জ্বলছে ৬০ মাইলের জলাভূমি! পাকিস্তানের ইতিহাস-ভূগোল বদলের হুঙ্কার রাজনাথের, কী চলছে কচ্ছের রণে?


জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গুজরাতের কচ্ছের রণের ( Rann of Kutch) জলাভূমিতে অবস্থিত, স্যর ক্রিক অঞ্চলের (Sir Creek) শান্ত জোয়ারের মোহনা আবারও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় (India-Pakistan Tension) অশান্ত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) ইসলামাবাদকে কড়া ভাষার হুঁশিয়ারি দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই অঞ্চলে শয়তান দেশ ক্রমাগত আগ্রাসন দেখালে ভারত বুঝিয়ে দেবে কত ধানে কত চাল। ভারত একেবারে ইতিহাস-ভূগোল ভুলিয়ে দেবে। গত বৃহস্পতিবার দশেরা উপলক্ষে ভুজের কাছে লাক্কি নালা মিলিটারি গ্যারিসনে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজনাথ। সেনাঘাঁটিতে রাজনাথ জওয়ানদের সঙ্গে বিশেষ দিন উদযাপনের পাশাপাশি ‘শস্ত্র পুজো’ও করেন। সেখানে দাঁড়িয়েই সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে চলমান সীমান্ত বিরোধের কড়া দাওয়াই দিয়েছেন রাজনাথ।

Add Zee News as a Preferred Source

ইতিহাস-ভূগোল বদলে যাবে

রাজনাথ বলেন, ‘মনে রাখা প্রয়োজন যে, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতীয় সেনা লাহোরে পৌঁছেছিল। আর ২০২৫ সালে পাকিস্তানের মনে রাখা উচিত যে, করাচির রাস্তাটি স্যার ক্রিকের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।’ রাজনাথ অভিযোগ করেন যে, পাকিস্তান স্যার ক্রিক ইস্যুকে জিইয়ে রাখার জন্য কুৎসা রটাচ্ছে। রাজনাথের সংযোজন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পরেও স্যর ক্রিকের উপর সীমান্ত সমস্যা উত্থাপিত হচ্ছে। ভারত এই সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ কয়েকবার কূটনৈতিক ভাবে চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের কু-উদ্দেশ্য রয়েছে। পাকিস্তান যেভাবে স্যার ক্রিক এলাকায় সামরিক অবকাঠামো স্থাপন করেছে, তাতে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। যদি পাকিস্তান স্যর ক্রিক এলাকায় কোনও দুষ্কর্মের চেষ্টা করে, তাহলে আমরা এতটাই কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাব যে, ইতিহাস এবং ভূগোল উভয়ই বদলে যাবে। লেহ থেকে স্যার ক্রিক অঞ্চল পর্যন্ত ভারতের প্রতিরক্ষা সীমানা ভেদ করার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ভারতীয় বাহিনীর দ্রুত এবং কার্যকর পাল্টা পদক্ষেপ কেবল পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাই প্রকাশ করেনি, বরং বিশ্বকে স্পষ্ট বার্তাও দিয়েছে যে, ভারত তার পছন্দের সময়, স্থান এবং পদ্ধতিতে বড় ক্ষতি করতে পারে।

আরও পড়ুন: ‘এবার মানচিত্র থেকেই মুছে দেব’…! পাকিস্তানকে চরম হুঁশিয়ারি সেনাপ্রধানের, বেজে গেল যুদ্ধের দামামা!

স্যার ক্রিক কী?

স্যার ক্রিক, মূলত বান গঙ্গা,ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে সিন্ধু নদী বদ্বীপের জনশূন্য জলাভূমিতে  ৯৬ কিলোমিটার (৬০ মাইল) দীর্ঘ জোয়ারভাটাযুক্ত মোহনা বা খাঁড়ি। খাঁড়িটি আরব সাগরে প্রবাহিত হয় এবং ভারতের গুজরাত রাজ্যকে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ থেকে পৃথক করে। আপাতদৃষ্টিতে জনশূন্য ভূদৃশ্য সত্ত্বেও, মোহনাটি কয়েক দশক ধরে বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার মূলে রয়েছে ঔপনিবেশিক যুগের সীমানা ব্যবস্থা। এটি ব্রিটিশ রাজের প্রতিনিধি স্যার ক্রিক এর নামে নামকরণ করা হয়। এই জলাভূমিটি রাসেলের ভাইপার এবং কাঁকড়াবিছেদের আবাসস্থল, যা সীমান্ত সৈন্যদের জীবনকে কঠিন করে তোলে। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্ষা মৌসুমে, খাঁড়িটি তার তীরে প্লাবিত হয় এবং তার চারপাশে নীচু লবণাক্ত সমতল ভূমিকে আবদ্ধ করে। শীত মৌসুমে, এই অঞ্চলে ফ্ল্যামিংগো এবং অন্যান্য পরিযায়ী পাখির আবাস হয়ে ওঠে। 

স্যার ক্রিকের ইতিহাস

স্যর ক্রিকে সংঘাতের সূত্রপাত সেই ১৯০৮ সালে। যখন কচ্ছ ও সিন্ধুর শাসকরা খালের তীরে কাঠের স্তূপ নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছিল। বিষয়টি বোম্বের ব্রিটিশ প্রশাসন গ্রহণ করে, যা ১৯১৪ সালে এক প্রস্তাব জারি করে। তবে ছয়ের দশকে আবার মতবিরোধ আবার দেখা দেয়। ১৯৬৫ সালে ধারাবাহিক সশস্ত্র সংঘর্ষের পর, পাকিস্তান কচ্ছের রানের ২৪তম সমান্তরাল বরাবর বিস্তৃত অঞ্চলের উপর দাবি করে, যেখানে ভারত দাবি করে যে সীমান্তটি আরও উত্তরে অবস্থিত। বিষয়টি ভারত-পাকিস্তান পশ্চিম সীমান্ত মামলা ট্রাইব্যুনালের কাছে পাঠানো হয়, যা ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ সালে তার রায় প্রদান করে। ট্রাইব্যুনাল ভারতের প্রায় ৯০ শতাংশ দাবি বহাল রাখে, কেবলমাত্র ছোট ছোট এলাকা পাকিস্তানকে ছেড়ে দেয়। যদিও কচ্ছের রণের বেশিরভাগ অংশ নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। স্যর ক্রিককে রায় থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে এটি অমীমাংসিত ছিল।

স্যার ক্রিক; ভারত-পাক

১৯১৪ সালের প্রস্তাবের বিভিন্ন ব্যাখ্যা থেকে স্যর ক্রিকের অমীমাংসিত অবস্থা উদ্ভূত হয়েছে। পাকিস্তান জোর দিয়ে বলেছে যে, সীমানাটি খাঁড়ির পূর্ব তীরে স্থির করা উচিত, যা সমগ্র চ্যানেলের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ দেয়। অন্যদিকে, ভারত যুক্তি দেয় যে, একই প্রস্তাবে থালওয়েগ নীতি প্রয়োগ করা হয়েছিল – যা নাব্য জলপথের মধ্য-প্রবাহ বরাবর সীমানা স্থাপন করে। ভারত ১৯২৫ সালের মানচিত্র এবং মধ্য-প্রবাহ স্তম্ভের উপস্থিতির সাথে তার দাবি সমর্থন করে। পাকিস্তান পাল্টা বলে যে, থালওয়েগ নীতি কেবল নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, স্যার ক্রিকের মতো জোয়ার-ভাটার মোহনার ক্ষেত্রে নয়। আরেকটি জটিল কারণ হল খালের পরিবর্তনশীল গতিপথ, কারণ জোয়ার-ভাটার প্রবাহ সময়ের সাথে সাথে এর নাব্য চ্যানেলগুলিকে পরিবর্তন করে। এটি সরাসরি সামুদ্রিক সীমানা এবং আরব সাগরে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনস (ইইজেড) এর সীমানা নির্ধারণকে প্রভাবিত করে।

স্যর ক্রিক কেন গুরুত্বপূর্ণ

যদিও স্যর ক্রিকের প্রত্যক্ষ সামরিক গুরুত্ব সীমিত, তবুও এটি বিশাল অর্থনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। স্যর ক্রিকের চারপাশের জল এবং সমুদ্রতল তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ বলে মনে করা হয়। খালটি যে নিয়ন্ত্রণ করে সে ইইজেড সীমানা নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে, যা সমুদ্রে ২০০ নটিক্যাল মাইল বিস্তৃত এবং একটি দেশকে সামুদ্রিক ও জ্বালানি সম্পদ শোষণের সুযোগ করে দেয়। হাইড্রোকার্বনের বাইরে খালটি মৎস্য ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। গুজরাত এবং সিন্ধুর হাজার হাজার জেলে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য এই জলের উপর নির্ভর করে। তবে,স্পষ্টভাবে চিহ্নিত সামুদ্রিক সীমানার অনুপস্থিতি প্রায়শই তাদের বিতর্কিত অঞ্চলে নিয়ে যায়। তীব্র জোয়ারের স্রোত এবং বাতাস, ছোট নৌকাগুলির জন্য অদৃশ্য সীমানা নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে। ফলস্বরূপ, উভয় পক্ষের জেলেদের নিয়মিত ভাবে আটক করা হয়। প্রায়শই আনুষ্ঠানিক বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়ার আগে বছরের পর বছর জেলে কাটাতে হয়। আন্তর্জাতিক আইনে ন্যূনতম জরিমানা এবং ক্রু এবং জাহাজ উভয়ের মুক্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে, নৌকাগুলি সাধারণত বাজেয়াপ্ত করা হয়, যার ফলে জেলেরা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: লাদাখ অশান্তিতে গ্রেফতার সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে পাকিস্তান যোগ! বিদেশের টাকা! চাঞ্চল্যকর দাবি পুলিসের

 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *