শুভপম সাহা: ‘৯০ মিনিট সব ভুলে যান’! ভয়ংকর ক্ষিপ্ত সমর্থকদের জন্য ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে, আইএফএ শিল্ড জিততে চেয়েছিলেন হোসে মোলিনা| কথা রাখলেন সবুজ-মেরুনের দ্বিমুকুট জয়ী চাণক্য| শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ১২৫তম আইএফএ শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগান টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ২১তম শিল্ড তুলল ক্লাবে| ২২ বছর আগে ২০০৩ সালে এই ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর ম্যাচ খেলতে ইরানে না-যাওয়ার বাগান সমর্থকরা গোটা শিল্ড জুড়েই তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন| আজ তাঁদেরকেই প্ৰকৃত অর্থে বড় ম্যাচ জিতে খেতাব উপহার দিলেন স্ম্যানিশ কোচ|
প্রথমার্ধ
এদিন প্ৰথমার্ধের তিরিশ মিনিটে ইস্ট-মোহন, রীতিমতো আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে, ইস্টবেঙ্গল যেভাবে একের পর এক সুযোগ তৈরি করেছিল, তাতে গোল না হওয়াটাই অবাক করছিল! দেখতে গেলে ১৯ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের একেবারে সুবর্ণ সুযোগ ছিল ডেডলক ভাঙার| শুভাশিস বসু ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে নাওরেম মহেশ শট নিয়েছিল, তবে ভালো সেভ করেন বিশাল কাইথ|
পেনাল্টি হাতছাড়া!
৩২ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে যায় মোহনবাগান| আনোয়ার আলি বক্সের মধ্যে জেমি ম্যাকলারেনকে ফাউল করে বসেন! জেসন কামিংস শট নিয়েছিলেন, তবে পরীক্ষায় বসতে হয়নি লাল-হলুদ গোলরক্ষক প্রভসুখন গিলকে| কামিন্স তে-কাঠির ধারে-কাছেই মারলেন না, সোজা বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিলেন|
খেলা ঘুরল
মোহনবাগান এগিয়ে যাওয়ার দুরন্ত সুযোগ নষ্ট করলেও ইস্টবেঙ্গল কিন্তু সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফেলল দু’মিনিটের মধ্যেই| বাঁ-দিক থেকে মহম্মদ রশিদের পাস থেকে মহেশ ফাইনাল থার্ডে লো ক্রস বাড়ান হামিদ আহদাদকে| হামিদ তে-কাঠিতে বল জড়াতে কোনও ভুলই করেননি| প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আপুইয়ার গোলে মোহনবাগান বিরতির আগেই স্কোরলাইন ১-১ করে ফেলে| সাহালের ভাসানো বল রিসিভ করেছিলেন লিস্টন কোলাসো। তবে সামনে থাকা আপুইয়ার শট বারে লেগে মাটিতে ড্রপ খেয়ে বেরিয়ে এসেছিল, দেখে মনে হয়েছিল যেন গোললাইন পেরোয়নি! তবে লাইন্সম্যান জানিয়ে দেন যে, মোহনবাগান ন্যায্য গোলেরই দাবিদার|
আরও পড়ুন-রক্ত ফুটছে রশিদের, পাক হামলায় নিহত দশে ৩ ক্রিকেটার! আফগান নেতার এবার নির্মম প্রতিশোধ
আরও পড়ুন-‘মিথ্যা বলছি না’…! নেতৃত্ব হারানোর ভয়ে কাঁপছেন সূর্যকুমার, বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি জাতীয় দলের নেতার
দ্বিতীয়ার্ধ
বিরতির পরেও দুই দল আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার পথেই হাঁটে| ৫৯ মিনিটের মধ্যে দুই দল দুই পরিবর্তন করে ফেলে| ইস্টবেঙ্গল এডমুন্ডের বদলে মাঠে আনে বিষ্ণুকে এবং কামিংসের বদলে রবসনকে নামায় মোহনবাগান| গোলের জন্য মরিয়া ইস্টবেঙ্গল ৬৫ মিনিটে একেবারে
তিন পরিবর্তন করে ফেলে| হিরোশি ইবুসুকি (হামিদ), মিগুয়েল (ক্রেসপো) এবং জয় গুপ্তাকে (লালচুননুনগা) নামান অস্কার ব্রুজো| ৬৭ মিনিটেই ইস্টবেঙ্গল ব্যবধান বাড়াতে পারত| লাল-হলুদ অভিষেকে প্রথম টাচেই গোল করতে পারতেন হিরোশি। মিগুয়েলের ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে গোলে মেরেছিলেন জাপানি তারকা| তবে বিশাল বাঁচিয়ে কাইথ দেন| এর ঠিক পরেই আবার চাপে পড়ে যায় মোহনবাগান| জয় গুপ্তের সঙ্গে বল কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে কপাল ফেটে যায় সাহালের| মাঠেই তাঁর চিকিৎসা চলে| ব্যান্ডেজ বেঁধেই খেলেন তিনি| এরপর মিনিট দু-তিনের মধ্যে যথাক্রমে বিপিন-মিগুয়েল এবং রশিদের গোলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়| নির্ধারিত সময়ের পর চার মিনিট যোগ করেছিলেন রেফারি| তবে স্কোরলাইনে কোনও বদল আসেনি| শেষ মুহূর্তে ফ্রিকিক মোহনবাগান ফ্রি-কিক পেয়েছিল| রবসনের ক্রসে থেকে মেহতাবের মাথা ছোঁয়ানো শট যদি গিল লাফিয়ে না বাঁচতে পারতেন, তাহলে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে যেত ইস্টবেঙ্গল| নির্ধারিত সময় ডার্বি অমীমাংসিত থাকায় এরপর খেলা গড়ায় এক্সট্রা টাইমে|
এক্সট্রা টাইম
এক্সট্রা টাইমে খেলা অমীমাংসিত থাকায় এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে
টাইব্রেকার
পেনাল্টি শুটআউটে মোহনবাগানের হয়ে গোল করলেন রবসন-মনবীর-লিস্টন-দিমি-মেহতাব| ইস্টবেঙ্গলের হয়ে মিগুয়েল-সিবিল-মহেশ-হিরোশি গোল পেলেও, বিশাল কাইথের হাতে বল মেরে ইস্টবেঙ্গলের স্বপ্নভঙ্গ করেন জয়| এদিন শিল্ড জিতে মোলিনা ডুরান্ড ডার্বি হারেরও বদলা নিলেন…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)