Durga Puja 2025: ষষ্ঠীর বোধনে স্বয়ং রামের হাত! দেবী দুর্গার ঘুম ভাঙিয়েই শুরু হয় পুজো… কেন জানেন?


জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির আবেগ, ভালোবাসা। প্রতি বছর আট থেকে আশি বাঙালিরা পুজোর এই পাঁচটা দিনের অপেক্ষায় বসে থাকে। মহালয়া থেকে গোটা বাংলার হাওয়া এক আলাদাই অনুভূতি ভেসে বেড়ায়। ষষ্ঠীর দিন সকালে হয় দেবী দুর্গার বোধন। কী এই বোধন? কেন ষষ্ঠীতেই দেবী দুর্গার বোধন হয়? কেন-ই বা এই দিন থেকে দেবী দুর্গার পুজো শুরু হয়? 

Add Zee News as a Preferred Source

আরও পড়ুন:Bengal Weather Update: উত্তাল সমুদ্র! পুজোর মুখে ঘূর্ণাবর্তের জেরে রাজ্যজুড়ে তুমুল বৃষ্টি, মহালয়ায়…

ষষ্ঠীর দিন সকালে, মানে দেবী দুর্গার ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং এদিনই সন্ধেবেলায় ষষ্ঠিবিহিত পূজা, যাকে আমরা দেবীর বোধন বলে উল্লেখ করি। ‘বোধন’ মানে, জাগরণ। ‘বোধন’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ– ‘বোধ’+’অনট’ ধাতু= জাগ্রত করা। কিন্তু কেন জাগ্রত করা? দেবীর চৈতন্যেই তো জারিত হয়ে রয়েছে সমস্ত নিখিল জগৎ; এহেন দেবীকে আবার আলাদা করে জাগানোর কী প্রয়োজন? 

পুরাণ অনুসারে, শরত্‍কালে দক্ষিণায়ন চলে। আর দেবলোকে দক্ষিণায়ন মানে রাত। আর রাত মানের ঘুমের সময়। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই সময় দেব-দেবীরা নিদ্রায় থাকেন। আর শাস্ত্রমতে, এই সময়ে দেব-দেবীর পুজোর করা যায় না। সেই একই কারণে শরৎকাল পুজোর জন্যে উপযুক্ত সময় নয়। তাই এই সময় দেবতার পুজো করতে হলে, দেব-দেবীকে জাগাতে হয়। জাগরনের এই প্রক্রিয়াটিই হল বোধন। কিন্তু কী এমন আপদকালীন সময় আসে যে, শাস্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে দেবী দুর্গাকে ঘুম থেকে জাগানো হয়?

জানা যায়, আসলে পুরাণমতে শরতে রাম-রাবণের যুদ্ধের সময়। রাবণ দেবীদুর্গারও উপাসক। কালিকাপুরাণ অনুসারে, রাবণবধে রামচন্দ্রকে সাহায্য করার জন্য রাত্রিকালে দেবীর বোধন করেছিলেন ব্রহ্মা। যদিও বাল্মীকির রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্রের দুর্গাপুজার কোনও বিবরণ নেই। নবম ও দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত দেবীভাগবতপুরাণ ও কালিকাপুরাণে এর বিবরণ রয়েছে।

শ্রীরামচন্দ্র রাবণকে পরাজিত করতে এবং সকলকে রক্ষা করতে অসময়ে দেবী দুর্গাকে জাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ঘুমের মধ্যে দেবী দুর্গাকে জাগালে যদি তিনি রেগে যান। তাই রামচন্দ্র বৃহ্মার শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মা নিদ্রিতা দেবীর ধ্যান করে এ বিষয়ে দেবীর মনোগত ইচ্ছা জানলেন। দেবী বলেছেন, তাঁর বোধন করতে হবে, তা হলেই তিনি জাগ্রতা হবেন, আর তখনই তিনি রাবণবধে রামকে সাহায্য করতে পারবেন। ব্রহ্মার পরামর্শে তখন দেবীর বোধন হল রামচন্দ্রের হাতে। যাকে আমরা ‘অকালবোধন’ বলেই জানি। অসময়ে দেবীদুর্গার পুজো হয় বলে একে অকালবোধন বলা হয়। যেহেতু অকাল বোধন শরৎকালে হয়েছিল তাই একে শারদীয়া বলা হয়।

আরও পড়ুন:Gold Price Today: লাগাতার বাড়ার পর সোনায় স্বস্তি! সপ্তাহের শুরুতেই দাম কমল হলুদ ধাতুর… 

এই অকালবোধনের কী নিয়ম?

ঘুমন্ত দেবীকে জাগানোর জন্য স্বয়ং ব্রহ্মা দেবীস্তুতি করেছিলেন। পুজোর সূচনাক্ষণে স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মা দেখেছিলেন সাগর থেকে কিছুটা দূরে গভীর জঙ্গলে একটি বিল্ববৃক্ষ মানে বেল গাছের নিচে একটি আট থেকে দশ বছরের বালিকা আপন মনে খেলছে। ব্রহ্মা ধ্যানস্থ হয়ে জানলেন, সেই বালিকাই স্বয়ং গৌরী, কন্যকা। ব্রহ্মা চোখ মেলতেই সেই বালিকা ওই বেল গাছে লীন হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মা স্থির করলেন, দেবী দুর্গার সেই বোধনের পূজার্চনা হবে ওই বেল গাছের নিচেই। তাই আজও দেবীর বোধনের আগে বেলপাতা বা বেলগাছকে পুজো করে তা প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। ​ব্রহ্মার আহ্বানে দেবী বেলগাছের এক পাতায়ত কুমারী কন্যার রূপে আবির্ভূতা হন৷ আজও বেলগাছের নিচেই দেবীর বোধন হয়। ষষ্ঠীতিথির সন্ধ্যায় প্রথমে দেবীর বোধন হয়, তারপর হয় অধিবাস ও সবশেষে আমন্ত্রণ করা হয়।

ষষ্ঠীর সকালেই বোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত গোটা পুজো পর্বে যেন কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তাই দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়। এরপর ঘট ও জলে পূর্ণ একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোণে স্থাপন করা হয়। এই স্থানেই দুর্গা ও চণ্ডীর পুজো করা হয়। তারপর হয় বোধন। বোধনের পর বেল শাখার দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। ঘটের চারপাশে তীরকাঠিতে সুতো জড়িয়ে আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ভাবেই শেষ হয় মহাষষ্ঠীর আচার। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এ দিনই স্বর্গ থেকে মর্ত‍্যে পদার্পণ করেন দেবী দুর্গা। সঙ্গে তাঁর চার সন্তান লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীও আসেন। মনে করা হয়, বোধনের পর প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *