চর্চিত পাইক্রফ্টের ইতিহাস কী? শত্রুদেশের মুখে কীভাবে ঝামা ঘষল আইসিসি? রইল ভারত-পাক ওয়েব সিরিজের সব এপিসোড


জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে, গত রবিবাসরীয় রাতে এশিয়া কাপে ভারত-পাক ম্যাচের (India vs Pakistan Asia Cup 2025) পর থেকেই করমর্দন কাজিয়া তুঙ্গে! প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু আপডেট আসছেই। সূর্যকুমার যাদবরা (Suryakumar Yadav) খেলার শেষে সলমান আঘার পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথাগত করমর্দন এড়িয়ে যান। পহেলগাঁও কাণ্ডের প্রতিবাদ ও ভারতীয় সেনার সম্মানে সূর্যকুমাররা করমর্দন এড়িয়ে যান চিরশত্রু দেশের সঙ্গে। পাকিস্তানের কাছে এই আচরণ ছিল অখেলোয়াড়সুলভ। এহেন উপেক্ষায় পাকিস্তানের গায়ে বিরাট ফোস্কা পড়ায় তারা লিখিত অভিযোগও করে আইসিসিকে। আর এখান থেকেই শুরু টানটান ওয়েব সিরিজ। একেবারে টাইমলাইন ধরে রইল প্রতি এপিসোড।

Add Zee News as a Preferred Source

পাইক্রফ্টকে সরাতে হবে!

পিসিবি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ‘দলের ম্যানেজার, নাভেদ চিমা ভারতীয় খেলোয়াড়দের করমর্দন না করার আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। টসের সময়ে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট আমাদের অধিনায়ক সলমান আলি আঘাকে তাঁর ভারতীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে করমর্দন করতে না বলেছিলেন। অখেলোয়াড়চিত এবং খেলার বিরোধী বলেই মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ আমরা আমাদের অধিনায়ককে ম্যাচের পর সাংবাদিক বৈঠকে পাঠাইনি।’ পিসিবি-র একটাই দাবি ছিল, পাইক্রফটকে যেন আর এশিয়া কাপে দায়িত্বে না রাখা হয়। 

আরও পড়ুন: ৬, ৬, ৬, ৬, ৬, ৬, ৬, ৬! শাহরুখদের হয়ে বিস্ফোরক ব্যাটিং গোয়েঙ্কার দলের ২১ কোটির মেগাস্টারের…

পাকিস্তানের ভুয়ো বয়কট!

ভারতের পর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের খেলা ছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে। খেলার আগে প্রাক ম্যাচ সংবাদ বৈঠক বাতিল করেছিলেন সলমনরা। তখনই মনে করা হয়েছিল যে, পাকিস্তান টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করতে পারেন। এমনকী পাকিস্তান-আমিরশাহি ম্যাচের আগেও বহু মিডিয়ায় খবর হয় যে, পাকিস্তান  কাপযুদ্ধের সুপার ফোরে যাওয়ার ডু-অর-ডাই ম্যাচে আমিরশাহীর বিরুদ্ধে খেলবে না। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা পাইক্রফ্টকে সরানোর পিসিবি-র দাবি নস্যাৎ করে দেয় প্রথমবার। একই মর্মে দ্বিতীয় দফায় অনুরোধ করেও একই পরিণতি হয়েছিল। দু’বার প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় পাকিস্তান ভেবেই নিয়েছিল আর অপমানিত হওয়ার কোনও মানে নেই। তারা তল্পিতল্পা গটিয়ে দুবাই থেকে পাকিস্তান ফিরে আসবে। চরম অনিশ্চয়তার পর অবশেষে পাকিস্তান বনাম আমিরশাহি ম্যাচ হয়েছিল। ভারতীয় সময় রাত ৮টার বদলে তা এক ঘণ্টা পরে রাত ৯টায় শুরু হয়। ঘটনাচক্রে পাকিস্তান এই ম্যাচ জিতে সুপার ফোরে আবার ভারতের মুখোমুখি হবে রবিবার। 

পাইক্রফ্টের ক্ষমা

পিসিবি ম্যাচের আগে দাবি করে যে, পাইক্রফ্ট নাকি পাক ম্যানেজার এবং অধিনায়কের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। আর ক্ষমা চাওয়ার পরেই বরফ গলে এবং সলমানরা তার আমিরশাহি ম্যাচ খেলতে রাজি হন। এমনকী পিসিবি বিবৃতি দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা ফলাও করে জানিয়েও দেয়। পিসিবি আবার নেটপাড়ায় একটি ভিডিয়োও পোস্ট করে ফেলে এই মর্মে। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে যে, পাক অধিনায়ক সলমান, ম্যানেজার নাভেদ চিমা, কোচ মাইক হেসন এবং আরও কয়েকজন কর্তার সঙ্গে দুবাই স্টেডিয়াম সংলগ্নই কোনও এক রুমে কথা বলছেন পাইক্রফ্ট। এই কথোপকথনের সময়েই নাকি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চেয়ে নেন এবং পাকিস্তান খেলতে রাজি হয়ে যায়। তবে পাকিস্তানের পোস্ট করা ভিডিয়ো ছিল নির্বাক। ফলে বোঝার কোনও উপায়ই নেই যে, আদৌ পাইক্রফ্ট ক্ষমা চেয়েছেন কিনা! একাধিক সূত্র বলছে যে, পাইক্রফ্টের ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। কারণ তাঁর কোনও দোষই নেই এখানে।

আরও পড়ুন: আর্কিটেকচার থেকে সিনেমায় জুনিয়র আর্টিস্ট! ভারতীয় ক্রিকেটের স্টার আজ বিশ্বের ১ নম্বর

পিসিবির বিবৃতি

পিসিবি প্রধান ও এসিসি চেয়ারম্যান মহসিন নকভি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে একটা সংকট চলছে। ম্যাচ রেফারির ভূমিকা নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল। কিছুক্ষণ আগে, ম্যাচ রেফারি দলের কোচ, অধিনায়ক এবং ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ঘটনাটি (কোনও হ্যান্ডশেক নয়) ঘটা উচিত ছিল না। আমরা আগে আইসিসিকে ম্যাচ চলাকালীন কোড লঙ্ঘনের তদন্তের অনুরোধ করেছিলাম। আমরা বিশ্বাস করি যে রাজনীতি এবং খেলাধুলো কখনই একসঙ্গে চলতে পারে না। খেলাকে খেলা হিসেবেই থাকতে দিন। ক্রিকেটকে এই সমস্ত থেকে আলাদা রাখা উচিত। আমি শেঠি সাব এবং রমিজ রাজা সাবকে অনুরোধ করেছি। যদি আমাদের বয়কট করতে হয়, যা একটি খুব বড় সিদ্ধান্ত ছিল, তাহলে প্রধানমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা এবং আরও অনেক লোক জড়িয়ে ছিলেন এবং আমরা তাঁদের পূর্ণ সমর্থনও পেয়েছিলান। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিলাম।

পিসিবি-র চিঠিতে আইসিসি-র উত্তর

আরও পড়ুন: ‘তোমার দম থাকলে ওই ২৬ বিধবাকে…’! পহেলগাঁও কাণ্ড টেনে সূর্যকে বেনজির আক্রমণ AAP নেতার…

‘পিসিবি-র প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইসিসি তদন্ত করেছে। আমরা প্রতিবেদনটিকে মূল মূল্যের ভিত্তিতে বিবেচনা করেছি এবং লক্ষ্য করেছি যে এর সঙ্গে কোনও সমর্থনকারী নথি বা প্রমাণ সরবরাহ করা হয়নি। পিসিবি তার দলের সদস্যদের বক্তব্য জমা দেওয়ার জন্য প্রতিটি সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু তা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল) ভেন্যু ম্যানেজারের স্পষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করেই ম্যাচ রেফারি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। একজন ম্যাচ রেফারি কীভাবে এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করবেন তাঁর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। কারণ টসের আগে তার আর কিছু করার সময় ছিল না। ম্যাচ রেফারির কোনও দোষই ছিল না। খেলার ক্ষেত্রের বাইরে সম্মত হওয়া দল বা টুর্নামেন্ট-নির্দিষ্ট প্রোটোকল নিয়ন্ত্রণ করা ম্যাচ রেফারির কাজ নয়। এটি টুর্নামেন্ট আয়োজক এবং প্রাসঙ্গিক টিম ম্যানেজারদের ব্যাপার। পিসিবি-র আসল উদ্বেগ বা অভিযোগ আসলে করমর্দন না হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই পিসিবির উচিত ছিল সেই অভিযোগগুলি টুর্নামেন্ট আয়োজকদের এবং যারা আসল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন (যাঁরা ম্যাচ রেফারি ছিলেন না) তাঁদের কাছে পাঠানো। এতে আইসিসির কোনও ভূমিকা নেই।”

পাকিস্তানের চক্ষুশূল, ‘ভারতের ফেভারিট’!

পিসিবির প্রাক্তন অধিনায়ক ও চেয়ারম্যান রমিজ রাজা। তিনি লাহোরে সাংবাদিক বৈঠকের শেষে এক সর্বভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি পাইক্রফ্টকে যা নয় তাই বলেই তুলোধোনা করেছেন। রামিজ বলেন, ‘আমি সবসময়ে দেখেছি যে, অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট টিম ইন্ডিয়ার জন্য ফেভারিট। আমার মনে হয় ভারতীয় দলের কথা বলতে গেলে ও একজন স্থায়ী ফিক্সার। ও ৯০টি ভারতীয় খেলায় আম্পায়ারিং করেছে। এটা স্পষ্ট, এটা একপেশে এবং এটা এমনভাবে হওয়া উচিত নয়। এটা একটা নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু যাই হোক, আমি আশা করি আরও ভালো বুদ্ধিমত্তার জায়গায় থাকবে। আমার সবচেয়ে বড় আপত্তি ছিল ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনায় ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের কথায়। ওর ওই সম্পাদকীয়টিই ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি ক্ষমা চাওয়া হয়, তাহলে ভালোই। তবে ক্রিকেট যদি রাজনৈতিক মাঠে পরিণত হয়, তাহলে কিছুই সেখান থেকে কিছুই অর্জন করা যাবে না।

আরও পড়ুন: ৩০৩৬৭০০০০০০ টাকার বিখ্যাত এই ভারতীয় কোম্পানিই এবার টিম ইন্ডিয়ার নতুন স্পনসর

কে এই পাইক্রফ্ট?
 
অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট জিম্বাবোয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) এলিট প্যানেল অফ ম্যাচ রেফারির এক অত্যন্ত অভিজ্ঞ সদস্য। ক্রিকেটীয় কেরিয়ারও যেমন খেলোয়াড় হিসেবে দীর্ঘ, তেমনই  প্রশাসক ও আধিকারিক হিসাবেও লম্বা ইনিংস। ২০০৯ সালের মার্চে আইসিসির এলিট প্যানেল অফ ম্যাচ রেফারির সদস্য হন পাইক্রফ্ট। ১০৩টি টেস্ট, ২৮৪টি ওডিআই এবং ১৮৫টি টি-টোয়েন্টিআই (পাকিস্তান বনাম সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ম্যাচ নিয়ে) মিলিয়ে ৫৫০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন এবং মেয়েদের ২১টি টি-টোয়েন্টিআই খেলিয়েছেন। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে কেপটাউন টেস্টের (‘স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারি’) সময়ে ম্যাচ রেফারি ছিলেন। পাইক্রফ্ট পাকিস্তানের রীতিমতো চক্ষুশূল। সেই দেশের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার বড় অ্যাকশন নিয়েছেন তিনি। সঈদ আজমল এবং মহম্মদ হাফিজের বোলিং অ্যাকশনকে এই পাইক্রফটই ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছিলেন। ফলে পাকিস্তান একদম সহ্য় করতে পারে না এই জিম্বাবোয়ের বাসিন্দাকে।

 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *