ভারতীয় দল! আর একই ভাবে পাল্লা দিয়ে সামগ্রিক ভারতীয় ফুটবলের গ্রাফও পড়ছে। এবার ঘনিয়ে এল মহাবিপদ। ফের একবার ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া ঝুলছে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের উপর! বিগত তিন বছরে এই নিয়ে দু’বার ফিফা নির্বাসনের মুখে ভারত!

একযোগে চরমপত্র 

ভারতীয় ফুটবলকে একযোগে চরমপত্র দিয়েছে ফিফা ও এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন ওরফে এএফসি। আগামী ৩০শে অক্টোবরের মধ্যে এআইএফএফ-কে তাদের দীর্ঘ বিলম্বিত সংবিধান অনুমোদন করার নির্দেশ দিয়েছে। আর এই নির্দেশ না মানলে ফিফা কিন্ত নির্বাসনের মতো কঠিন পদক্ষেপও নিতে পারে। আর ফেডারেশন নির্বাসিত হলে শুধু জাতীয় দলই নয়, ক্লাবগুলিও কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না! এর সঙ্গেই জুড়বে আর্থিক ক্ষতিও!

আরও পড়ুন: ২২৭৯৭২০৩০০০০০০০০০ টাকার কোম্পানি, তাদেরই বানানো মোদীর বাহন, এবার রোহিতদের স্পনসর!

ফিফা ও এএফসি

​মঙ্গলবার ফিফা ও এএফসি, ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবেকে যৌথ চিঠি পাঠিয়ে, ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও এআইএফএফ তাদের সংশোধিত সংবিধান চূড়ান্ত এবং কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে।​ফিফা বহুবার এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই এআইএফএফ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে বিষয়টি বিচারাধীন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও, একটি সুস্পষ্ট এবং সঙ্গতিপূর্ণ শাসন কাঠামোর অনুপস্থিতি ভারতীয় ফুটবলের কেন্দ্রস্থলে একটি অস্বস্তিকর শূন্যতা এবং আইনি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।’

সুপ্রিম শুনানি

​এই পরিস্থিতিতে, সুপ্রিম কোর্টে শুনানির দু’দিন আগে এআইএফএফ-কে ‘একটি নির্দিষ্ট আদেশ সুরক্ষিত’ করতে বলা হয়েছে। এই আদেশ অনুযায়ী, ফিফা ও এএফসি-র নিয়মাবলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধিত সংবিধানকে অনুমোদন করাতে হবে এবং সময়সীমার মধ্যে সাধারণ পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে। ​ফিফা-র সদস্য অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান এলখান মামেদভ এবং এএফসি-র ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ভাহিদ কার্দানি চিঠিতে বলেছেন, ‘এই বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে ব্যর্থ হলে ফিফা ও এএফসি-র নিয়মাবলী অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা হতে পারে, যার মধ্যে নির্বাসনের সম্ভাবনাও রয়েছে।’ ​চিঠিতে আরও বলা হয়েছে,’তৃতীয় পক্ষের প্রভাবের জন্য একটি সদস্য সংস্থাকে ফল ভোগ করতে হতে পারে, এমনকী যদি তারা সরাসরি দোষী না হয়! এআইএফএফ-কে নির্বাসিত করা হলে ফিফা এবং এএফসি সদস্য হিসেবে তাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন: বিরাট ধাক্কা! বিসিসিআই-আইপিলের ৬২৫০০০০০০০ টাকার ক্ষতি, বুক পুড়ছে প্রীতিদেরও…

এআইএফএফ-ফিফা

​এআইএফএফ আগে ফিফা-র পাঠানো চিঠিগুলি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টকে জানায়নি, কিন্তু এবার তাদের এই চিঠিটি আদালতে এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। ​চিঠিতে লেখা আছে, ‘এআইএফএফ-কে অবশ্যই এই চিঠিটিকে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং দ্রুত মেনে চলার যোগ্য বলে বিবেচনা করতে হবে, যাতে ফিফা এবং এএফসি-র সদস্য হিসেবে তাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে।’ ​এআইএফএফ-কে এও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ‘তাদের কার্যকলাপ স্বাধীন ভাবে এবং কোনও তৃতীয় পক্ষের, যেমন সরকারি সংস্থার, অযাচিত প্রভাব ছাড়াই পরিচালনা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’

কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস

​​২০২২ সালের ১৬ই আগস্ট এআইএফএফ-কে নির্বাসিত করা হয়েছিল, কারণ তারা নিয়মাবলী মানতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরসকে (সিওএ) ফেডারেশন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যা তৃতীয় পক্ষের প্রভাব বলে বিবেচিত হয়। ​দশ দিন পর নির্বাসন তুলে নেওয়া হয়, যখন সুপ্রিম কোর্ট কমিটি ভেঙে দেয় এবং ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর এআইএফএফ-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে কল্যাণ চৌবে বাইচুং ভুটিয়াকে পরাজিত করে নির্বাচিত সভাপতি হন।​২০২৫ সালের ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট জানায় যে তাদের রায় প্রস্তুত এবং শুধু ন্যাশনাল স্পোর্টস গভর্নেন্স অ্যাক্ট থেকে প্রাসঙ্গিক অংশগুলি অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন। ফিফা জানিয়েছে যে নতুন সংবিধানটি উভয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।

অনিশ্চিত আইএসএল

​ফিফা আরও বলেছে যে এই দীর্ঘ অচলাবস্থা একটি ‘শাসন ও পরিচালন সংকট’ তৈরি করেছে, যার ফলে ২০২৫-২৬ সালের ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএস) অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ক্লাবগুলি তাদের প্রথম দলের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং খেলোয়াড় ও কর্মীদের চুক্তি স্থগিত করেছে। ​চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ক্লাব এবং খেলোয়াড়রা ঘরোয়া প্রতিযোগিতার সূচি সম্পর্কে অনিশ্চিত; ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের পরের বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব এখনও নিশ্চিত হয়নি; এবং উন্নয়ন, প্রতিযোগিতা ও বিপণন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক স্থিতিশীলতার অভাব ভারতীয় ফুটবল ইকোসিস্টেমে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে আইএসএল-এর খেলোয়াড়দের ওপর, যা এআইএফএফ-এর তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়।’

আরও পড়ুন: ৩৫০০০ রান + ১০২ সেঞ্চুরি, এশিয়া কাপের আগেই অবসর মহারথীর! মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল ভারতের…

এফএসডিএল

​১২ আগস্ট বিশ্ব খেলোয়াড় ইউনিয়ন FIFPRO ভারতীয় ফুটবলের পরিস্থিতি নিয়ে ফিফা-র কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এর দু’ সপ্তাহ পর ফিফা এই চিঠিটি পাঠায়, যা এআইএফএফ এবং তাদের বাণিজ্যিক অংশীদার (এফএসডিএল) কর্তৃক ২০২৫-২৬ সালের আইএসএল আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার পরের দিনই এসেছে। এই পরিকল্পনা বৃহস্পতিবার আদালতে পেশ করা হবে।

 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *