জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বুধবার গুয়াহাটির সরাইঘাট সেতুতে ভয়ংকর এক দৃশ্য! এক তরুণ আচমকা নিজের পোশাক ছিঁড়ে চিৎকার করে ওঠে: “জুবিন দা (Zubeen Garg) যখন নেই, আমরা কী করব? জয় জুবিন দা!” এই বলেই ব্রহ্মপুত্র নদে ঝাঁপ দেয়। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা স্তম্ভিত। পুলিস স্টেট ডিসাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এসডিআরএফ) সহায়তায় সুয়ালকুচির পাহাড় পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অসম পুলিস (Assam police) নিশ্চিত করেছে যে তারা ওই ভক্তকে উদ্ধার করেছে এবং বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন- Zubeen Garg’s funeral: ‘অরুণই আমার মুখাগ্নি করবে…’, জুবিনের এই ‘উত্তরাধিকারী’ আসলে কে?
বৃহস্পতিবার, জুবিনের মৃত্যুর তদন্তে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) মিউজিশিয়ান শেখর জ্যোতি গোস্বামীকে আটক করেছে। পুলিস জানায় যে, যে ইয়টে জুবিন গিয়েছিলেন সেখানে ছিলেন শেখর জ্যোতিও, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে বা কোন কোন ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে, তা এখনও শোনা যায়নি। অসম সরকার জুবিন গর্গের মৃত্যুর পরিস্থিতি তদন্তের জন্য বিশেষ ডিজিপি এম পি গুপ্তার নেতৃত্বে একটি ১০ সদস্যের এসআইটি গঠন করেছে।
সূত্রের দাবি যে তদন্ত একাধিক সূত্র ধরে এগোচ্ছে, কী কারণে জুবিনের আকস্মিক মৃত্যু হল, তদন্তকারীরা মৃত্যুর আাগের সেই ঘটনাগুলির ক্রম পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছেন। এদিকে, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা শ্যামকানু মহন্তও SIT-এর নজরে রয়েছেন। তিনি বর্তমানে বিমানবন্দরে রয়েছেন এবং সিআইডি-র সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তার গ্রেফতার আসন্ন।
বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মার গুয়াহাটির দাতালপাড়ার বাসভবনে অভিযান চালিয়েছে। জানা গেছে, সিআইডি কর্মকর্তারা সকালে তিনতলা বাড়িটির সামনে পৌঁছান এবং প্রায় দুই ঘণ্টা বাইরে অপেক্ষা করার পর তল্লাশি শুরু করেন। দলটি যখন শর্মার ফ্ল্যাটের কাছে পৌঁছায়, তখন তারা সেটি তালাবন্ধ দেখতে পায়। এরপর তালা ভেঙে দলটি তল্লাশি চালায়। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এই তল্লাশি চালানো হয়, যেখানে সিদ্ধার্থ শর্মা এবং তাঁর পরিবার ২০১৯ সাল থেকে বসবাস করে আসছিলেন। তবে এদিন সেখানে কেউই উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়াও, সিঙ্গাপুর অসম অ্যাসোসিয়েশনের বেশ কয়েকজন সদস্যকে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার দরুন আটক করা হতে পারে। জানা যাচ্ছে একাধিক ব্যক্তিকে হেফাজতে নেওয়া হতে পারে। এর আগে, SIT কর্মকর্তারা তাদের তদন্তের অংশ হিসেবে মহন্তের বাসভবনে গিয়েছিলেন। তবে, অভিযানের ফলাফল সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, মেঘালয়ে জন্মান জুবিন গর্গ। ৯০-এর দশকের প্রথম দিকে অসমের সংগীত জগতে খ্যাতি অর্জন করেন এবং ‘গ্যাংস্টার’ (২০০৬) ছবিতে ‘ইয়া আলি’ গেয়ে সারা দেশে জনপ্রিয়তা পান জুবিন। হিন্দি ছাড়াও তিনি তাঁর মাতৃভাষা অহমিয়া, বাংলা, নেপালি সহ ৪০ টি ভাষায় গান রেকর্ড করেছেন। তাঁর রেকর্ড করা গানের সংখ্যা ৩৮ হাজার। তিনি ছিলেন অসমের কালচারাল আইকন। সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন তিনি। শুধু গান বা সিনেমা নয়, সমাজের নানা স্তরের মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন জুবিন। ১৫টি শিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন অসমের এই লেজেন্ড। অসমের মানুষের কন্ঠ ছিলেন তিনি। জুবিন বলতেন, তাঁর কোনও ধর্ম নেই, তাঁর কোনও জাত নেই, তাঁর একটাই পরিচয় তিনি মানুষ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁর আচমকা মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা অসম। সিঙ্গাপুরে সাঁতার কাটার সময়ে ডুবে মৃত্যু হয় তারকার। তবে এই মৃত্যুর পিছনে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকেই।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)