জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। পাক্কা ৬ বছর পর ফের সিএবি (CAB President) প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যাবর্তন করলেন। দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের স্থলাভিষিক্ত হয়ে বঙ্গজ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার হটসিটে মহারাজ। গত সোমবার বাইপাসের ধারে এক অভিজাত হোটেলে হয়েছে সিএবির ৯৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা। প্রত্যাশা মতোই সৌরভ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন নীতীশরঞ্জন দত্ত। সচিব পদে বাবলু কোলে। যুগ্মসচিব হিসেবে এসেছেন মদন ঘোষ। কোষাধ্যক্ষের গুরুদায়িত্বে সৌরভের বাল্যবন্ধু সঞ্জয় দাস।
ইডেন টেস্ট
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সিএবি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন সৌরভ। কামব্যক কিং দায়িত্ব নিয়েই আগামীর নীলনকশা তৈরি করে ফেলেছেন। অগ্রাধিকারের তালিকাও রয়েছে সৌরভের। ২০১৯ সালে শেষবার টেস্ট হয়েছিল ক্রিকেটের নন্দন কানন ইডেন গার্ডেন্সে। সৌরভ তখন ছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে। সেই বছর ভারত গোলাপি বলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক দিন-রাতের টেস্ট খেলেছিল। ১৪ নভেম্বর টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা ইডেনে খেলবে ভারতের সঙ্গে। হেমন্তের পরশে টানা পাঁচদিন ক্রিকেটের শুদ্ধতম সংস্করণের আসর বসছে তিলোত্তমায়। সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয়বার ফিরেই বিরাট ম্যাচ সৌরভের কোর্টে। এজিএমের শেষে সৌরভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। একটা ভালো টেস্ট ম্যাচ হবে। এখানে সবকিছুই আছে-ভালো পিচ, ভালো দর্শক,পরিকাঠামো আছে। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা উভয়ই ভালো দল, আমি নিশ্চিত এটি ভালো টেস্ট হবে। আমি এখনও এই টেস্ট নিয়ে ভাবিনি। হাতে দু’মাস সময় আছে এখনও।’
আরও পড়ুন: বিরাটের প্রথম অধিনায়ক, আইপিএল খেলেছেন সৌরভ-ধোনির নেতৃত্বে, এবার বোর্ড প্রেসিডেন্ট!
ইডেনের সম্প্রসারণ
আগামী বছর টি-২০ বিশ্বকাপ রয়েছে ভারতে। ইডেনে সম্ভবত টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো হাই প্রোফাইল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে পারে। সৌরভের ভাবনায় রয়েছে ইডেনকে ফের এক লাখি দর্শকের করা। ইডেন অতীতে এক লক্ষেরও বেশি দর্শকাসন ছিল। কিন্তু দর্শকদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনা হয়েছে। ২০১১ বিশ্বকাপের আগেই ৬৮০০০ করা হয়েছিল। তবে বিশ্বকাপের আগেই ইডেনকে এক লক্ষ দর্শকের ঘর করা যাবে না। এই বিষয়ে সৌরভ বলছেন, ‘যাই হোক না কেন, তা আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরেই হবে। এতে সময় লাগবে। লিজ রিনিউ হয়ে গিয়েছে।’ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর যদি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে আমদাবাদের মোতেরায় অবস্থিত নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের পরে ইডেন গার্ডেন্সই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে ১ লক্ষ ৩২ হাজার দর্শক আসন রয়েছে।
বিসিসিআই সভাপতি
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সংবিধান অনুসারে, ৭০ বছর হয়ে যাওয়ার পর আর বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট পদে আর থাকা যায় না। সেই নিয়ম মেনেই রজার বিনি ছেড়ে দিয়েছেন সিংহাসন। বোর্ডের সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা এখন অস্থায়ী সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যেই নেতৃত্বে আসবে বদল। নতুন কেউ আসবেন পাকাপাকি ভাবে। বিনির জুতোয় পা গলিয়ে হবেন বোর্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট। চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে মুম্বইয়ে হতে চলেছে বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা ওরফে এজিএম। তারপরেই জানা যাবে যে, কে বসছেন বোর্ডের হটসিটে। ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ সচিন তেন্ডুলকরকে বিসিসিআইয়ের মসনদে দেখা যাবে বলেই শোনা যাচ্ছিল। তবে তাঁর শিবির ইতিমধ্যেই এই জল্পনা অস্বীকার করেছে। সচিনের নাম মুছে যাওয়ার পরেই, বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার দৌড়ে কিংবদন্তি হরভজন সিংয়ের নাম শোনা যাচ্ছিল প্রবল ভাবে। কিন্তু এখন সচিন-হরভজন দু’জনের নামই আর দৌড়ে নেই। আপাতত একটি নামই শোনা যাচ্ছে। তিন প্রাক্তন ক্রিকেটার ও বর্তমান প্রশাসক মিঠুন মানহাস। সৌরভ এখনই শুভেচ্ছা জানিয়ে দিলেন মিঠুনকে। সৌরভ বলেন, ‘আমি বোর্ডের সঙ্গে কথা বলব। তারাও নতুন সদস্য। আমি নতুন বিসিসিআই সভাপতিকে শুভকামনা জানাই। এটা ক্রিকেট খেলার চেয়ে আলাদা হবে। আমি নিশ্চিত যে সে ভালো করবে। শুধু মিঠুনই নন, রঘুরাম ভাট সহ অনেক নতুন কর্মকর্তা রয়েছেন।’
ডুমুরজলায় অ্যাকাডেমি
সৌরভ বাংলার প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটের পরিকাঠামো শক্তিশালী করার উপর জোর দিয়েছেন এবং ডুমুরজলায় এক নতুন অত্যাধুনিক অ্যাকাডেমি চালু করার উপর জোর দিয়েছেন যার জন্য সিএবি ৯ একর জমি কিনেছে। যা ইতিমধ্যেই অনুমোদিত হয়েছে। সৌরভ বলেন, ‘বাংলা দু’বার রঞ্জি ফাইনাল খেলেছে। ক্রিকেটের বিকাশ ঘটাতে হবে, তবে এটি কোনও রকেট সায়েন্স নয়। ডুমুরজলার পাশে ৯ একর জমিতে কল্যাণীর মতো অ্যাকাডেমি হবে। তবে ফ্লাডলাইট এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এটি শহরের খুব কাছেই। পরিকল্পনাটি অনুমোদিত হয়েছে। এটি করতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে। কারণ অ্যাকাডেমি হবে।’ ভারতের অলিম্পিক্স আয়োজনের দরপত্র দিয়েছে। সিএবি-র ভিশন ২০২০ প্রোগ্রাম ২০৩৬ পর্যন্ত সম্প্রসারণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে এক আধিকারিক বলছেন, ‘আমরা এমন ক্রিকেটার তৈরি করতে চাই, যারা অলিম্পিক্সে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। তাই ২০৩৬ পরবর্তী লক্ষ্য হওয়া উচিত।’ সিএবি রাজ্য ইউনিট এবং জেলা সমিতিগুলি উন্নয়ন তহবিল ৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ কোটি টাকা করেছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
